'ভাদ্র মাসের সন্ধ্যা। আকাশে মেঘ আছে। লালচে রঙের মেঘ। যে মেঘে বৃষ্টি হয় না, তবে দেখায় অপূর্ব। এই গাঢ় লাল, এই হালকা হলুদ, আবার চোখের নিমিষে লালের সঙ্গে খয়েরি মিশে সম্পূর্ণ অন্য রঙ। রঙের খেলা যিনি খেলেছেন মনে হয় তিনি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।' —এভাবেই সূচনা ঘটেছে হুমায়ূন আহমেদের চার দশকের বর্ণময় লেখক জীবনের শেষ উপন্যাস 'দেয়াল'-এর। ১৯৭১ সালের মাঝামাঝিতে 'দেয়াল' রচনা শুরু করেছিলেন তিনি। সে সময় উপন্যাসের পাঁচটি পর্ব ধারাবাহিকভাবে 'অন্যদিন'-এ প্রকাশিত হয়। এরপর বেশ কিছুদিন বিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রে তার ক্যান্সার চিকিত্সা চলাকালে নতুন করে 'দেয়াল' রচনায় মনোনিবেশ করেন। "সূচনা অনুচ্ছেদে আকাশের রঙ বদলের খেলায় যে সিদ্ধান্তহীনতার কথা বলা হচ্ছে তা বিশেষ ইঙ্গিতবহ। যে সময়কে উপজীব্য করা হয়েছে দেয়ালে, তা একটি সদ্য স্বাধীন জাতির ভাগ্যাকাশের চরম অনিশ্চয়তার কাল। উপন্যাসের কিছু চরিত্র বাস্তব থেকে নেয়া, নাম-ধাম সবই বাস্তব, ঘটনা পরম্পরাও বাস্তবেরই অংশ। লেখক যেহেতু উপন্যাস লিখেছেন, তাই আছে কিছু কাল্পনিক চরিত্র। গল্প আবর্তিত হয়েছে এদের ঘিরেও। নানা ঘটনার ঘনঘটায় ঢাকা পড়েনি জীবনসৌন্দর্য আর জীবনসত্যের সন্ধান। ইতিহাসের সত্য আর লেখকের সৃজনী ভাবনা দুইয়ে মিলে 'দেয়াল' পরিণত হয়েছে একটি হূদয়গ্রাহী উপাখ্যানে।" গতকাল বুধবার অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত উপন্যাস 'দেয়াল'। অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত বইটি নিয়ে অন্যপ্রকাশের বিক্রয় কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক শিশির বলেন, 'বিকেল তিনটায় মেলা খোলার পর থেকেই আমাদের স্টলে প্রচুর ভিড়। সবার প্রতীক্ষা ছিলো কবে আসবে দেয়াল। সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে দেয়াল মেলায় আসার পর সবাই বইটি সংগ্রহ করে নিয়েছেন।'
নতুন বই: একাডেমীর সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বুধবার মেলায় ৮৩টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে— গল্প ৯টি, উপন্যাস ১১টি, প্রবন্ধ ৬টি, কবিতা ২২টি, গবেষণা ১টি, ছড়া ৭টি, শিশুতোষ ১টি, জীবনী ৪টি, মুক্তিযুদ্ধ ১, বিজ্ঞান ১টি, ভ্রমণ ২টি, ইতিহাস ২টি, রাজনীতি ১টি, কম্পিউটার ১টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ১টি, সায়েন্স ফিকশন ১টি এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর এসেছে ৬টি নতুন বই।
প্রকাশকরা বলেন, বিক্রির শীর্ষে রয়েছে, সময় প্রকাশনি থেকে আসা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত-এর লেখা বই 'বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ'। নন্দিত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ-এর শেষ উপন্যাস 'দেয়াল'। জাগৃতি প্রকাশনি থেকে এসেছে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক-এর লেখা 'ভুল ও ভালোবাসা সঞ্চয়', একাডেমিক প্রেস এন্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরি থেকে এসেছে ড. বেগম জাহান আরার 'প্রমিত বাংলা বানান সমাচার', বিশ্বসাহিত্য ভবন থেকে প্রকাশিত হয়েছে মফিদা আকবর-এর লেখা 'গভীর গোপন', জাগৃতি প্রকাশনি থেকে প্রকাশিত হয়েছে অদিতি ফাল্গুনীর 'কিফু কান দিন অথবা লক্ষ্মী পাচালি ও ব্রতকথা' বইটি। শ্রাবণ প্রকাশনি থেকে এসেছে স্বদেশ হাসানাইন-এর লেখা '১০০তম গল্প ও অদৃশ্য মানব' বইটি, সন্দেশ থেকে বেরিয়েছে আহমাদ মাযহারের অনুবাদে 'হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসি', বিশ্বসাহিত্য ভবন থেকে বেরিয়েছে মোহাম্মদ হাননান-এর 'ঢাকার রাজনৈতিক ইতিহাস', পালক পাবলিশার্স থেকে বেরিয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন-এর ডি সি, পি এস সি (অব.)।
মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান : বুধবার বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'বাংলাদেশের ফোকলোর চর্চার আধুনিকায়নের সমস্যা' এবং 'বিজয় সরকারের কবিমানস' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
আজকের আয়োজন : অমর একুশে উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এর সভাপতিত্ব করবেন কবি আসাদ চৌধুরী। বিকেলে 'অমর একুশে বক্তৃতা' প্রদান করবেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। একাডেমীর সভাপতি ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।