পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড যখন আনুষ্ঠানিকভাবে জানালো যে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) তারা এবার খেলোয়াড় পাঠাবে না; মাঠে খেলা গড়াতে আর তখন চব্বিশ ঘন্টার কম সময় বাকী! একাধিক বিপিএল দল তখন একাদশই গড়তে পারছিল না, দর্শকরা হঠাত্ তারকাশূন্য হওয়ায় যেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল খেলার দিক থেকে, মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছিল পৃষ্ঠপোষকরা। আসলে এসব মিলিয়ে তখন একটা প্রশ্নই পরিষ্কার শোনা যাচ্ছিল—আদৌ বিপিএলের দ্বিতীয় আসর ঠিকমতো শেষ হবে তো?
সে ঘটনার পর ৩৪ দিন কেটে গেছে। ব্যাট-বলের শব্দে মুখরিত হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার স্টেডিয়ামগুলো। কোথাও দর্শকের ঢল নেমেছে, কোথাও শূন্য গ্যালারি খা খা করেছে। কোনো ফেভারিট দল আগেভাগে বিদায় নিয়েছে, নতুন দল চমক দিয়েছে। তবে সবমিলিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর মিলে গেছে। পরিষ্কার বোঝা গেল, চ্যালেঞ্জ নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে শেষ করা গেছে বিপিএলের দ্বিতীয় আসর।
দুর্দান্ত এই চ্যালেঞ্জ দারুণভাবে উের যাওয়ার পর স্বভাবতই একটু তৃপ্ত সময় কাটাচ্ছেন বিপিএলের আয়োজকরা। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের কণ্ঠে যেমন ক্লান্তি ছাপিয়ে টের পাওয়া গেল খুশির ছোয়া, 'বোর্ড সভাপতি যখন বললেন, পাকিস্তানীদের ছাড়াই বিপিএল আয়োজন করব; তখন সবাই এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। আপনি কল্পনা করতে পারবেন না সভাপতি নিজে, বোর্ডের অন্য কর্মকর্তারা বিভিন্ন বোর্ডের কাছ থেকে খেলোয়াড় আনার জন্য কি কষ্ট করেছেন। এরপর দল মালিকগুলো নিশর্ত সমর্থন দিয়ে গেছে। টুর্নামেন্ট শুরুর পর গ্রাউন্ডসম্যান, ভলান্টিয়ার প্রাণপণ পরিশ্রম করেছেন। সংবাদ মাধ্যম পর্যন্ত ব্যাপারটা নিজেদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। সবচে বড় ভূমিকাটা রেখেছে আমাদের দেশি খেলোয়াড়রা। ব্যাটে, বলে, উইকেটের পেছনে তারা যার যার সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দিয়ে সফল করেছেন টুর্নামেন্টটি।'
শেষ কথাটিই সবচে বড় সত্য কথা। এ বিপিএলকে সফল বলতে হলে সে কৃতিত্বটা দিতে হবে বাংলাদেশি তারকাদের। পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা না আসায় তারকাশূন্য হওয়ার যে ভয় ছিল; তা হতে দেননি মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসানরা। হ্যা, রায়ান ডোশেট, ব্র্যাড হজ, ব্রেন্ডন টেলর, আলফোনসো থমাস, আজহার মেহমুদরা দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন। এক ম্যাচ খেলতে এসে রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দিয়ে গেছেন ক্রিস গেইল। কিন্তু টুর্নামেন্ট বাঁচিয়ে রেখেছেন আসলে আমাদেরই সাকিব, মুশফিক, এনামুল, বিজয়, মোশাররফরা।
প্রথমত পরিসংখ্যানে তাকালেই বুঝতে পারবেন যে, বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের দাপট কতোটা ছিল। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের, সর্বোচ্চ ডিসমিসাল তার। সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। টুর্নামেন্টে সেঞ্চুরি হয়েছে তিনটি। সর্বোচ্চ ১১৪ রান করেছেন গেইল, বাকি দুটি সেঞ্চুরি মোহাম্মদ আশরাফুল ও শাহরিয়ার নাফীসের। সেরা দশ ব্যাটসম্যানের ৬ জনই বাংলাদেশি।
সর্বোচ্চ উইকেট আলফোনসো থমাসের। তবে ১৮ ও ১৭ উইকেট নিয়েই সার্বক্ষণিক তার ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছিলেন এনামুল জুনিয়র ও মোশাররফ রুবেল। সেরা দশ বোলারেরও ঠিক ৬ জন বাংলাদেশের। এভাবে পরিসংখ্যানে চোখ বোলালেই বোঝা যাবে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের কৃতিত্বটা।
তবে সবচে বড় কৃতিত্বটা কোথাও লেখা থাকবে না—বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা জিতে নিয়েছেন দেশের হয়ে এক চ্যালেঞ্জ।