জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের এক গ্রুপের চাঁদা তোলায় বাধা দেয়ায় অপর গ্রুপের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে অন্তত ত্রিশ শিক্ষার্থী। গতকাল রবিবার এ সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির অনুপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। বিকাল পাঁচটার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্বপালন সম্ভব নয় বলে অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন। ক্যাম্পাসে থমথম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দীপু গ্রুপের কর্মীরা দুপুর আড়াইটার দিকে শহীদ মিনার এলাকায় প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার জন্য স্থাপিত অস্থায়ী খাবারের দোকানে চাঁদা দাবি করে। এতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল প্রতিবাদ জানালে সাংগঠনিক সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা তাদের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেলের নেতৃতে শহীদ সালাম বরকত হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা মীর মোশাররফ হোসেন হলে হামলা চালায়। এসময় উভয় গ্রুপের মধ্যে দশ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়। এছাড়া মীর মোশাররফ হোসেন হলের কর্মীরা হলের ছাদ থেকে এবং শহীদ সালাম বরকত হলের কর্মীরা নিচ থেকে ইট-ঢিল ছুঁড়তে থাকে। সংঘর্ষের ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধসহ অনন্ত ত্রিশজন আহত হয়েছে। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিত্সা শেষে গুরুতর পাঁচজনকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আহতরা হলেন, নেহাল (৪১ ব্যাচ, ভূগোল ও পরিবেশ), পল্লব (৪০, আইবিএ), আল-আমিন সেতু (৩৮, সরকার ও রাজনীতি), নিজাম (৩৮, পরিসংখ্যান), জাহাঙ্গীর (৪০, বায়োক্যামেস্ট্রি) তৌহিদ (৩৬ ব্যাচ), রাসেল (৩৯, দর্শন), কৌশিক (৪১), রাচি (৪১, ভূগোল ও পরিবেশ), আশিক (৪১, প্রত্নতত্ত্ব), জাহিদ (৪০, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক), সাদ্দাম (৩৯ দর্শন), নাফিস (৪২, বায়োক্যামিস্ট্রি), মাহমুদ (৪২ গণিত), সানয়োর, মাহীতোষ রায় টিটু, সজল, এনামুল।
পরে পুলিশ এসে টিয়ার শেল ছুঁড়লে উভয় গ্রুপ পিছু হটে। এসময় বিক্ষুদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশের উপরেও ঢিল ছুঁড়তে থাকে। পরে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি টিম উপস্থিত হলে তাদের উপর চড়াও হয় মীর মোশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা। এসময় শিক্ষকদের উপর ঢিল ছোঁড়ে তারা। এদিকে গতকালের কয়েক দফা সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি অনুপস্থিত ছিল। বিকাল ৫টার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বলেন, এ অবস্থায় নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। এ ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। সাভার সার্কেলে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আহবানেই আমরা এসেছি।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল জানান, ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে যারা চাঁদাবাজি করেছে তাদেরকে সাধারণ কর্মীরা বাধা দিয়েছে।