চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকা অবৈধ বাণিজ্যিক দোকানপাট-হোটেল-রেস্তোরাঁয় ছেয়ে গেছে। এসব বাণিজ্যিক দোকান নির্মাণ করে বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র। অবৈধ স্থাপনার সাথে জড়িত রয়েছে হাসপাতালের নার্স, কর্মচারী ও কথিত চিকিত্সক। কর্মচারীদের কল্যাণের অজুহাত দেখিয়ে 'কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে' সরকারি জায়গায় এসব বাণিজ্যিক দোকান বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এসব স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে কর্তৃপক্ষ নিরব রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চট্টগ্রাম অঞ্চলের একমাত্র সরকারি উন্নত চিকিত্সাকেন্দ্র। হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে আসা রোগী, স্বজন, কলেজের শিক্ষার্থী, চিকিত্সক বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মিলিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে। হাসপাতাল ও কলেজের খালি জায়গাগুলো অবৈধ স্থাপনায় ছেয়ে গেছে। সরকারি এসব জায়গা ব্যবহার করে একটি চক্র বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও ভোগ-দখলের সাথে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ উঠেছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। সরকারি এসব জায়গা রক্ষায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে অবৈধ ব্যবসায়ী চক্র উত্সাহ পাচ্ছে। হাসপাতালের ভিতরে পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট চালু করা হয়েছে। হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অন্যান্য বাণিজ্যিক দোকান, শতশত মোটরসাইকেল, কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশার পার্কিংয়ের ফলে এক অস্বস্থিকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। হাসপাতাল ও কলেজের একাডেমিক ভবনের সিঁড়ির নিচে ও পাশে বসেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বহুসংখ্যক দোকান। বছরের পর বছর এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চালু থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার শহীদুল গণি ইত্তেফাককে বলেন, 'ইন্টার্নি ডক্টরস, কর্মচারী ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দোকানগুলোর সরকারি নিয়ম অনুসারে কিছু ভাড়া দিয়ে থাকেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কর্মচারীরা কম খরচে খাবার গ্রহণের সুবিধা পায়।'
হাসপাতাল সংলগ্ন সামনেই রয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নির্মিত দু'টি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। এই দোকান দু'টি তারা ভাড়া দিয়ে থাকে। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট থেকে প্রতি মাসে ভাড়া পাওয়া যায় ৮০ হাজার টাকা। হোটেল বারান্দায় কর্মচারীদের খাবারের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তৃতীয় শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতির সভাপতি সাদেকুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, 'কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে দোকানটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটা আমরা ভাড়া দিয়ে দিই। কর্মচারীরা কম দামে নাস্তা করতে পারে। ভাড়া বাবদ পাওয়া অর্থ কর্মচারীদের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়। কোন কর্মচারী মারা গেলে ও অবসরে গেলে এককালীন টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া বার্ষিক বনভোজন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় রেস্টুরেন্ট থেকে আয়ের টাকায়।'
৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের হোটেল ও রেস্টুরেন্টটি থেকে মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যায়। সমিতির ৬৫০ জন সদস্য রয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নাছের বলেন, 'হোটেল থেকে আয়ের কিছু অর্থ আমরা রোগী কল্যাণ সমিতি ও কর্মচারীদের বাত্সরিক বোনাস প্রদান করে থাকি। কোন কর্মচারী মারা গেলে এককালীন ৩০ হাজার টাকা ও অবসরে গেলে ২৫ হাজার টাকা সমিতি পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়।'
হাসপাতালের পশ্চিম পাশে রয়েছে নার্সদের একটি ক্যান্টিন। কর্মচারীদের হোটেলের মতো এটিও বছরের পর বছর চালু রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডিপ্লোমা নার্সেস এসোসিয়েশনের সভানেত্রী রোমেনা আক্তার বলেন, এই কেন্টিন থেকে মাসে ৭২ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যায়। নার্সরা চাঁদা তুলে কেন্টিন নির্মাণ করেছে। প্রাপ্ত আয় থেকে গরীব অসুস্থ নার্সদের চিকিত্সা খরচ ও নার্সদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় রয়েছে ইন্টার্নি ডক্টরসদের রেস্টুরেন্ট। জানা যায়, কর্তৃপক্ষ এই রেস্টুরেন্ট থেকে ৩ হাজার টাকা ভাড়া পেয়ে থাকে। এছাড়া কয়েক বছর আগে হাসপাতালের পূর্ব গেইটে ৫টি বাণিজ্যিক দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। এসব দোকানের সাথে হাসপাতালের কর্মচারীরা জড়িত বলে জানা যায়।