বাঙালি উত্সব প্রিয়। বাঙালি ক্রিকেট পাগল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেই উত্সবের পালে হাওয়া লাগিয়েছে। পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে উত্সবের আমেজ। ক্রিকেটের রঙে রঙিন যেন দেশ। ১৬ মার্চ পর্দা উঠবে বিশ্বকাপের। অংশ নেবে ১৬ দেশ। খেলা হবে দেশের তিন শহরে। আর তাই সেজেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট।
ঢাকার চেনা সড়ক যেন অচেনা। বিভাজকে রঙিন আলোর ছটা। গাছে লাল-নীল-সবুজ মরিচবাতি। পানির ফোয়ারায় আলো ছায়ার খেলা। ভাস্কর্যতে লেগেছে তুলির ছোঁয়া। সড়কদ্বীপে দেশি-বিদেশি গাছ। সড়কে আছেন বঙ্গবন্ধু। আছেন রবীন্দ নাথ। লালন, নজরুল সবাই আছেন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘিরে সেজেছে ঢাকা। বদলে যাচ্ছে চেনা রাজধানী। সাজিয়ে বদলে ফেলার এই দায়িত্বটা নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোর। সঙ্গে আছে সরকারি-বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মূল সড়কের বিভাজক এবং দুই পাশ দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়েছে। আছে বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরার বিভিন্ন কাঠামো। বিজয় সরণির চৌরাস্তা বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। সেখানে বসেছে পানির ফোয়ারা ও আলোকরশ্মি। বিমান চত্বর থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর হয়ে মিরপুর ২ নম্বর পর্যন্ত এলাকাকেও সাজানো হয়েছে। বাঙালি সভ্যতার নানা নিদর্শনসহ কৃষক-বাউল স্থান পেয়েছে এই সজ্জায়। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের আশপাশের সড়ক কার্পেটিং করে ঝকঝকে করা হয়েছে।
এছাড়া ট্রাফিক সাইন, রোড মার্কিং ও সড়কদ্বীপে রং লেগেছে। সড়ক বিভাজকের ভেতরে লাগানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন দেশি-বিদেশি গাছ। প্রতিটি বিদ্যুতের পোলে বসানো হয়েছে নতুন বাতি। থাকছে লতাগুল্মের টব। এয়ারপোর্ট সার্কেল, সার্ক ফোয়ারা, বিজয়নগরে বেশ কিছু স্থায়ী ভাস্কর্য স্থাপন করেছে ঢাকা সিটি করপোরেশন। আর অনেক জায়গায় অস্থায়ী ভাবে কিছু ভাস্কর্যও বসানো হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে বিমানবন্দরের সামনের চত্বরের ভাস্কর্যে আলোর ঝর্নাধারা ছড়ানোর দৃশ্য দেখা গেছে। দিনে দেখা গেছে ধুলোয় ঢাকা রাস্তার দু'পাশের গাছপালাগুলোকে ধুয়ে-মুছে সবুজ করতে। রাতে এই সবুজের বেষ্টনীতে জ্বলছে লাল, নীল, সাদা, সবুজ, বেগুনি বাতি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় সরণি ও সংসদ ভবন এলাকার আলোকসজ্জায় দেশীয় নানা ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে
এদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামকেও সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। শোভা বর্ধনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। ক্রিকেট বান্ধব চট্টগ্রামবাসী ক্রিকেটকে ভালবাসে। চট্টগ্রাম ক্রিকেট প্রেমিদের প্রিয় নগরী। পুরো নগরী সাজানো হয়েছে নতুন করে। সিটি গেইট থেকে পোর্টকানেক্টিং রোড, এয়ারপোর্ট রোড, শেখ মুজিব রোড, জাকির হোসেন রোড, সিডিএ এভিনিউ, আরাকান রোড, বায়েজিদ বোস্তামি রোডসহ বিভিন্ন মোড় বিশেষ করে জিইসি, বাদামতলী, বিমান চত্বর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নিউমার্কেট এলাকা, বিভিন্ন অলি আউলিয়াদের মাজার, স্বাধীনতা পার্ক, শিশু পার্ক, সী বীচ চেনার উপায় নেই। এসব এলাকা ঝকঝকে তকতকে।
অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্ব আসরকে ঘিরে দেশের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে মনে করছেন বিসিবি সভাপতি। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আইসিসির সঙ্গে পর্যটন বোর্ডের চুক্তি হয়েছে। সিলেটে বিশ্ব আসরের কয়েকটি ম্যাচ হওয়ায় প্রশাসন ও রিসোর্ট মালিকরা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।