পরনে নতুন নকশার, নতুন রঙয়ের জার্সি। কেশবিন্যাস, বেশ-ভুষাতেও একটু নতুনের ছোঁয়া।
সেদিন ট্রফিটা হাতে নিয়ে মুশফিকুর রহিম যখন উঠে দাঁড়ালেন, সবকিছু নতুন বলে মনে হলো। সবচেয়ে নতুন হলো—বাংলাদেশ অধিনায়কের হাতে ট্রফি। তাও আবার যেন তেন ট্রফি নয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ডাকনামের 'আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি' ট্রফি!
টুর্নামেন্টের শেষে এমন দৃশ্য আমরা কবে দেখতে পাব, সেটা নিয়ে বাজি ধরাধরি চলতে পারে। আপাতত সে স্বপ্ন যে সবচেয়ে আশাবাদী মানুষটিও দেখছেন না, এটাও সত্যি। তবে এই 'সত্যিই'ই শেষ কথা নয়। শেষ কথা হলো, আমাদের দুয়ারে এসেছে বিশ্বকাপ। শেষ কথা হলো, সেই বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের এবং মুশফিকুর রহিমদের আনন্দে মেতে উঠতেই হবে, সর্বোচ্চ স্বপ্নটাই দেখতে হবে।
এখন আমরা বরং একটু বাংলাদেশের প্রস্তুতি আর সম্ভাবনাটা একটু নিজেদের মতো করে বিশ্লেষণ করে দেখি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে মাঠে ও মাঠের বাইরে বাংলাদেশ যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে এবং বিশ্বকাপের গন্ধ যে আকাশে-বাতাসে ছড়াতে শুরু করেছে, তাতে আর সন্দেহ নেই। সবগুলো ভেন্যু সাজিয়ে তোলা, কেন্দ্রস্থল ঢাকা মহানগরীকে তিলোত্তমা করে তোলা, শেষ সময়ের নানা আয়োজন, কনসার্ট দিয়ে মাতানোর প্রস্তুতি; এসব চলছে মাঠের বাইরে।
তবে আসল প্রস্তুতির ব্যাপারটা অবশ্যই খেলোয়াড়দের। সত্যি কথা বলতে, সেই প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ খুব একটা সময় পায়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটো টানটান টি-টোয়েন্টি এ বছরই তারা খেলেছে, গত বছরের শেষ দিকেই খেলেছে বিজয় দিবস নামে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন বাংলাদেশকে কাটাতে হয়েছে ওয়ানডে খেলেই। প্রথমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনটি এবং পরে এশিয়া কাপে চারটি; মোট সাতটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে এই সময়ে বাংলাদেশ। সমস্যার বিষয় হলো, এই সাতটি ম্যাচেও তারা কাছে গিয়ে গিয়ে হারের স্বাদই নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
ফলে ঠিক টি-টোয়েন্টির প্রস্তুতি বলতে যেটা বোঝায়, তাতে একটু ঘাটতি রয়েই গেছে। তবে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা বলছেন, এই ঘাটতি খুব বড় সমস্যা নয়। তারা দ্রুতই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে খুব আশাবাদী। আর সে জন্য ভরসা হলো, আরব আমিরাত ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ।
তারপরই বাংলাদেশকে বসতে হবে 'প্রথম রাউন্ড' নামের বাছাইপর্ব পার হওয়ার পরীক্ষায়। এ পরীক্ষায় বাংলাদেশের সামনে প্রতিদ্বন্দ্বী তিনটি—আফগানিস্তান, নেপাল ও হংকং। এর মধ্যে আফগানিস্তানই মূল হুমকি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের স্মৃতি এখনও টাটকা। এ ছাড়া এই দলটির বিপক্ষে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন খেলা এবং আনঅফিশিয়াল ম্যাচেও বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। ফলে এখানে একটা শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। শঙ্কা থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি খেলাটিই নিয়ে। এই ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩৩টি ম্যাচ খেলে মাত্র ৯টি জয় পেয়েছে। যেটি ওয়ানডের তুলনায় বাংলাদেশের জন্য বেশ হতাশাজনক পারফরম্যান্স। এমনকি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সাফল্যের এমন কোনো ইতিহাস নেই। শুধু প্রথম আসরে, সেই ২০০৭ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। এরপর থেকে আর এই আসরে বাংলাদেশের তেমন কোনো সাফল্য নেই।
তবে এইসব নিরেট পরিসংখ্যানে তো আর স্বপ্ন বাস করে না। স্বপ্ন বাস করে আবেগের মধ্যে। আর সেই আবেগ থেকেই ঘরের মাটির এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে একটা আশা তৈরি হয়েছিল বা হয়েছে। কারণ হলো ২০১২-১৩ সালজুড়ে অন্তত ওয়ানডে ফরম্যাটে ঘরের মাঠে টানা ভালো পারফরম্যান্স। কিন্তু সেই ওয়ানডেতেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ ও এশিয়া কাপে দলের ব্যর্থতা; বিশেষ করে বারবার কাছে গিয়ে হারায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
এর মাঝে মাঠের পারফরম্যান্স ও বাইরের নানা বিতর্ক মিলিয়ে দল একেবারে জর্জরিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল। তার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরাজয়ে। পরে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাস সেরা ব্যাটিং করেও ক্ষতিপূরণ শেষ পর্যন্ত হয়নি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ তাই মূলত নিজেদের ধ্বসে পড়া আত্মবিশ্বাসটা চাঙা করা।
সেটা করতে মাঠে যেসব ক্রিকেটীয় কাজ করা দরকার, ক্রিকেটাররা করবেন। পাশাপাশি মাঠের বাইরে আলোচনা, পরিকল্পনায় নানা পরিবর্তন এনে কিছু সুফল পাওয়ারও চেষ্টা চলছে। এমনকি মাস খানেক আগেই ঘোষিত স্কোয়াডেও কিছু বদল আনার সুযোগ বোর্ড খুঁজছে বলে শোনা যাচ্ছে।
আর থাক! ঢের হয়েছে শঙ্কার কথা, ঢের হয়েছে নেতিবাচক আলোচনা।
এখন সময় কেবলই সামনে তাকানোর। বাংলাদেশের সিনিয়র ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাক যেমন বলছিলেন, খারাপ সময় অনির্দিষ্টকাল ধরে চলতে পারে না। তার এবং পুরো দলের বিশ্বাস খারাপ সময় যা পার করার বাংলাদেশ করে ফেলেছে। এখন শুধুই ভালো সময়ের অপেক্ষা।
ভালো সময়ের ব্যাখ্যাও ক্রিকেটারদের কাছে পরিষ্কার। প্রথম রাউন্ডে বাকি তিন দলকে টপকে সুপার টেন বা মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়াই বাংলাদেশের এখন ভালো সময়ের ব্যাখ্যা। আর সেটা একবার করতে পারলে স্বপ্নটা আরও বড় হতে পারে। কত বড়?
নাসির হোসেন হেসে বলেন, 'টি-টোয়েন্টি খেলা, এখানে আপনি চাইলে সবচেয়ে বড় স্বপ্নটাও দেখতে পারেন।'
আমরা সেই স্বপই দেখছি, নাসির। বাকিটা আপনাদের হাতে।
প্রথম পর্বের খেলা
১৬ মার্চ বাংলাদেশ-আফগানিস্তান দুপুর ৩.৩০ ঢাকা
১৮ মার্চ বাংলাদেশ-নেপাল সন্ধ্যা ৭.৩০ চট্টগ্রাম
২০ মার্চ বাংলাদেশ-হংকং সন্ধ্যা ৭.৩০ চট্টগ্রাম