বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন তো বটেই প্রতিভা বিচারে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের তালিকায় উচ্চারিত হয় তাদের নাম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেশের পক্ষে ব্যাটিং-বোলিংয়ের সেরাদের তালিকায়ও উপরের দিকেই আছেন তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানরা। অথচ, ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণটির বৃহত্তম আসর তথা বিশ্বকাপে আশ্চর্যজনকভাবেই ব্যর্থ তারা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসরে বাংলাদেশের সাফল্য-সম্ভাবনা অনেকাংশে নির্ভর করছে তাদের জ্বলে ওঠার উপরেই।
তামিমের কথাই ধরা যাক। বাংলাদেশের খেলা ৩১ টি-টোয়েন্টির ২৮ টিতেই দলে ছিলেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে দেশের পক্ষে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডধারী এই ব্যাটসম্যান ৬৮৮ রান নিয়ে এই ফরম্যাটে দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনিই। তবে টুর্নামেন্টটি যখন বিশ্বকাপ তখন হঠাত্ করেই যেন একদম অচেনা হয়ে যান তামিম। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা ১১টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একবারই দলে না থাকা এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মাত্র ১৩.৬ গড়ে ১০ ম্যাচে করেছেন মাত্র ১৩৬ রান! যেখানে তামিমের ক্যারিয়ার গড় ২৩.৩৮।
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩২ রান হয়ে আছে এই টুর্নামেন্টে তামিমের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তামিমের অনুপস্থিতে ওয়ানডেতে গত কয়েক ম্যাচে ভালো একটা উদ্বোধনী জুটি হবার ইঙ্গিত দেয়া সামসুর রহমান-এনামুল হকের ফর্ম আরো চাপে ফেলে দিয়েছে তামিমকে। আগামী ১৬ মার্চ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনে গত কিছুদিনের ব্যর্থতার পাশাপাশি বিশ্বকাপে অতীত ব্যর্থতা ঘোচানোর চ্যালেঞ্জও থাকবে তামিমের সামনে।
তামিমের চাইতে খানিকটা এগিয়ে থাকলেও বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সাকিবের পারফরম্যান্সকেও মোটেই সাকিবসুলভ বলা যাবে না। গত চারটি বিশ্বকাপে সাকিবের রান ছিল যথাক্রমে পাঁচ ম্যাচে ৫৬, দুই ম্যাচে ১৫, দুই ম্যাচে ৭৫ এবং দুই ম্যাচে ৯৫। রানসংখ্যার দিকে তাকালে চোখে পড়বে অদ্ভুত্ একটা মিলও। দেখা যাচ্ছে প্রতিটি টুর্নামেন্টেই খানিকটা হলেও উন্নতির দিকে উঠছে সাকিবের পারফরম্যান্সের গ্রাফ। দেশের মাটিতে স্মরণীয় কিছু করতে বাংলাদেশ দলও এবার আগের চাইতেও ভালো কিছু চাইবে সাকিবের কাছ থেকে।
শীর্ষ তিনে থাকা অন্য ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আশরাফুল তো থাকছেনই না টুর্নামেন্টে। ম্যাচ ফিক্সিং বিতর্কে মাঠের বাইরে দর্শক হয়েই আশরাফুলকে দেখতে হচ্ছে বাংলাদেশের খেলা।
এদিকে বোলিংয়ে দেশের সবচেয়ে সফল বোলার আব্দুর রাজ্জাকও ব্যতিক্রম নন খুব একটা। সাকিব-তামিমদের সমান ২৮ ম্যাচ খেলে দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়দের একজন রাজ্জাক বিশ্বকাপে ১০ ম্যাচে পেয়েছেন মাত্র ১১ উইকেট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাকিবের বিশ্বকাপ উইকেট সংখ্যাও রাজ্জাকের সমান। তবে বিশ্বকাপ কিছুটা সুখস্মৃতিও মনে করিয়ে দেবে সাকিবকে। এই বাহাতি স্পিনারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়েই বিশ্বকাপে একমাত্র সাফল্যটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। সাকিবের চার উইকেটের সুবাদেই দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
মাত্রই ইনজুরি থেকে ফেরা দেশসেরা পেসার মাশরাফির জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে এই বিশ্বকাপ। দেশের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মাশরাফিও চরম ব্যর্থ বড় আসরগুলোতে। বিশ্বকাপে ১১টি ম্যাচ খেলে মাত্র সাত উইকেট পেয়েছেন এই পেসার। সুতরাং, অতীতের আক্ষেপ ঘুচিয়ে দেশবাসীকে আরেকবার উত্সবে ভাসাতে সেরা ফর্মের মাশরাফিকে দারুন প্রয়োজন বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের সেরা তিন (ব্যাটিং)
ব্যাটসম্যান রান ম্যাচ গড় সর্বোচ্চ
তামিম ইকবাল ৬৮৮ ২৮ ২৩.৩৮ ৮৮*
সাকিব আল হাসান ৫৬৬ ২৮ ২০.২১ ৮৪
মোহাম্মদ আশরাফুল ৪৫০ ২৩ ১৯.৫৬ ৬৫
বাংলাদেশের সেরা তিন (বোলিং)
বোলার উইকেট ম্যাচ ইকোনমি রেট সেরা
আব্দুর রাজ্জাক ৩৯ ২৮ ৬.৯৭ ৪/১৬
সাকিব আল হাসান ৩৬ ২৮ ৬.৬৮ ৪/২১
মাশরাফি বিন মুর্তোজা ২৩ ২৩ ৮.৪৩ ৪/১৯