বাংলাদেশের ক্রিকেটে নারীদের আত্মপ্রকাশ বেশিদিনের নয়। দেশের সব নারীর কাছে খবরটা এখনও ঠিকমতো পৌঁছায়ওনি। কে খেলে, কেমন খেলে, সেটা ঢাকা শহরের বেশিরভাগ মানুষও জানে না। ছেলেদের ক্রিকেট যেমন আমজনতার খেলা, মেয়েদেরটা তা না। অতি-সাধারণ পরিবার থেকে আসা কিছু মেয়ের হাতধরে ক্রিকেটের বিকাশ বাংলাদেশে। সালমা খাতুন তাদের নেতা। যারা চেষ্টা করছেন ছেলেদের ক্রিকেটের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা পেতে। জল-জলাশয়-বিক্ষুব্ধ, ঝড়ঝঞ্ঝা মোকাবেলা করে অভীষ্ঠ লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছেন তারা। বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল বিপ্লব ঘটিয়ে ফেললে দারুণ হয়। পুরো নারী সমাজটাকেই নাড়া দিয়ে দিতে পারে ক্রিকেট দলের সাফল্য। যে বিপ্লব আগামী প্রজন্মকে টেনে আনবে ক্রিকেট মাঠে। হয়তো একটু বেশি বেশি প্রত্যাশা করা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন কিছু অবাস্তব বা
অসম্ভব নয়।
সম্প্রতি পাকিস্তান মহিলা দলের বিপক্ষে দারুণ ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ মহিলা দল। কক্সবাজারে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে ২-০ ব্যবধানে। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য জেতার মানসিকতা দেখাতে পারেনি। ভারত এবং পাকিস্তানের কাছে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে হারলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ ছিল খেলায়। হারতে হারতে জিততে শিখে যাবে। ছেলেদের দলটাও তো একসময় এমনই ছিল। তারা এখন বিশ্বের যে কোন দলকেই চ্যালেঞ্জ জানাতে শিখে গেছে। মহিলা দলটা এবার বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে দু'একটা ম্যাচ জিতে চমক দেখাতে পারলে! না জিতলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ বাংলাদেশ দলটার বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে খেলারই কথা ছিল না। স্বাগতিক হিসেবে সুযোগটা পেয়েছে। বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে আট দলের মহিলা বিশ্ব টি-টোয়েন্টি হতে যাচ্ছে ১০ দলের। বাংলাদেশকে খেলতে হচ্ছে কঠিন বিভাগে। বিশ্ব টি-টোয়েন্টির বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াসহ, ইংল্যান্ড, ভারত এবং আয়ারল্যান্ড স্বাগতিক দলের প্রতিপক্ষ। যাদের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের পার্থক্য বিস্তর। একমাত্র আয়ারল্যান্ড ছাড়া অন্যদের হারানোর সামর্থ্য নেই বললেই চলে। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের সঙ্গে ক্রিকেটের কোন ফরম্যাটেই এখনও খেলার সুযোগ হয়নি সালমাদের। সেখানে হুট করে খেলতে নেমে পরাশক্তিদের হারিয়ে দেয়ার চিন্তা কল্পনাবিলাস। তার ওপর খেলাটা টি-টোয়েন্টি। ২০ ওভারের ম্যাচে গোছগাছ করার সময় পাওয়া যায় না, শুরু হতে হতেই শেষ। এছাড়া এই ফরম্যাটে খুব বেশি ক্রিকেট খেলেনি বাংলাদেশ মহিলা দল। দেশে মহিলাদের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সামান্যই। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় সামান্যই। হাতেগোনা কিছু মেয়ে ছাড়া মানসম্পন্ন ক্রিকেট খেলেও না। জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা পর্যন্ত সব বিভাগে স্বচ্ছন্দ হয়ে ওঠেনি। সেখানে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড এবং ভারতের মতো প্রবল প্রতিপক্ষকে অঘটন উপহার দেয়ার কথা হয়তো কল্পনাও করছেন না সালমা খাতুনরা। অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড দলে এমন কয়েকজন পেস বোলার আছে যাদের গতির সামনে হুড়মুড়িয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে পারে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইনআপ। বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে যাওয়ার আগে পাকিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে পাঁচটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সাফল্য না পেলেও খেলাটায় অভ্যস্ত হতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে আইসিসির টুর্নামেন্টে। অন্তত বাজেভাবে হার এড়াতে লড়াই করার মানসিকতা থাকবে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, যে কোন কিছুই হতে পারে। তারওপর টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ফেভারিট দলকেও আতঙ্কে থাকতে হয়। সেদিক থেকে বাংলাদেশ দল একটু সাহস দেখালে ভালো কিছু হতেও পারে।