বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট
শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকা
২০০৭ সালের ২৫ মে। আগের রাতে প্রবল বৃষ্টি শঙ্কা তৈরি করেছিল খেলা সময়মতো শুরু হবে কি না। কিন্তু বাংলাদেশকে তো বটেই; মোটামুটি ক্রিকেট বিশ্বকেই তাজ্জব করে দিয়ে একেবারে সঠিক সময়ে শুরু হয়ে গেল ভারতের বিপক্ষে টেস্ট।
এই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মিরপুরের এই স্টেডিয়ামটির মূল 'বিজ্ঞাপন'ই হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বসেরা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার একটি এখানে। গত কিছুদিন ধরে ত্রুটিপূর্ণ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণে সে শ্রেষ্ঠত্বে প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হলেও এখনো বাংলাদেশের এক নম্বর ক্রিকেট স্টেডিয়াম এই মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
মূলত মিরপুর স্টেডিয়াম দেশের অতি পুরনো একটি ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্স স্টেডিয়াম। সে জন্য এখানে ছিল চারকোণা মাঠ ও অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাক। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনের ফলে ক্রিকেটের আলাদা একটি ঠিকানা খুঁজতেই ২০০৫ সালের দিকে স্থায়ীভাবে এখানে চলে আসে ক্রিকেট। কালক্রমে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অফিসও চলে আসে 'হোম অব ক্রিকেট' ডাক নামের এই বিশাল ভেন্যুতে।
২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু হয় এই ভেন্যুর।
সাগরকন্যা সাগরিকা
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম
একেবারে ক্রিকেট উপলক্ষেই তৈরি অল্প কয়েকটি স্টেডিয়ামের একটি এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। গল্পটা অনেকটাই শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মতো। চট্টগ্রামেও আগে ক্রিকেট হত বিভাগের পুরোনো ভেন্যু—এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। কিন্তু বহুমুখী সে স্টেডিয়াম ছেড়ে এখানেও ক্রিকেট একটি নিজস্ব ঠিকানা খোঁজ করে পেতে চাইলো। যার ফলে তৈরি হল শহর থেকে ঘন্টা আধেক দূরত্বে, সমুদ্র থেকে
সামান্য দূরেই এই স্টেডিয়াম।
এলাকাটিকে স্থানীয় লোকেরা সাগরিকা বলে ডাকেন। সেই সুবাদে স্টেডিয়ামটিরও একটি ডাক নাম তৈরি হয়ে গেছে—
সাগরিকা স্টেডিয়াম।
গত বছর পর্যন্তও এই ভেন্যুর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। এই কারণে এখানে একাধিক ম্যাচ পরিত্যক্তও হয়েছে; আবহাওয়া ভালো হয়ে যাওয়ার পরও! অবশেষে অত্যাধুনিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যোগ করা হয়েছে এই ভেন্যুতে।
২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমে ওয়ানডে ও পরে টেস্ট অভিষেক হয় এই ভেন্যুর; শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। অবশ্য ভেন্যুটির টি-টোয়েন্টি অভিষেক হতে সময় লেগেছে অনেকটাই। মাত্র এ বছরই এই ফরম্যাটের খেলা শুরু হয়েছে এখানে। বিশ্বকাপ দিয়ে
আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
দেশের প্রথম 'সবুজ' স্টেডিয়াম
সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সিলেট
গ্রিন স্টেডিয়ামের ধারণা পৃথিবীতে আজকের নয়। বরং বলা ভালো ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ার দর্শকরা উন্মুক্ত-সবুজ ঘাসের বিছানায় বসে খেলা দেখতেই বেশি অভ্যস্ত। কিন্তু খেলাটিকে বেশি বেশি টাকা আয়ের উেস পরিণত করতে গিয়ে আমাদের উপমহাদেশে এই ধারাণাটা প্রতিষ্ঠাই পায়নি সেভাবে।
অবশেষে সিলেটে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এখন অভিষেকের অপেক্ষায় আছে সবুজ এই স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু ও কাজ শেষ হওয়ার কথা অনেক আগেই। সবকিছু ঠিক থাকলে নিউজিল্যান্ডই হয়তো এখানে ম্যাচ খেলে যেত। সে সময় পর্যন্ত নির্মাণ ও সংস্কার কাজ নিয়ে টালবাহানা, টানাপোড়েন মিলিয়ে তা হয়নি। অবশেষে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে তার যাত্রা শুরুর কথা ছিল। তাও হয়নি নিরাপত্তা ও ভ্রমণক্লান্তির কারণে শ্রীলঙ্কার আপত্তি তোলায়।
শেষ পর্যন্ত এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়েই যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে নয়নাভিরাম এই স্টেডিয়ামটি। চারদিকে চা বাগান, মাঝে সবুজ গ্যালারির এই স্টেডিয়াম যে নজর কাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।