নিখোঁজ বিমানের রহস্য উদঘাটনে এবার অভিযান ভারত মহাসাগরে। প্রয়োজনে বঙ্গোপসাগরেও অভিযান চালানো হতে পারে। সাত দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি যেটা পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায়। তথ্য যা আসছে তা কিছুক্ষণ পরই গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে তারা ভারত মহাসগর পর্যন্ত অনুসন্ধানের আওতা সমপ্রসারিত করেছে। একটি তথ্য মিলেছে গতকাল। বলা হচ্ছে, বিমানে অপরিচিত কেউ ছিল যে বিমানটিকে ভুল পথে নিয়ে গেছেন। হয়তো আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের দিকে। আবার ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটি ভারত মহাসাগরের কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবতরণ করতে পারে। আবার বিমানের পাইলট আত্মঘাতী হয়ে কিছু করেছেন কিনা সেই বিষয়টিও তদন্ত করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও সিএনএন ও এএফপি'র।
গতকাল শুক্রবার নিখোঁজ মালয়েশীয় বিমানের সন্ধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ভারত মহাসাগরে বিস্তীর্ণ এলাকজুড়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বেশ কিছু মার্কিন সংবাদ মাধ্যম বলেছে, মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে রাডারের আওতার বাইরে চলে যাওয়ার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা এর যোগাযোগ ব্যবস্থা উপগ্রহে সচল ছিল বলে ধরা পড়েছে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জে কার্নি বলেন, নিশ্চিত না হলেও কিছু নতুন তথ্যের ভিত্তিতে আমার ধারণা হলো অনুসন্ধান ক্ষেত্র ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। মার্কিন নৌ বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, ইউএসএস কিড মালাক্কা প্রণালী থেকে ভারত মহাসাগরের পথে রয়েছে। এটি প্রাথমিকভাবে মালয়েশীয় উপকূলের অপর পাশে থাইল্যান্ড উপসাগরে মোতায়েন ছিল। ভারত মহাসাগর পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাসাগর এর গড় গভীরতা ৩ হাজার ৯শ' মিটার। ফলে এই অনুসন্ধান অভিযান এখন এক বিশাল এলাকায় পরিচালিত হতে যাচ্ছে। মার্কিন সপ্তম নৌবহরের কমান্ডার উইলিয়াম মার্কস এ সম্পর্কে বলেন, এটি যেনো দাবার বোর্ড থেকে ফুটবল মাঠে যাওয়া। তিনি জানান, মার্কিন অনুসন্ধান অভিযান মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমম্বয় করেই পরিচালিত হবে।
মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, উপগ্রহ চিত্রে বিমানটির ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায় কীনা, তা নিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কথা বলছেন। এছাড়া চীনের দিক থেকেও নতুন কিছু তথ্যে এমন আভাস দেওয়া হচ্ছে যে বিমানটি হয়তো সাগরে পড়ে গিয়ে থাকতে পারে। মালয়েশিয়ান বিমানটি নিখাঁজ হওয়ার সাতদিন পরেও মালয়েশিয় কর্তৃপক্ষ কোনো তত্ত্ব যেমন মেনেও নেয়নি তেমনি উড়িয়েও দেয়নি। বিমানটি পূর্ব দিকে না পশ্চিম দিকে গেছে সে বিষয়ে তারা যেমন নিশ্চিত নয়, তেমনি বিমানটির ছিনতাই, চুরি বা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনাও তারা নাকচ করে দিচ্ছেন না। মালয়েশিয়ার অস্থায়ী পরিবহন মন্ত্রী হিশামউদ্দিন হুসেইন বলেছেন, তাদের মূল লক্ষ্য যত দ্রুত সম্ভব বিমানটি খুঁজে বের করা। দুদিন আগে আন্দামান সাগর পর্যন্ত খোঁজ চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা আরো পূর্ব দিকে যাচ্ছি দক্ষিণ চীন সাগর এবং তারপর ভারত মহাসাগরেও আমরা তল্লাশি চালাব।। তবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরেও বিমান আরো কয়েক ঘন্টা উড়েছিল বলে আমেরিকার দেওয়া তথ্য সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন পরিবহনমন্ত্রী। অবশ্য দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল প্রধান আজহারউদ্দিন আব্দুল রহমান বলেন বিমানটি খুঁজে বের করার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রে উপগ্রহ তথ্যের সাহায্য নিচ্ছে।
মালয়েশিয়া সরকারের অনুরোধে ভারতীয় নৌ, বিমান এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীও সন্ধান তত্পরতায় অংশ নিয়েছে। অন্যদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে দক্ষিণ চীন সাগরের তলদেশে বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রায় ৯০ মিনিট পরে কম্পনের কিছু তথ্য ধরা পড়েছে, যেখানে আগে কোনো কম্পনের ইতিহাস ছিল না। বিমানটির সঙ্গে শেষ যোগাযোগের স্থান থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে এই কম্পন ধরা পড়েছে।