বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন সংগ্রামকে সামনে রেখে দল গোছানোর ঘোষণা দেয়ার পর প্রথমে হাত দিয়েছেন মহানগর কমিটিতে। সাদেক হোসেন খোকা স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার আগেই ২১ সদস্যের একটি বিশেষ আহ্বায়ক কমিটির একটি খসড়া তৈরি করেন বেগম জিয়া। যাদের দিয়ে আগামী দু'মাসের মধ্যে ঢাকা মহানগরের সকল থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি এবং তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে ঢাকা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবেন।
স্থায়ী কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনা হলেও নেতাদের নাম প্রকাশ করেননি হাইকমান্ড। তিনি তার পছন্দের নেতাদের আলাদা আলাদা ডেকে নিয়ে এই প্রসঙ্গে কথা বলেন। ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে অভিজ্ঞ সিনিয়র নেতাদের ক'জনকে এই খসড়া কমিটির প্রধান হতে আহ্বান জানালে তারা 'নিমরাজি' হন। ফলে মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল আউয়াল মিন্টু, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়দের সদস্য পদে রেখে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহকে নয়া কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে অভিজ্ঞ পুরানোদের প্রাধান্য দেয়া হবে নাকি তুলনামূলক রাজপথে সক্রিয় নবীনদের তুলে আনা হবে- এ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। গত দু'দিনে কয়েকজন তরুণ নেতা কমিটিতে থাকার জন্য জোর লবিং শুরু করেন। দলের ভেতর জিইয়ে থাকা পুরনো কোন্দল ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ নিয়ে গুলশান অফিস কেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। নিজেদের পছন্দের লোকদের কমিটিতে জায়গা দিতে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। এদের একটি পক্ষ সাদেক হোসেন খোকাসহ অভিজ্ঞ এবং ঢাকার ভেতরে প্রভাবশালী নেতাদের একেবারে পাশ কাটিয়ে নতুন কমিটি সামনের আন্দোলন সংগ্রামের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কতটা সফল হবে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কারো মতে, গণমাধ্যমে চেহারা দেখিয়ে পরিচিত আঞ্চলিক নেতাদের চেয়ে ঢাকা মহানগর কমিটিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রাধান্য দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে এলাকায় প্রভাবশালী হওয়া এবং সন্তোষজনক কর্মী-সমর্থক আছে এমন নেতাদের স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে মহানগর কমিটিতে জায়গা করে দেয়ার পক্ষে এই অংশ।
দলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দলের হাইকমান্ড সংকট কাটিয়ে যে কোন দিন কমিটির ঘোষণা দিবেন। বিগত ১৭ বছর মহানগর বিএনপির প্রধান ছিলেন খোকা। তাই নতুন কমিটি ঘোষণার পর যেন খোকার অনুসারীরা কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই কমিটি দিচ্ছেন বেগম জিয়া।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্তে ঢাকা মহানগর কমিটি করা হবে। কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে কবে নাগাদ এ কমিটি ঘোষণা করা হবে সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিতে রাজি হননি।
তবে বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া খসড়া কমিটির তালিকা করেছেন। এ নেতাও খসড়া তালিকায় রয়েছেন বলে দাবি করেন। তিনি জানান, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহকে আহ্বায়ক করা হচ্ছে, আবু সাঈদ খান খোকনকে করা হচ্ছে সদস্য সচিব। এছাড়া ২১ সদস্যের খসড়া কমিটিতে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, মো. শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সমাজসেবা সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, এস এ খালেক, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সাবেক ছাত্রনেতা সানাউল হক নীরু ও কামরুজ্জামান রতন, বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কদের মধ্যে কাজী আবুল বাশার, এমএ কাইয়ুম, নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু, বজলুল বাসিত আনজু ,আবদুল লতিফ।
এদিকে কমিটি ঘোষণা এবং আহ্বায়ক হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আ স ম হান্নান শাহ বলেন, নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নিবেন তা পালন করা আমাদের দায়িত্ব। তবে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না এই মুহূর্তে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, নবীন-প্রবীণদের সমন্বয়ে কমিটি হচ্ছে। যারা আন্দোলনে যোগ্য ও পরীক্ষিত তাদের দিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে । স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যে কোনো দিন কমিটির ঘোষণা আসবে।
উল্লেখ্য, সাদেক হোসেন খোকা ১৯৯৬ সাল থেকে বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। খোকার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে ১/১১ এ মহানগর কমিটি ভেঙে দেন দলের প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। ২০১১ সালের এপ্রিলে দেলোয়ারের মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই বছরই মে মাসে খোকাকে আহ্বায়ক ও আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে নতুন আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন খালেদা জিয়া। কাউন্সিলের মাধ্যমে ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কেন্দ্রিক সরকার বিরোধী আন্দোলনে মহানগর কমিটির ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ হন দলের হাই কমান্ড। এরপর কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
সাদেক হোসেন খোকা জানান, মহানগরকে ঢেলে সাজানোর জন্য আমি নেত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছি। আমি বলেছি, নতুন কেউ নেতৃত্বে আসুক। দলের নেতৃত্বে নতুন-তরুণদের আসা দরকার।