ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে তিন আসামি (জঙ্গি) ছিনতাইয়ের ঘটনায় খরচ হয়েছে কোটি টাকা। মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ট্রাক, আগ্নেয়াস্ত্র ও সন্ত্রাসী গ্রুপ ভাড়া করতে এ টাকা খরচ হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছেন ছিনতাই ঘটনায় অর্থের যোগানদাতা গার্মেন্টস ও টাইলস ব্যবসায়ী আজমীর হোসেন ওরফে অমিত ও গোলাম সারোয়ার রাহাত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে এই দুই ব্যবসায়ীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। অপর দু'জন হচ্ছেন সৈয়দ জিয়াউল আহসান জিতু ও আল আমিন। এরা সরাসরি আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় অংশ নেন। ডিবি পুলিশ গতকাল রমনা থানায় দায়ের করা তিনটি মামলায় তাদের ৯ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত দুই ব্যবসায়ীকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কয়েকদিন আগে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে গ্রেফতার করা হয় জিতু ও আল আমিনকে। এ নিয়ে ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ এক মহিলাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করলো। তবে প্রিজনভ্যান থেকে পালানো জঙ্গি সালেহীন ও বোমা মিজানকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তারা কি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে না দেশের ভেতর অবস্থান করছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। প্রিজনভ্যান থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনার ব্যাপারে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আজ শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্তারিত জানাতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজনভ্যানে গুলি ও বোমা ফাটিয়ে এবং এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে তিন আসামিকে (জঙ্গি রাকিব, বোমা মিজান ও সালেহীন) ছিনিয়ে নেয়া হয়। এদের মধ্যে রাকিব ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার ও পরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এদিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় অন্যতম আসামি জাকারিয়াকে ২০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জাকারিয়ার স্ত্রী স্বপ্না, ভাই ইউসুফকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জেএমবি সন্দেহে জামালপুর থেকে গ্রেফতার রাজু আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি ছিনতাই অভিযানে নেতৃত্ব দেন জঙ্গি আনোয়ার হোসেন ফারুক ও সফিকুল ইসলাম। ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রায় কোটি টাকার মত খরচ হয়। এই টাকার যোগান দেন ব্যবসায়ী আজমীর ও রাহাত। আজমীরের বাড়ি নোয়াখালীতে আর রাহাতের বাড়ি বরগুনায়। দু'জনই জেএমবির সঙ্গে জড়িত। আল আমিনের বাড়ি ত্রিশাল উপজেলার সউদকান্দা এবং সৈয়দ জিয়াউল ইসলাম জিতুর বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার কানপুর। জিতু এর আগেও র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। আসামি ছিনতাইয়ের জন্য ঘটনার কয়েকদিন আগে ভালুকায় একটি বাসা ভাড়া নেয়া হয়। আর ঘটনার আগেরদিন আল আমিন ঘটনাস্থল পরির্দশনও করেন।
গোয়েন্দা পুলিশের ঐ কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, অভিযানে জঙ্গিরা ছাড়াও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী গ্রুপ, যাদের সঙ্গে জেলখানায় পরিচয় তারাও অংশ নিয়েছিল। যারা ঘটনার আগেরদিন ভালুকার ভাড়া বাসায় অবস্থান নেন। এদের রাতে খাসির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জিতু জানিয়েছে, অভিযানের পরপরই তিনি টাঙ্গাইলে তার শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান নেন।
মামলা দায়ের ঃ অর্থের যোগানদাতাসহ গ্রেফতারকৃত চারজনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাতে রমনা থানায় তিনটি মামলা করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর আবুল বাশার। এজাহারে বলা হয়, হাতিরঝিল এলাকায় একটি প্রাইভেটকার থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৯ রাউন্ড গুলি, ৬টি ডেটোনেটর, দেড় কেজি বিস্ফোরক।
ভালুকা প্রতিনিধি কামরুজ্জামান মানিক জানান, গ্রেফতারকৃত জিতু ও আল আমিনের দেখানো মতে ভালুকার ঐ ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে গুলি, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও একটি মোটরসাইকেল (আসামি ছিনতাইয়ে ব্যবহূত)। ঐ বাসার মালিক কামরুল হাসান জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে বগুড়া জেলার নিরব মিয়া নামে (গেঞ্জি ব্যবসায়ী পরিচয়ে) এক ব্যক্তি বাসা ভাড়া নিয়েছিল। ভালুকা থানায় মামলা হয়েছে।