মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান বিপর্যয়ের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের ডানিকা ও পল উইকস অচেনা কোনো মানুষ নন। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রিস্টচার্চে ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় তাদের বড় ছেলে লিঙ্কনের জন্ম হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তারা যখন অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ করছিলেন তখন একটি গাড়ি দুর্ঘটনারও শিকার হয়েছিলেন এই দম্পতি।
তাই চলতি মাসের শুরুতে পল যখন মঙ্গোলিয়ার খনির কাজের জন্য বের হচ্ছিলেন তখন এই দম্পতি কিছু পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলো। যাতে করে কোনো বিপদ হলে তারা বুঝতে পারেন। খনির কাজে যাওয়ার সময় পল কখনো বিয়ের আংটি পড়তেন না। সেটা তিনি বাড়িতেই রেখে এসেছিলেন। মঙ্গোলিয়া যাওয়ার জন্য মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ৩৭০ ফ্লাইটে ভ্রমণ করছিলেন তিনি। নিখোঁজের পাঁচদিন পরও বিমানটির কোনো খোঁজ মিলেনি। বৃহস্পতিবার ডানিকা সিএনএনকে বলেন, পাঁচদিনের অপেক্ষাকে অনন্তকালের অপেক্ষা মনে হচ্ছে। প্লেনটি কোথায় গেছে তার বিন্দুমাত্র তথ্য আমাদের কাছে নেই। স্বামীর আংটি হাতে ডানিকা কাঁদতে কাঁদতে সিএনএনের প্রতিবেদককে বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই সংবাদ দেখছি কিন্তু বিমানের কোনো খোঁজ দেখছি না। আমাদের জন্য প্রতিটি মুহূর্তই কঠিন। মালয়েশিয়া থেকেও কোনো ফোন কল আসছে না যে, তারা কিছু খুঁজে পেয়েছে। উইকস প্রায়ই বলতো, সে সবচেয়ে চমত্কার স্বামী ও চমত্কার বাবা। সে সন্তানদের সঙ্গেই দিনের বেশি সময় পার করতো।
ডানিকার থেকে প্রায় পাঁচ হাজার মাইল দূরে বেইজিংয়ের ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে স্বামী মাও তুগই'র সংবাদ পাওয়ার জন্য উদ্বেগ নিয়ে প্রতীক্ষা করছেন হু জিয়ানকুয়ান। চিত্রকর মাও মালয়েশিয়ায় একটি প্রদর্শনীতে যোগ দিতে ২ মার্চ বিমানে উঠার আগে সর্বশেষ তাদের মধ্যে কথা হয়েছিলো। অনেক স্বজন হারাদের মতো হু'র কষ্টও হতাশায় বদলে গেছে। গত কয়েকদিনে তার স্বামীর কোনো খবর মিলেনি। অনুসন্ধান নিয়ে প্রায়ই বিভ্রান্তিকর খবর আসছে। বিমানের খোঁজে চালানো অনুসন্ধান অপেক্ষাকে আরো যন্ত্রণাদায়ক করে তুলেছে।
গত মঙ্গলবার নিখোঁজ অনেক চীনা যাত্রীর স্বজনরা কুয়ালালামপুর গেছে। কিন্তু হু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি ও তার মেয়ে বেইজিংয়েই থাকবেন। তার ভীতি ভাষাগত জটিলতার কারণে প্রকৃত পরিস্থিতি নাও বুঝতে পারেন তিনি।
কে এস নরেন্দ্রান ভারত থেকে সিএনএনকে বলেন, একই তথ্য দেখার জন্য কুয়ালালামপুর যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। স্ত্রী চন্দ্রিকা শর্মা ছিলেন ঐ নিখোঁজ বিমানে। তিনি বলেন, আমার চেন্নাইতেই থাকা ভালো। কারণ আমি আমার পরিবার ও বন্ধুদের মাঝেই রয়েছি। স্ত্রী শর্মা একটি সংগঠনের নির্বাহী সম্পাদক। তিনি মঙ্গোলিয়ায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার একটি সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। তার স্বামী নরেন্দ্রান আরো বলেন, অনুসন্ধানকারী কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্যই জানাচ্ছে না। তাদের কাছ থেকে খুব কমই সহায়তা পেয়েছি। আমাদের বিভিন্ন সাংবাদিক সম্মেলন ও গণমাধ্যমের সংবাদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
গত বুধবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক নিখোঁজ বিমানের যাত্রীর স্বজনদের ধৈর্য্য ধরার আহবান জানিয়ে বলেন, স্বজনদের বোঝা দরকার অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটেছে। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বিশ্ব সম্প্রদায়ও হারানো বিমানের যাত্রীদের জন্য দোয়া করেছে, স্বজনদের জন্য স্বস্তি কামনা করেছে। 'বিমান হারানোর পর থেকে আমি অপেক্ষা করছি, উদ্বিগ্ন রয়েছি। এখন আমি অলৌকিক কিছু আশা করছি। যেন তারা ফিরে আসে।' বললেন মাওয়ের স্ত্রী হু।