টেস্টের প্রথম দিনে দু' দলের মিলিয়ে ১১টি উইকেটের পতন ঘটল। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৪০ রানে অলআউট; জবাব দিতে নেমে শ্রীলঙ্কা ১৮ রান তুলতে ১ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। গল টেস্টের ব্যাটিং উত্সবের পর একেবারেই উল্টো চিত্র দেখছে কলম্বো। কিন্তু দিনশেষে আলোচনায় ব্যাট-বলের এই লড়াই তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। কলম্বো থেকে ঢাকা; সব জায়গাতেই আলোচনার মূল বিষয়—উইকেটের 'প্রতারণা' এবং আউটফিল্ডের 'ভুতুড়ে' আচরণ। ম্যাচের আগেই কিউরেটর জানিয়েছিলেন, উইকেট পেসবান্ধব হবে। সেই কথার ওপর ভরসা করে এবং উইকেটে ঘাস দেখে একদিন আগেই দু' দল বিরল ব্যতিক্রমভাবে তিন পেসার নিয়ে খেলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেললো। সকালে টসে গিয়েও উইকেটে সবুজের ভালোই উপস্থিতি দেখতে পেলেন দুই অধিনায়ক। ফলে টসে জিতে ম্যাথ্যুস বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন। মুশফিক বললেন, টসে জিতলে তিনিও বোলিং করতে চাইতেন।
এরপর খেলা শুরু হতেই দেখা গেল আসল মজা—উইকেটে কার্যত পেসারদের জন্য কিচ্ছু নেই। ব্যাটিং উইকেটেও প্রথম ঘন্টায় বল যে নড়াচড়া করে, তাও করল না এখানে। তাহলে বাংলাদেশ গল টেস্টের রান পাহাড় থেকে নেমে এসে কলম্বোর প্রথম ইনিংসে ২৪০ রানে অলআউট হয়ে গেল কী করে? কারণ কিউরেটর এবং দুই অধিনায়ককে তাজ্জব করে দিয়ে তথাকথিত পেসবান্ধব এই উইকেটে ৫ উইকেট নিয়ে নিলেন বাহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ!
হ্যাঁ, নুয়ান কুলাসেকেরাও ৩ উইকেট নিয়েছেন। তবে কৃতিত্ব বিবেচনায় হেরাথ যোজন ব্যবধানে এগিয়ে। বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম উইকেট, তামিম ইকবালকে ফিরিয়েছেন কুলাসেকেরা। এরপর আশরাফুল রানআউট। তিন নম্বর উইকেট, জহুরুল হলে এরেঙ্গার শিকার। এরপর মিডল অর্ডারের টানা চারটি উইকেট তুলে নিলেন হেরা। ফলে তাকেই 'ত্রাস' বলে মানতে হচ্ছে। কিন্তু এই মেনে নেয়ার মধ্যেও একটা 'ভ্রান্তি' থেকে যাচ্ছে। উইকেট পেসবান্ধব হয়নি, রঙ্গনা হেরাথ বেশ সুবিধা পেয়েছেন, এমনকি দিনের শেষ দিকে সোহাগ গাজীও ভালো বল করছিলেন; কিন্তু মজার ব্যাপার হল—স্পিনার বা পেসার কেউই সারাদিনে ব্যাটসম্যানদের আসল ত্রাস ছিলেন না। আসল ত্রাস ছিল ঘাস; আউটফিল্ডের ঘাস। কলম্বোতে আগের রাতে খুব বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টির ফলে আউটফিল্ড একটু ভারী হয়ে যাবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু দুই ওপেনার তামিম ও জহুরুল যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেন; তাকে অস্বাভাবিক বলতেই হচ্ছে। পুরো শক্তিতে করা কাভার ড্রাইভে বল গিয়ে বাউন্ডারির আগে আগে চুপচাপ স্থির হয়ে রইল; ফিল্ডার খানিক পরে এসে কুড়িয়ে ফেরত পাঠালেন। নিশ্চিত চার হয়ে গেছে ধরে নিয়ে এমন শটে এক রানও না নেয়ার ঘটনা ঘটল কয়েকবার। ফলে প্রথম সেশনে বাংলাদেশের স্কোরিং রেট রইল একেবারেই সেই আদিমযুগের টেস্ট ম্যাচের মতো; ওভার প্রতি ২ রানের সামান্য ওপরে। প্রথম সেশনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে বাউন্ডারি দেখা গেল মাত্র ২টি!
তামিম ইকবালের 'কামব্যাক'টা ভালো না হলেও আরেক ওপেনার জহুরুল শুরু থেকে একটা প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু ১২৯ বল খেলে তিনি আউট হওয়ার সময় নামের পাশে মাত্র ৩৩ রান। আশরাফুলও ১৬ রানে রানআউট হলেন ৪৬ বল খেলে। বাংলাদেশের ইনিংসের একমাত্র ফিফটি করা মোমিনুলও ৬৪ রান করলেন ৯৮ বলে। শুধু নাসির হোসেন (৪৮) ও সোহাগ গাজীর (৩২) সপ্তম উইকেটে ৫৯ রানই এলো তুলনামূলক দ্রুতগতিতে; প্রায় ওভার প্রতি তিন রান করে। এই ধীরগতির ব্যাটিংয়ের ফলে একটা সময় এমন আলোচনাও শুরু হল যে, আউটফিল্ডে ঘাস স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ বড়। এখন এটা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করে রেখেছেন, নাকি বৃষ্টিতে আরেক ভ্রান্তি তৈরি হয়েছে; কে জানে!