নিষ্পাপ হাসি, মায়াবী দুটো চোখ আর বিনয়ী কথাবার্তা শুনলে স্কুলছাত্র বলে ভুল হতে পারে। এমনকি যখন ব্যাট করতে নামেন, তখনো মনে হয় স্কুল ক্রিকেটের কোনো ম্যাচে খেলতে গিয়ে ভুলে টেস্ট মাঠে চলে এসেছেন।
এমন কৈশোরের ছাপ লেগে থাকা চেহারা নিয়েই টেস্ট ক্রিকেটে দিব্যি দাপট দেখাচ্ছেন মোমিনুল হক। অবশ্য মোমিনুল হক কাল সংবাদ সম্মেলনে আবারও মনে করিয়ে দিলেন, দাপট বলতে যা বোঝায়, তা তিনি দেখাতে পারছেন না। রান করার চেয়ে বরং সেট হয়ে আউট হয়ে যাওয়ায় নিজের ওপর ক্ষোভটা এখনো বেশি।
অনেকটা হঠাত্ করেই আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে চলে এসেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। মোটামুটি ভালোই অভিষেক হয়েছিল। এরপর এক গাদা তারকা খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতিতে পরীক্ষামূলকভাবে শ্রীলঙ্কা সফরের টেস্ট দলে নিয়ে আসা হলো। অনুশীলন ম্যাচে ৯৯ রানের ইনিংস খেলে একাদশে জায়গা করে নিলেন। গল টেস্টে অভিষেক ইনিংসে ৫৫ রান করে বোঝালেন, থাকতে এসেছেন। আর গতকাল পুরো বাংলাদেশ দল যখন হুমড়ি খেয়ে পড়ল; তখন একা রুখে দাঁড়িয়ে ৬৪ রানের এক ইনিংস খেললেন।
পুরো দল যখন ব্যর্থ হয়েছে, তখন ধরেই নেয়া যায় কঠিন এক উইকেটে প্রাণান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে মোমিনুলকে; কিন্তু মোমিনুল রায় দিলেন, উইকেট মোটেও কঠিন কিছু ছিল না, 'উইকেট ব্যাটিং করার জন্য ভালোই ছিল। আমরা কিছু ভুল করেছি। আর রানের জন্য তাড়াহুড়া করেছি। হ্যাঁ, হেরাথও ভালো বল করেছে।'
উইকেটে পেসারদের জন্য কিছু ছিল না, স্পিনার হেরাথ ভালো করলেন; তাহলে বাংলাদেশের তিন পেসারের সিদ্ধান্ত কী ভুল হয়ে গেল? মোমিনুল ম্যানেজমেন্টকে একটু রক্ষাই করতে চাইলেন দিনশেষের সংবাদ সম্মেলনে, 'আসলে উইকেটে ঘাস ছিল তো। তাই ভুল হতেই পারে। আর ওরাও কিন্তু একই কাজ করেছে। ফলে ভুলটা নিয়ে বেশি চিন্তা না করাই ভালো; যা হওয়ার হয়ে গেছে।'
নিজের ব্যাটিংয়ের ব্যাপারেও এই 'পাস্ট ইস পাস্ট' তত্ত্বে বিশ্বাস রাখছেন মোমিনুল। ৬৪ রান করে ফেলার পর কাল সম্ভব ছিল প্রথম সেঞ্চুরিটা তুলে নেয়ার; কিন্তু মোমিনুল বলছেন, তিনি সেঞ্চুরি নিয়ে ভাবছিলেনই না, 'আমার বড় ইনিংস খেলা উচিত ছিল। তাহলে আমাদের ইনিংসটা আরেকটু বড় হতে পারত। সেঞ্চুরি নিয়ে ভাবিনি। আমি ভেবেছিলাম, সেট হয়েছি যখন আরো অনেক সময় থাকতে হবে।'
তবে একটা ব্যাপার নিয়ে আফসোস আছে মোমিনুলের—আউটফিল্ড নিয়ে। বিস্ময়কর পরিমাণে ঘাসে ভরা ধীর গতির আউটফিল্ডের কারণে অন্তত এক শ রান কম হয়েছে বলে মনে করছেন মোমিনুল, 'আমরা প্রথম সেশনে একটু ধীরে খেলবো, এটা ঠিকই ছিল; কিন্তু বাউন্ডারি মারাটা খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল। বল যাচ্ছিলই না। আমার মনে হয়, আউটফিল্ড ঠিক থাকলে আমরা আরো শ খানেক রান বেশি করতাম।'
এখন এ নিয়ে আর ভেবে লাভ নেই। তাই সামনের দিকে তাকাতে চান মোমিনুল। আজ বোলারদের ওপর ভরসা নিয়ে মাঠে নামবেন। বলছেন, 'আমাদের বোলিং খারাপ না। আজই (কাল) একটা ব্রেক থ্রু পেয়েছি। আগামীকাল (আজ) ভালো বল করতে পারলে এই টেস্টে এখনো ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব।'