দৈনিক ইত্তেফাক গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছে যে, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান আর নেই। জাতিকে গভীর শোকে ভাসিয়ে দিয়ে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। তিনি এখন অনন্তলোকের বাসিন্দা। সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় নয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আজ বুধবার বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে নির্লোভ, নিরহঙ্কারী এই কীর্তিমান পুরুষ ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি...রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তার মৃত্যুর সংবাদে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।
দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একটি বিশেষ বিমানে আগামীকাল দুপুর ১২টায় সিঙ্গাপুর থেকে রাষ্ট্রপতির মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।
এদিকে রাষ্ট্রপতির মৃত্যু সংবাদ শোনার পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। রাজনৈতিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অভিভাবককে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে বাবা-মা-ভাইসহ সবাইকে হারানোর পর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানই ছিলেন তার পারিবারিক অভিভাবক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধানতম সহকর্মী হয়ে যে কয়েকজন কীর্তিমান পুরুষ স্বাধিকার, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা আর মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রভাগ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে জিল্লুর রহমান অন্যতম। একজন স্বেচ্ছাসেবক হয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করে দীর্ঘ ৬২ বছরের রাজনৈতিক পথচলায় দেশের ১৯তম রাষ্টপতি হয়েছিলেন জিল্লুর রহমান। তিনি ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব পালনের মধ্যে অসুস্থতার কারণে কয়েকবার দেশে-বিদেশের হাসপাতালে চিকিত্সাও নেন তিনি। গত ডিসেম্বর মাসেও যুক্তরাজ্যে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সর্বশেষ গত ৯ মার্চ রাতে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে জিল্লুর রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিত্সকদের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিত্সার জন্য তাকে গত ১০ মার্চ রাতে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার চিকিত্সা শুরু হয়।
রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা স্পিকার অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির (এ) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ, জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।