পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় অতিদরিদ্রদের কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দকৃত আড়াই কোটি টাকার আদৌ কোন কাজ হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকাশ, কাজের সামান্য কিছু আলামত রেখে সিংহভাগ টাকাই প্রকল্প সভাপতি, প্রকল্প কর্মকর্তা, ওই অফিসের সুপার ভাইজার, ট্যাগ অফিসার, সরকারদলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা, একে অপরের যোগসাজশে লোপাট করেছেন।
বাউফল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরকার ১২-১৩ অর্থ বছরে বাউফলে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রথম পর্যায়ে ৪০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। সে অনুযায়ী ১৪টি ইউনিয়নের ১১০টি প্রকল্পের আওতায় সরকার মোট ২ কোটি ৫০ লাখ ৩২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাস্তা পূনঃনির্মাণ ও সংস্কার। ২০১২ সালের অক্টোবরে প্রকল্পের কাজ শুরু করে ২০১২ ডিসেম্বরে শেষ করার কথা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩ হাজার ৫৭৬ জন শ্রমিক সপ্তাহে ৫ দিন ১৭৫ টাকা হারে ৩৫ ঘনফুট করে মাটি কাটবে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে বিধি অনুযায়ী কোন কোন প্রকল্পে আদৌ কাজ না করে আবার কোন কোন প্রকল্পে কাজের কিছু নমুনা রেখে প্রায় সব টাকা লোপাট করা হয়েছে। সরেজমিনে দাশপাড়া, কালাইয়া নাজিরপুর, কাছিপাড়া, কনকদিয়া ও ধূলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি প্রকল্প পরিদর্শন করে দেখা গেছে, আদৌ কোন কাজ হয়নি। অথচ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত সমুদয় টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দাশপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পাঁচবাড়ির পশ্চিম পার্শ্বের পাকা রাস্তা থেকে উত্তরে হিন্দু পাড়া হয়ে শাহজাহান সিকদার বাড়ির দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ও পুনঃনির্মাণের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ওই রাস্তা পুনঃনির্মাণতো দূরের কথা এক চাকা মাটিও ফেলা হয়নি। রাস্তাটি আগেও যে রকম ছিল এখনও সেই রকমই আছে।
এ ছাড়াও কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা ব্রিজের গোড়া থেকে স্লুইজ গেট ভায়া প্যাদা বাড়ি হয়ে নসু চৌকিদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কোন কাজ করা হয়নি। উত্তর নাজিরপুর আজিজ খানের বাড়ির সামনে থেকে পশ্চিমে অজু হাওলাদারের বাড়ি হয়ে মোচন হাওলাদারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও ওই রাস্তায় কাজের আলামত হিসেবে অনুমান ২০/২৫ হাজার টাকার কাজ করে বাকি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এভাবে কাজ না করে প্রায় ১৪টি ইউনিয়নের সব প্রকল্পের টাকা লোপাট করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে প্রকল্পের কাজ তদারকিতে (ট্যাগ অফিসার হিসাবে) দায়িত্বরত কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্প, কাগজে-কলমে প্রকল্প আছে, পেমেন্ট আছে, বাস্তবে কাজ নেই। এ টাকার ভাগ বিভিন্ন টেবিল পর্যন্ত গড়ায় বলে ট্যাগ অফিসাররা জানান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাউফলের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসাইন বলেন, চল্লিশ দিনের কর্মসূচির কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদেকুর রহমান বলেন, আমার জানা মতে এ প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি।