We use cookies to tailor your experience, measure site performance and present relevant advertisements. By clicking the 'ok' button, you agree that cookies can be placed in accordance with our
Privacy Policy.
দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধিতে শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা
সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ, চট্টগ্রাম অফিস
দেশের গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে গ্যাসের সাথে উপজাত (বাইপ্রোডাক্ট) হিসাবে উত্তোলিত কনডেনসেট ব্যবহারে এখনো যথাযথ নীতিমালা প্রণীত না হওয়ায় এই তরল জ্বালানি জাতীয় স্বার্থে ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা ত্রুটিবিচ্যুতি থাকার অভিযোগ উঠছে। প্রায় এক যুগ আগে বিষয়টি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক কথাবার্তা হয়। এখনো কথা হচ্ছে কনডেনসেট ব্যবহারে দুর্বল নীতিমালা নিয়ে। দুর্বল নীতিমালা এই তরল জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহারে অন্তরায় সৃষ্টি করে রেখেছে। পাশাপাশি পাচার ও চুরি বন্ধের নামে দফায় দফায় কনডেনসেটের মূল্য বৃদ্ধি প্রকারান্তরে এর উপর নির্ভরশীল বিভিন্ন শিল্পে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলেও চট্টগ্রামের কয়েকটি সূত্র আশংকা ব্যক্ত করেছে।
চট্টগ্রামস্থ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, গত জানুয়ারিতে আরো এক দফা দাম বাড়ানোর পর বর্তমানে ১ লিটার কনডেনসেটের দাম ৫০ টাকার উপরে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, আশুগঞ্জ থেকে নৌপথে এবং অন্যান্য রুটে চট্টগ্রামে কনডেনসেট পরিবহন করার সময় বেশ কিছু দুর্বৃত্ত চক্র কনডেনসেট চুরি ও পাচার করছে। বিষয়টি অনেক পুরনো হলেও এ যাবত্ সমাধান হয়নি। এখন সেখান থেকে ডিজেল-অকটেন মনে করে যারা জ্বালানি কিনছে তাদের অনেকেই হয়তো জানে না সেইসব জ্বালানিতে রয়েছে ভেজাল হিসাবে কনডেনসেট মেশানো, যা গাড়ির ইঞ্জিনের আয়ু দ্রুত নষ্ট করে দিচ্ছে। এছাড়া দেশে কনডেনসেটের বহুমুখী অর্থনেতিক ব্যবহার নিয়ে এ যাবত্ কোনো গবেষণা হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর ইত্তেফাককে বলেন, তরল কনডেনসেট এক স্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তর বা পরিবহন পর্যায়ে পাচার ও চুরি হচ্ছে। এরকম অভিযোগ তার কাছে রয়েছে। তিনি জানান, অকটেনের সাথে মিশিয়ে কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে সরাসরি কনডেনসেট যানবাহনে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহূত হওয়ার অভিযোগও তার কাছে এসেছে। এসব কাজ কিছু কিছু ফিলিং স্টেশনের মাধ্যমেই হচ্ছে। কনডেনসেটের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্যাসের সাথে উপজাত হিসাবে পাওয়া গেলেও গ্যাসফিল্ডের প্রক্রিয়াকরণসহ নানা খরচ মেটানোর জন্য কনডেনেসেটের মূল্য সংযোজনের প্রয়োজন পড়ছে। তবে এর থেকে সরকার ডিভিডেন্ডসহ নানা ধরনের লভ্যাংশ পেয়ে থাকে বলেও তিনি তথ্য প্রকাশ করেন। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জানান, দেশের সক্রিয় গ্যাসফিল্ডগুলোর কূপ থেকে বছরে প্রায় ৩ লাখ টন কনডেনসেট পাওয়া যাচ্ছে। তার মধ্যে বিপিসি ১ লাখ টন কনডেনসেট দেশের ৬টি বেসরকারি রিফাইনারিকে ডিজেল, অকটেন ও অন্যান্য পরিশোধিত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য বানানোর জন্য বিপণন কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে দিয়ে থাকে। পরিশোধিত জ্বালানি বিপিসিই কিনে নেয়। বাদবাকি ২ লাখ টন কনডেনসেট পরিশোধন করে ডিজেল, পেট্রোল উত্পাদন করে বিপিসি'র অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)।
বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) সূত্র জানায়, গত জানুয়ারিতে দেশের সক্রিয় ৫টি গ্যাসফিল্ডের ৪০টি কূপের মধ্যে ৩২টি কূপ থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছিলো। দৈনিক গ্যাস উত্পাদনের পরিমাণ ছিলো ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। একই সাথে উপজাত হিসাবে কনডেনসেট উত্পাদন হচ্ছিলো দৈনিক ৪৯১ বিবিএল (ব্যারেল ভলিউম মেজারমেন্ট)।
বিপিসি'র একটি সূত্র জানায় দেশের ৭টি গ্যাস ক্ষেত্র থেকে দৈনিক ১ হাজার ৩২৫ বিবিএল কনডেনসেট উত্তোলন করা সম্ভব। দেশের ১২টি গ্যাসফিল্ডে প্রায় ৬৪ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন বিবিএল উত্তোলনযোগ্য কনডেনসেটের মজুদ রয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। বিপিসি সূত্রটি আরো জানায়, ৬ ইঞ্চি ডায়ামিটারের ১৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনে কৈলাশটিলা স্টোরেজ ট্যাংক থেকে কনডেনসেট আশুগঞ্জ টার্মিনালে আনা হয়। সেখান থেকে নৌপথে বার্জ বা ট্যাংকারে করে পরিশোধনের জন্য চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আনা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারির একজন কর্মকর্তা জানান, ইআরএল-এর মূল প্ল্যান্টে কনডেনসেট পরিশোধন করা সম্ভব নয়। ৪/৫ বছর আগে বিপিসি ইআরএল-এ কনডেনসেট পরিশোধনের জন্য একটি প্ল্যান্টকে কনডেনসেট রিফাইনারিতে রূপান্তর করে নিয়েছে। কারণ অপরিশোধিত জ্বালানি আর কনডেনসেট এক জিনিস নয়। কনডেনসেট হচ্ছে বর্ণহীন হালকা হলুদাভ তরল হাইড্রোকার্বন। প্রাকৃতিক গ্যাসের সাথে সেটা ভূগর্ভ থেকে বাই-প্রোডাক্ট হিসাবে উত্তোলিত হয়। উত্তোলনের পর চাপ হরাস পেলে কনডেনসেট তরল রূপ ধারণ করে। তবে কনডেনসেট সরাসরি যানবাহনে ব্যবহার করা হলে ইঞ্জিনের শক্তি ও মেয়াদ দ্রুত হরাস পায়।