সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো নতুন বছর। বাংলা ১৪২১ সাল। রাজধানীর সব বয়সের মানুষ নতুন পোশাক পড়ে নতুন বছরকে বরণের জন্য বিপুল উৎসাহে বের হয়ে এসেছে রাজপথে। রমনা বটমূল ও চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমী কেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিশু, কিশোর, তরুণ-তরুণীর নেমেছে ঢল।
নতুনের আবাহনে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই চিরায়ত সুর অনুরণন তুলবে প্রতিটি বাঙালির হূদয়ে- 'এসো হে, বৈশাখ এসো এসো/ তাপস নিঃশ্বাস বায়ে, মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক'/।
আর ছায়ানট আয়োজিত বর্ষ আবাহনের অনুষ্ঠান ঢাকাবাসীর বৈশাখ উদযাপনে নিয়ে এসেছে নতুন মাত্রা। ৫০ বছর ধরে আয়োজিত তাদের এ অনুষ্ঠানের আবেদন এখনো পুরো দেশবাসীর কাছে সমানভাবেই ক্রিয়াশীল। আজ ভোর ছয়টা থেকেই রমনার বটমূলে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান।
এছাড়া বাঙালির চিরায়িত রূপ 'বাংলার রূপ রস গন্ধ ও ঢংকে' চিত্রায়িত করতে নববর্ষের এই দিনে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় আয়োজন করা হয় নতুন বর্ষকে বরণ করে নেয়ার বৈশাখী অনুষ্ঠান। ইত্তেফাকের চোখে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাঠানো বৈশাখী বরণ তথ্য চিত্র।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, আজ সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বর থেকে বিভিন্ন সংগঠনের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্কে গিয়ে শেষ হয়। সকাল আটটার দিকে ড. সামসুজ্জোহা পার্কে 'মউক' সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে শিল্পীরা নব বর বধু সাজ, বানর খেলা, কিষান-কিষানী সাজ ডিসপ্লে প্রদর্শন করে। এদিকে বাঙ্গালিয়া মনের ঢংকে উপস্থাপন করতে শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্কে লাঠি খেলা পরিবেশন করা হয়। জেলা শিশু একাডেমিতে বৈশাখ উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু আনন্দ মেলা চলছে।
কাহারোল (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, বৈশাখে বাংলা ঐতিহ্যের বাঙালিয়ানা স্বাদের রস নিতে সকাল নয়টায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইলিশ পান্তা ভাতের আয়োজন করা হয়। পরে উপজেলা পরিষদ হতে র্যালী বের করা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশীদ চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, শিক্ষা অফিসার আশরাফুল হক প্রধান র্যালীতে নেতৃত্ব দেন। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচির মধ্যে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বৈশাখের গান ও আদিবাসীদের নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইলে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আনন্দ শোভাযাত্রা, পান্থা ইলিশ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, আলোচনা সভা, নাটক, নৃত্যানুষ্ঠান, সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলা বর্ষকে বরণ করে নেয়া হয়। নড়াইলে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সকালে বৈশাখী বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটি সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চ থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে বৈশাখের চেতনা ও শক্তির ঐক্যের প্রতীক হিসাবে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সুলতান মঞ্চ এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে পৃথকভাবে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
এসব কর্মসূচিতে জেলা প্রশাসক আ. গাফফার খান, পুলিশ সুপার মো. মনির হোসেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক এডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোসসহ বিভিন্ন শ্রেণির পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বাগেরহাট স্টেডিয়ামে বেলুন, ফেস্টুন উড়িয়ে বর্ষবরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব ডা. মোজাম্মেল হোসেন। এ সময় মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাড.মীর শওকাত আলী বাদশা, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি হ্যাপী বড়াল, জেলা প্রশাসক মূ. শুকুর আলী, পুলিশ সুপার মো. নিজামুল হক মোল্যা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্বাধীনতা উদ্যানের দক্ষিণ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বাগেরহাট শহরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। এ জেলায় বর্ষবরণ উপলক্ষে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। মেলা উপলক্ষে প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্বাধীনতা উদ্যানে শহরের ৩৬টি সাংস্কৃতিক সংগঠন সংগীত পরিবেশন করবে।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, সকাল ১০টায় পুরাতন কালেক্টরেট ভবন হতে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভা যাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বাঙালি ঐতিহ্যের চিরায়িত রূপে শোভাযাত্রায় গরুর গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রামীণ ঐতিহ্যের চিত্র তুলে ধরা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাঙ্গালিয়ানার স্বাদ মুখরোচক পান্তা ইলিশ খাওয়ার আয়োজন করা হয় পুরাতন কালেক্টরেট চত্বরে। এ ছাড়াও শহরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সামাজিক- সাংস্কৃতি সংগঠনগুলো পৃথক র্যালী বের করে। বসেছে শহরের বিভিন্ন জায়গায় বৈশাখী মেলা। শোভাযাত্রায় জাতীয় সংসদের হুইপ আলহাজ্ব শহীদুজ্জামান সরকার এমপি, মো. আব্দুল মালেক এমপি, জেলা পরিষদের প্রশাসক এ্যাড. একেএম ফজলে রাব্বি বকু, জেলা প্রশাসক এনামুল হক, পুলিশ সুপার কাইয়ুমুজ্জামান খানসহ সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশে নেয়। চেতনা শক্তি ও ঐক্যের মেরুকরণে সকালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা মুক্ত মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া সকাল থেকে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন পরিষদ নওগাঁ শাখার উদ্যোগে মুক্তির মোড়স্থ সমবায় চত্বরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সকাল সাড়ে ছয়টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনে আয়োজনে বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়। র্যালীটি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে গিয়ে শেষ হয়। র্যালীতে সাতক্ষীরা ২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুত্ফুল্লাহ, সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, ৩৮ বিজিবির উপ-অধিনায়ক লে. ক. শাহাজান সিরাজ, জেলা পরিষদের প্রশাসক মুনছুর আহমেদ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবুসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক , রাজনৈতিক , সংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন র্যালীতে অংশ গ্রহণ করে। পরে, জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করা হয়। একই সাথে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান থাকছে মেলার তিন দিনে। অপরদিকে, সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা প্রশাসন, সাতক্ষীরা প্রেসকাব, জেলা আইনজীবী সমিতি, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ কর্মসূচি পালন করছে।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, নাগেশ্বরীতে বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব বাংলা বর্ষবরণে নানা আয়োজনে বেরিয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বসেছে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। সকালে মুক্ত মঞ্চে পায়ড়া উড়িয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম সরকার। 'প্রতীক' আয়োজিত এ শোভাযাত্রায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মো. রহমতুল্লা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা জি আর এম মোকছেদুর রহমান ও স্থানীয় সব শ্রেণী ও বয়সের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। দিনব্যাপী চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নের প্রায় ২৫ স্থানে আয়োজন করা হয়েছে বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলার। চিরায়িত বাংলার রূপে এসব উৎসবে থাকছে লাঠি, হাডু-ডু, দাড়িয়াবান্দা, বৌছি, ঘুড়ি উড়ানোসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা।
স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, স্বরূপকাঠিতে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, পান্তা ইলিশ, বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইন্দুরহাট কালিবাড়ি, স¦রূপকাঠি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে বসছে বৈশাখী মেলা। ব্যবসায়ীরা আয়োজন করেছে শুভ হালখাতা মহরত অনুষ্ঠান।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সকাল সাড়ে সাতটায় আবাহণ সংগীতের মধ্য দিয়ে দিনটির সূচনা। অনুষ্ঠানে শিল্পকলা একাডেমী, শিশুএকাডেমী পাবলিক লাইব্রেরি, ইসলামী ফাউন্ডেশন, হামদর্দসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন স্কুল এবং কলেজের নানা বয়সী মানুষ রং বেরঙের পোষাক পরে বর্ণিল সাজে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় যোগ দেয়। এছাড় পহেলা বৈশাখের এই দিনে আবাহন, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলাচনাসভার আয়োজন করে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা। দিনটিতে হাসপাতালে ও কারাগারে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হয়।
দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, সকাল নয়টায় উপজেলা প্রশাসন ও নবাবগঞ্জ থিয়েটারের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি থিয়েটার কার্যালয় থেকে শুরু করে কায়কোবাদ চত্বর হয়ে দোহার নবাবগঞ্জ কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রাতে বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাছ নৃত্য, ঘোড়ায় রাজকুমার, রাজা-রাণী, বাউল সাধকসহ হাতে তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্ম তুলে ধরা হয়। শোভাযাত্রা শেষে কলেজ ক্যাম্পাসের বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, দোহার-নবাবগঞ্জ ঢাকা-১ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহসিন রহমান আকবর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মরিয়ম জালাল শিমু, দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজ অধ্যক্ষ মানবেন্দ্র দত্ত প্রমুখ।
সন্ধ্যায় নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় মাঠে নবাবগঞ্জ ললিত কলা একাডেমীর আয়োজনে দুই দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে নাচ, গান, ফ্যাশন-শো ও ইছামতি নদীর উপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।
কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, সকালে নেচে গেয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে হাসি আর আনন্দে নতুন বছরের মঙ্গলযাত্রায় শামিল হন বিভিন্ন স্তরের নারী, পুরুষ ও শিশুরা। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে সাদা-লাল রঙের বাহারি পোশাক পরে বেরিয়ে পড়ে। বাংলার লোকজ ঢংয়ে দিনব্যাপী গ্রামীণ খেলা, গম্ভীরা, সংগীত, নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়াও আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দিনটি উপলক্ষে হাসপাতাল ও এতিম খানায় সকাল থেকে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
নাগরপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, সকালে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন, নাগরপুর নজরুল সেনা ও নাগরপুর সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদ আনন্দ র্যালি বের করে। র্যালি শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দিনটি উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলমগীর হুছাইনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিবেসে উপস্থিত ছিলেন, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব খন্দকার আব্দুল বাতেন এমপি। এছাড়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুস ছামাদ দুলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশরাফ টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মধুখালী (ফরিদপুর) সংবাদদাতা জানান, বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলা উদযাপন পরিষদ ৯ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করে। মধুখালীর এ উত্সব বৃহত্তর ফরিদপুরের সর্ববৃহত্ উত্সব বলে পরিচিত। বর্ষবরণ উত্সবকে ঘিরে সকাল আটটায় এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে বাঁশি কাশি ঢোল ডগর নিয়ে র্যালীতে অংশ নেয়। এ র্যালীতে উপজেলা প্রশাসন অংশ নেয়। প্রধান অতিথি ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুর রহমান বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন। প্রতিদিন সাংস্কৃতিক মঞ্চে থাকছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালা। মেলায় প্রায় ২০০টি বিভিন্ন ধরনের ক্রয়-বিক্রয়ের স্টল রয়েছে। থাকছে নাগর দোলা, সার্কাসসহ আরো অনেক আয়োজন। বেলা নয়টায় মধুখালী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এমপি আব্দুর রহমানের বৈশাখী আড্ডায় চলে বিভিন্ন শিল্পির সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৃত্য পরিবেশন এবং পান্তা ইলিশ খাওয়ার প্রতিযোগিতা।
পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাও) সংবাদদাতা জানান, সকালে উপজেলা প্রশাসন ও পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ পান্ত-ইলিশ উত্সব আয়োজন করে। পরে বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা প্রশাসন,পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ, পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বণিক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বেসরকারি সংস্থা ইএসডিও, উপজেলা ক্রিড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দ র্যালীতে অংশ গ্রহণ করে। এ ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে আবালবৃদ্ধবনিতা চিরায়িত রং খেলায় মেতে থাকতে দেখা যায়। এদিকে 'পীরগঞ্জ পাঠচক্র' নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে দুপুরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-১ দোহার-নবাবগঞ্জ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, বাঙালি জাতি নানা বর্ণের কিন্তু এক মনা। জাতির এই বন্ধন অটুট থাকুক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরল করিম ভূইয়ার সভাপতিত্বে তিন দিনব্যাপী বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়ার লালন সংগীত একাডেমি ও দোহার শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের গান ও নৃত্য পরিবেশনের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বশির উদ্দিন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহসান খোকন সিকদার, বিলাশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা প্রমুখ।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ বরণ করা হয়েছে। ভোরে ঐতিহাসিক শিরীষতলায় ফুল ছিটিয়ে বছরের প্রথম সূর্যকে বরণ করে বর্ণমালা খেলাঘর আসর। পরে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন এমপি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির, এমপি কেয়া চৌধুরী, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শহীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়া শহরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আবহমান বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। বৈশাখী মেলায় বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পান্ত ভাত ও ইলিশ মাছ ভাজার আয়োজন ছিল প্রধান আকর্ষণ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে কালীবাড়ীতে বসে বারুণী মেলা।
মহেশখালী (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় বিপুল উত্সাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বৈশাখকে বরণ করে নেয় স্থানীয়রা। বৈশাখের সাজে সকাল আটটায় বণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়। এতে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, উপজেলা নিবার্হী অফিসার আনোয়ারুল নাসের, মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ডা. নুরুল আমিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার পাশাম সাধারণ সম্পাদক এম আজিজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান জহির উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রী এবং বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। অনুষ্ঠান শেষে চলে পান্তা ইলিশের বাঙ্গালিয়ানা রসনাভোজ। এছাড়া দুপুর একটার পর থেকে স্থানীয় ও অতিথি শিল্পীদের সমন্বয়ে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।