রবিবার রাতে ( ১৩ এপ্রিল) রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে এ কর্মবিরতি শুরু হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন হাসপাতালের বহির্বিভাগের রোগীরা। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি অনেকেই হাসপাতাল থেকে ফিরে যাচ্ছেন। কর্মবিরতির পাশাপাশি চিকিৎসকরা আজ শাহবাগের রাস্তা অবরোধ করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
তবে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতিতে থাকবেন। তবে এসময় জরুরী বিভাগ ( ইমার্জেন্সি) , সিসিইউ ও আইসিউতে চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক থাকবে।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক নাজমুন নাহার আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা লিখিতভাবে অভিযোগটি ডিএমপি বেনজীর আহমেদের কাছে দিয়েছি। তাকে বলেছি এক পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসকদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ কমিশনার দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। তবে জরুরী বিভাগের চিকিৎসাসহ হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা সেবা চলছে। শুধু নতুন রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। তবে আগামীকাল বুধবার থেকে সকল কার্যক্রম পুরোদমে চলবে বলেও তিনি ( মহাপরিচালক) আশা প্রকাশ করেন।
অপরদিকে মৃত্যু হওয়া রোগী সিরাজুল ইসলামের মেয়ে ফারহানা নাসরিন দুপুরে জাতীয় প্রেসকাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার বাবাকে ( সিরাজুল ইসলাম) গত ৯ এপ্রিল রাতে ভর্তি করেন( ১৩২ নং ওয়ার্ডের ১৩৩১ বেডে)। রবিবার চারটার দিকে তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। কর্তব্যরত ডাক্তারকে ডাকলে সাড়ে চারটার দিকে কেবল অক্সিজেন নল দিয়ে চলে যান। পরববর্তীতে বাবার অবস্থার চরম অবনতি ঘটে। ডাক্তার ডাকা হলেও তারা আসেননি। পরবর্তীতে আর্র্টিফিশিয়ালি অক্সিজেন পাম্প করার পরপরই বাবা মারা যান এবং মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে ডাক্তারদের অবহেলা ও ভুলের কারণে। পরবর্তীতে সকালে আজ মঙ্গলবার প্রেস মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি, ' আমরা হাসপাতাল ভাংচুর ও ডাক্তারদের মারধর করেছি। যা সঠিক নয়।
বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকদের কর্মবিরতি সম্পর্কে ফারহানা নাসরিন বলেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ থেকে বাঁচতে অভিনব নাটকে মেতেছেন বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নে জবাবে নাসরিন বলেন, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আমার চাচা (বাবার ফুফাতো ভাই)। লাশ নেয়ার মতো কোনো অভিভাবক না থাকায় চাচা এসেছিলেন। এ সময় চাচার সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। তারা ভাংচুর বা কোনো চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করেননি। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, আমার চাচার ইন্ধনে হাসপাতালে অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাসম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক আনেয়ার ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর পর একজন পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে হাসপাতাল ভাংচুর ( ১৪ তলায় ) ও তাকেসহ আরও দু'জন চিকিৎসককে ( কল্যান দেবনাথ ও শামীমা আক্তার) মারধর করেন। এসময় প্রাণ ভয়ে চিকিৎসক শামীমা আক্তার বাথরুমে আশ্রয় নেয়। কিন্তু হামলাকারীরা বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে তাকে লাঞ্ছিত করে। আর তাকে রক্ষা করতে গিয়ে হামলার শিকার হন চিকিৎসক ফিরোজ আমিন।
তিনি আরও বলেন, বুধবার সকাল ১০টার দিকে সার্বিক অবস্থা নিয়ে চিকিৎসকদের নিয়ে মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক হবে।
তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদুর রহমান বলেন, রোগী সিরাজুল ইসলাম তার মামাতো ভাই। তার মৃত্যুর কথা শুনে তিনি রাত ৯টার দিকে তিনি বারডেম হাসপাতালে যান। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিল রোগী সিরাজুল ইসলামের ছেলে ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধু বান্ধব। তারা চিকিৎসকের অবহেলা মৃত্যু হওয়ায় কিছুটা ক্ষীপ্ত ছিল। তবে ভাংচুরের মত কোন ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় রমনা ও শাহবাগ থানার পুলিশ সেখানে উপস্থিত ছিল। মাসুদুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে এটা মিথ্যা।
রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শিবলী নোমান জানান, বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকরা আজ সকাল ১০টা থেকে ১১ পর্যন্ত রাস্তা দখল করে রাখেন। শাহবাগ এলাকায় এ সময় যানচলাচল বন্ধ থাকলেও কোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।