জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল শুনানি শেষ হয়েছে। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার আপিলের ওপর উভয় পক্ষরে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। তবে কবে রায় ঘোষণা করা হবে কাল এ বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত পাওয়া যেতে পারে।
এদিকে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা মামলার নথি তলবের বিষয়ে আসামি ও রাষ্ট্রপরে পৃথক দুটি আবেদনের ওপর কাল বুধবার আদেশ দেবে আপিল বিভাগ। ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার বিচার চেয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালে পিরোজপুরে যে মামলা করেছিল সেই মামলার চার্জশিট জমা দিয়েছে আসামি পক্ষ। মমতাজ বেগমের মামলার চার্জশিট বিবেচনায় নেয়া এবং পিরোজপুর থেকে ওই মামলার জিআর বই তলবের আবেদন করেন আসামি পক্ষ। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষ ১৯৭২ সালে দালাল আইনে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্টার বই (নথি) তলবের আবেদন করেছেন।
আসামি পরে দাবি, এ ঘটনায় ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী ১৯৭২ সালে পিরোজপুর থানায় যে মামলা দায়ের করেছিলেন সেখানে সাঈদীকে আসামি করা হয়নি। এ মামলার চার্জশিটেও তার নাম নেই। এ মামলার এজহার এবং চার্জশিটের ফটোকপিও আদালতে দাখিল করে আসমি পক্ষ। তবে দাখিল করা এজহার ও চার্জশিটের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই বলে দাবি করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, যে এজহার ও চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে তা জাল ও ভুয়া। এসব প্রশ্নের জবাবে সাঈদীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে বলেন, আপনারা (আদালত) মামলার রেকর্ড তলব করেন। রেকর্ড তলব করলেই বুঝা যাবে কোন এজাহার ও চার্জশীট হয়েছিল কি না? আপনারা গোড়ায় হাত দিন। গোড়ায় হাত দিতে সমস্যা কোথায়? খন্দকার মাহবুব হোসেন স্কাইপ সংলাপসহ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কিছু কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, এ ট্রাইব্যুনাল একটি পক্ষপাতমূলক আদালত। সাঈদীর মামলাটিকে ঐতিহাসিক মামলা উল্লেখ করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে তিনি ন্যায় বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, ৪০ বছর পরে শুরু হওয়া এ মামলা একদিন দেশে ইতিহাস হয়ে থাকবে।
অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে মাওলানা সাঈদীকে নির্দোষ দাবি করে তার মুক্তি দাবি করেন। অপরদিকে সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রাখার আবেদন জানান এটর্নি জেনারেল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসি দেয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ২০টি অভিযোগের মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিশাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়ার দু'টি অভিযোগে সাঈদীকে এ দণ্ড দেয়া হয়। তবে আরো ছয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেও এগুলোতে কোন দণ্ড দেয়নি ট্রাইব্যুনাল। এই প্রমাণিত অভিযোগগুলেতে দণ্ড দেয়ার আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির রায় বাতিল চেয়ে আপিল করেন সাঈদী। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।