বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা সায়াদ ইবনে মমতাজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিক্ষক সমিতির দাবির মুখে অবশেষে ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা এবং আশরাফুল হক হলের প্রভোস্ট ও দুই হাউজ টিউটর পদত্যাগ করেছেন। আজ মঙ্গলবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। এদিকে শিক্ষকদের বেশিরভাগ দাবি পূরণ হওয়ায় আজ সাধারণ সভা শেষে আগামীকাল বুধবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। এছাড়া শর্ত সাপেক্ষে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আজ থেকে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছে।
জানা যায়, সায়াদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিক্ষক সমিতির দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. সুলতান উদ্দিন ভূঞা এবং আশরাফুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম ও ওই হলের দুই হাউজ টিউটর কামরুল হাছান ও ফুয়াদ হাসান মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে পদত্যাগ করেছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুল খালেক বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া ইতোপূর্বে ছাত্র বিষয়ক বিভাগের অফিসার-অন-স্পেশাল ডিউটি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও সহকারী প্রক্টর মো. মনিরুজ্জামান একই ঘটনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন। রেজিস্ট্রার আবদুল খালেক পদত্যাগের বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অধিকতর তদন্তের জন্য আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. এটিএম জিয়াউদ্দিনকে প্রধান করে পুনরায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন অধ্যাপক ড. মনোরঞ্জন দাস, অধ্যাপক ড. আবদুল মোমেন মিয়া, অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান ও একজন সহকারি প্রক্টরকে সদস্য-সচিব করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে ক্যাম্পাসে সর্বিক নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এ টাস্কফোর্স আগামী নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং প্রতি ২ মাস পর কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন জমা দেবে। গঠিত এ টাস্কফোর্সে পদাধিকার বলে ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রধান ও প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহবায় সদস্য-সচিব হিসেবে থাকবেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষক সমিতির ৫ ঘন্টাব্যাপী সাধারণ সভা:
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে আজ সকাল ১১টার দিকে একটি সাধারণ সভা করে। শিক্ষক সমিতি গত বুধবার আরেকটি সভার মাধ্যমে ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর ও আশরাফুল হক হলের প্রভোস্ট এর পদত্যাগ এবং সায়াদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় অধিকতর তদন্তের জন্য পুনরায় তদন্ত কমিটি গঠনসহ কয়েক দফা দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। দীর্ঘ ৫ ঘন্টা সভার পর বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ আগামীকাল (বুধবার) থেকে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেন।
সভা শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, আমাদের (শিক্ষকদের) দাবির অধিকাংশ পূরণ হওয়ায় শিক্ষকবৃন্দ বুধবার থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা সাপেক্ষে ক্লাস-পরীক্ষা নেবে। হত্যাকান্ডের সু্ষ্ঠু বিচার ও প্রক্টরিয়াল বডির সকল সদস্যের পদত্যাগ বিষয়ে দাবি অব্যাহত থাকবে।
শর্ত সাপেক্ষে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের :
এদিকে সায়াদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলের বিচার ও ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত ৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাখ্যান করে ঘটনায় জড়িত সকলকে সনাক্ত ও বহিষ্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। আল্টিমেটাম এর শেষ দিনে আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারক বিজয়'৭১ এর পাদদেশে আয়োজিত সমাবেশে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, শর্ত সাপেক্ষে বুধবার থেকে ক্লাসে ফিরবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা আবারো আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে একটি মিছিল বের করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবদুল খালেক বলেন, পদত্যাগপত্রগুলো আমি পেয়েছি। পরে সেগুলো উপাচার্য বরাবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগ পত্র গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই তারা পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থী হত্যাকান্ডের ঘটনায় অধিকতর তদন্তের জন্য পুনরায় তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। গঠিত এ তদন্ত কমিটি যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট দেবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ মার্চ রাতে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও পূর্ব শত্রুতার জেরে সায়াদকে আশরাফুল হক হলে একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্দয়ভাবে পেটালে পরের দিন ময়মনসিংহ শহরের বেসরকারি ট্রমা ক্লিনিকে সায়াদের মৃত্যু হয়।