স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় ইলিশ মাছ ক্রমেই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের জাতীয় মাছের মর্যাদাপ্রাপ্ত ইলিশ নদী বা সাগরে আর আগের মতো পাওয়া যায় না। গত বছর টেকনাফের বাজারে ইলিশ তেমন পাওয়া না গেলেও জাটকা ইলিশ পাওয়া যেত প্রচুর পরিমাণে। কিন্তু এবারে তাও মিলছে না। মোস্তাক আহম্মদ নামে এলাকার এক কাপড় ব্যবসায়ী বললেন, বাজারে ইলিশ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমার পরিবারকে কিভাবে ইলিশ-পান্তা খাওয়াব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
টেকনাফ উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, ইলিশের পোনাকে (৯ ইঞ্চি/২৩ সেন্টিমিটার এর নীচে) জাটকা বলা হয়। জাটকা নির্বিচারে ধরা হলে ইলিশ মাছ সাগরে পাওয়া যায় না। ডিম ছাড়ার জন্য এরা মোহনা ও নদ-নদীতে অভিপ্রায়ন করে। ইলিশ মাছ ১-২ বছর বয়সেই প্রজননক্ষম হয়। পুরুষ ইলিশ ২২-২৫ সে.মি. আকারে এবং স্ত্রী ইলিশ ২৮-৩০ সে.মি. আকারে পরিপক্বতা লাভ করে। ইলিশ মাছ সারা বছরই কমবেশি ডিম দেয়। তবে অক্টোবর মাসই হচ্ছে ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। এ সময় শতকরা ৬০-৭০ ভাগ ইলিশ পরিপক্ব হয় এবং ডিম ছাড়ার উপযোগী অবস্থায় থাকে। তাই অক্টোবর মাসে (আশ্বিন/কার্তিক) বড় পূর্ণিমার দিনসহ পূর্বের ৫ দিন ও পরের ৫ দিন অর্থাত্ মোট ১১ দিন প্রজনন এলাকায় সাগরে ইলিশ মাছ ধরা সরকার আইন করে নিষিদ্ধ করলে কিছু অসাধু ব্যক্তি তা অমান্য করে সাগরে মাছ ধরে থাকে। এজন্য দিন দিন সাগর থেকে ইলিশ কমে যাচ্ছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তা মোঃ নূরে আলম জানালেন, তিনি সেখানে দায়িত্বে আসার পর থেকে বন্দর দিয়ে কোন ইলিশ আসেনি। এর আগে মিয়ানমার থেকে ইলিশ আসলেও গত দুই বছর ধরে বন্দরে ইলিশ আসা বন্ধ রয়েছে।
জেলে রুহুল আমিন জানান, ইলিশের খোঁজে আমরা প্রতিদিন নাফ নদীতে মাছশিকারে যাই। কিন্তু প্রতিবার আমাদের লোকসান হয় । নদীতে ইলিশও নেই, জাটকাও নেই।
জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলার কোন ঘাটেই তেমন ইলিশ আসেনি। মাছটি ধরা পড়ছে কম অথচ চাহিদা বেশি। ফলে দামও অত্যন্ত চড়া। সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপে কিছু ইলিশ মিললেও তা এখানে বিক্রি করা হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা অতি লাভের আশায় তা সরাসরি ঢাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে। পহেলা বৈশাখে সবাই ইলিশ দিয়ে পান্তা ভাত খাবে। তাই ইলিশের চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। বাজারে বৈশাখের প্রভাব পড়ার আগে দাম অনেক কম ছিল বলে জানা গেছে।
মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল জানান, রবিবার সকালে টেকনাফ লামার বাজার খালের পাড়ে এক জেলে দুইটি ইলিশ নিয়ে এসেছিলেন। মাছ দুইটি তিনি ৩ হাজার টাকায় কিনে নেন। তিনি জানালেন, পহেলা বৈশাখের সময় ইলিশ মাছ কেজি হিসেবে নয়, আমরা পিস হিসেবে বিক্রি করি। এবারে গত বছরের মতো ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। কারণ এবারে ইলিশ নেই বললেই চলে। জাটকাও দেখা যাচ্ছে না।