বাংলা বর্ষবরণে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উত্সবে পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ের চিংম্রং (চিত্মরম) বৌদ্ধবিহার চত্বরে জলকেলিতে মেতেছে হাজার তরুণ-তরুণী। গতকাল বুবধার এখানে আয়োজিত রাঙ্গামাটি জেলার কেন্দ্রীয় জল-উত্সব শুরু হয় সকাল ১১টায়।
ঐতিহ্যবাহী মারমা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি হাজার হাজার তরুণ-তরুণী জলকেলিতে মাতোয়ারা হয়ে উঠে। বর্ণাঢ্য এই জলকেলি উত্সব উপভোগ করতে তিন পার্বত্য জেলা ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশ থেকে পর্যটক এসেছে কাপ্তাইয়ের চিত্মরমে। মারমা সংস্কৃতিক সংস্থার (মাসস) উদ্যোগে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে এই উত্সবের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি। কাপ্তাই চিত্মরম সাংগ্রাই উত্সব উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও মারমা সংস্কৃতিক সংস্থা (মাসস) সভাপতি অংশুছাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙ্গামাটি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রিদুয়ান আলম মাসুদ, কাপ্তাই শহীদ মোয়াজ্জম নৌবাহিনী ঘাঁটির অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এম কামাল নাছের, রাঙ্গামাটি ডিজিএফআই' অধিনায়ক জুবায়ের শাহীন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল, কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম নজরুল ইসলাম প্রমুখ। প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফিতা কেটে এবং এখানে আগত মারমা তরুণ-তরুণীদের গায়ে পানি ছিটিয়ে জলকেলি উত্সবের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর শত শত মারমা তরুণ-তরুণী বর্ণিল ও আনন্দমুখর পানিখেলায় মেতে উঠে। একে অপরের গায়ে পানিবর্ষণে পুরাতন বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছর সুন্দর দিনের জন্য প্রার্থনা করে। মারমা ছাড়াও অন্যান্য উপজাতীয় সমপ্রদায়ের তরুণ-তরুণীরাও পানিখেলায় অংশগ্রহণ করে। পানিখেলার পাশাপাশি পৃথক মঞ্চে পরিবেশিত হয় উপজাতীয় সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একের পর এক সংগীত পরিবেশন করে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন প্রথম বাংলাদেশি সংগীত আইডল বান্দরবানের মং মারমা। পরিবেশিত হয় মারমা ও চাকমা নৃত্য ও সংগীত। হাজার হাজার দর্শক নেচে-গেয়ে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে শান্তি আনয়নে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশেসিং এমপি।
গতকাল সকালে বৈসাবি উত্সবের শেষদিনে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই চিত্মরম বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই পানিখেলা উত্সব উদ্বোধন করে তিনি এ কথা বলেন। পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাস ও রক্তপাত বন্ধ করা না গেলে পাহাড়ের উন্নয়ন শান্তি বিঘ্নিত হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।
গতকাল পানিখেলা উত্সবকে ঘিরে কাপ্তাই চিত্মর বৌদ্ধ বিহার এলাকা ছিল পাহাড়ি-বাঙ্গালি মিলনমেলা। হাজার হাজার মারমা তরুণ-তরুণীর সাথে পাহাড়ি ও বাঙ্গালি সকল সমপ্রদায়ের লোকজন নিজেরা পানি ছিটিয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় নতুন বছর বরণের আনন্দে মেতে উঠে।
পানিখেলার মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের বৈসাবি উত্সবের সমাপ্তি ঘটলো। তিন পার্বত্য জেলার মারমা সম্প্রদায়ের সকল নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন উত্সবে।