লিওনেল মেসির ফিটনেসের উপরই নির্ভর করছে বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়নস লিগ ভাগ্য। বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে প্রথম লেগে বড় হারের ধাক্কা সামলে উঠে ফাইনালে পৌঁছানোর চেষ্টায় স্প্যানিশ ক্লাবটি তাকিয়ে থাকবে আর্জেন্টাইন এই খেলোয়াড়টির দিকেই। ন্যু ক্যাম্পে আজ বুধবার সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে জার্মান অতিথিদের বিরুদ্ধে মাঠে নামার প্রাক্কালে বার্সেলোনার সহকারি কোচ জর্ডি রৌরা এমনটাই মনে করছেন।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠতে হলে বার্সেলোনাকে নিদেনপক্ষে ৪-০ গোলে জিততে হবে। তাহলেই কেবল খেলাটি অতিরিক্ত সময়ে গড়াবে। এর চাইতে কম কিছু হলে গেলবারের ফাইনালিস্ট বায়ার্নই খেলবে ২৫ মে লন্ডনের উইম্বলিতে অনুষ্ঠেয় ফাইনালটি। জটিল এই সমীকরণ নিয়ে যা কিছু সুখস্মৃতি তার সবই বায়ার্নের অনুকূলে। কেননা ইউরোপীয় ফুটবলে দলদু'টি এর আগে যে সাতবার মুখোমুখি হয়েছে তাতে বার্সেলোনা জিতেছে কেবল একবার। চারটিতে জিতেছে বায়ার্ন, অপরদু'টি ড্র হয়। বার্সেলোনার একমাত্র জয়টিও আবার ২০০৮/০৯ মৌসুমে পাওয়া।
বার্সেলোনা এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ চারের লড়াইয়ে বায়ার্নের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হলো। ২০০৭ সালের পরে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এটা ছিল কাতালান ক্লাবটির সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হার। খেলাটিতে স্প্যানিশ জায়ান্টদের হারের পাশাপাশি সবাই সমালোচনা মুখর হয়েছেন মাঠে মেসির পারফরম্যান্স নিয়েও। হ্যামস্ট্রিয় ইনজুরিতে ভুগতে থাকা মেসি পুরো ম্যাচেই যেন নিজের ছায়া হয়েছিলেন। চারবার ফিফার বিশ্বসেরা হওয়া এই খেলোয়াড় ম্যাচটিতে খেলার জন্য ফিট ছিলেন কিনা, উঠে সে প্রশ্নও।
অবশ্য হতাশার বৃত্ত থেকে বার্সেলোনা না পারলেও বেরিয়ে এসেছেন মেসি। অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের মাঠে লা লিগায় নিজেদের সর্বশেষ খেলায় বার্সা ড্রয়ে বাধ্য হলেও দুর্দান্ত এক গোল করে মেসি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ইনজুরি কাটিয়ে আবারো স্বরূপে ফিরছেন তিনি। মেসির এই পারফরম্যান্সই 'আপাত অসম্ভব' এক স্বপ্ন দেখাচ্ছে বার্সেলোনাকে। রৌরার বিশ্বাস এই মেসিই পার্থক্য গড়ে দেবেন আজ। তাছাড়া ব্যাভারিয়ান দলটির বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে দুই গোল দিয়ে বাকিদের চাইতে এগিয়ে আছেন মেসি।
কোচ টিটো ভিলানোভার সহকারী রৌরা অ্যাতলেটিকোর বিরুদ্ধে খেলা শেষে বলেন, 'মেসি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়। সে যখন মাঠে থাকবে না স্বাভাবিকভাবেই তার অভাবটা আপনি বুঝতে পারবেন। যে কোন ম্যাচেই সে পার্থক্য গড়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।'
টিটো ভিলানোভার অনুপস্থিতিতে বেশ কিছুদিন দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করা রৌরা আরো বলেন, 'ইনজুরির পরে সে তার পুরনো ফর্ম ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আজকের ম্যাচে সে দারুণ খেলেছে এবং আমরা আশা করছি ধীরে ধীরে সে তার সেরা ফর্ম ফিরে পাবে। সে যতই উন্নতি করবে বায়ার্নের বিরুদ্ধে আমাদের সম্ভাবনা ততই বাড়বে।'
মেসির শতভাগ ফিট না থাকার পাশাপাশি প্রথম লেগে বার্সেলোনার জন্য বড় সমস্যা ছিল মূল ডিফেন্ডারদের ইনজুরি। দ্বিতীয় লেগেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না তারা। বরং ভিলানোভার কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়ে এই ম্যাচে খেলতে পারছেন না জর্ডি আলবা। ইনজুরি নয়, নিষেধাজ্ঞার জন্যই মাঠে নামতে পারবেন না তিনি। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা আদ্রিয়ানো পূরণ করবেন তার শূন্যস্থান।
এরপরও রক্ষণভাগের মূল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না তাতে। কারণ সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জেরার্ড পিকের সাথে কে জুটি বাধবেন সেটা নিশ্চিত নয় এখনও। ইনজুরি কাটিয়ে জ্যাভিয়ের ম্যাসেরানো অনুশীলনে ফিরলেও মাঠে নামতে পারবেন কিনা তা বলা যাচ্ছে না । তবে আর কোন উপায় না থাকলে শেষ পর্যন্ত হয়তো তাকেই মাঠে নামতে হবে।
বায়ার্ন অবশ্য প্রথম লেগের বড় জয়ের সুবাদে আছে ফুরফুরে মেজাজে। নিষেধাজ্ঞার কারণে গত মঙ্গলবারের ম্যাচটি খেলতে না পারা স্ট্রাইকার মারিও মান্ডজুকিচ ফিরছেন মাঠে। তবে বড় ব্যবধান থাকলেও বায়ার্ন কোচ ইয়াপ হেইঙ্কস হাঁটবেন সতর্ক পথেই। স্পেনে খেলতে গিয়ে কেউ কার্ড দেখলে ফাইনাল খেলতে না পারার ঝুঁকিতে পড়বেন ছয়জন খেলোয়াড়। তবু ঝুঁকি নিয়ে হলেও তাদের নিয়েই দলের মূল একাদশ সাজাবেন তিনি। হেইঙ্কসের এই অতি সতর্কতার কারণ বোধহয় তার পুরনো তিক্ত অভিজ্ঞতা। ১৯৮৫ সালে বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখ প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-১ গোলে হারানোর পরেও দ্বিতীয় লেগে হেরে বিদায় নেয় টুর্নামেন্ট থেকে। তখন জার্মানির ওই ক্লাবটির দায়িত্বে ছিলেন হেইঙ্কস। সুতরাং একই ভুল নিশ্চই দ্বিতীয়বার করতে চাইবেন না তিনি।