শিশুকালেই প্যাট্রিক কেনকে হারাতে হয় তার বাম হাত এবং ডান পা। মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত প্যাট্রিককে তাই তার সব কাজ করতে হয় বাম হাত এবং ডান পায়ের সাহায্য ছাড়াই। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এই দুইটি অঙ্গ ছাড়াই এতদিন জীবনধারণ করতে হয়েছে তাকে। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে এই অচলাবস্থা থেকে নিষ্কৃতি মিলেছে প্যট্রিকের। এখন আর দশজনের মতো প্যাট্রিকও দুই হাতই ব্যবহার করতে পারছে প্রায় সব ধরনের কাজে। না, ছোটবেলায় হারানো বাম হাত ফিরে নতুন করে তৈরি হয়নি প্যাট্রিকের, বরং সেই হাতের স্থানটি প্রতিস্থাপিত হয়েছে একটি বায়োনিক হাত আই-লিম্ব'র দ্বারা। বায়োনিক এই হাতকে সে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। হ্যাঁ, প্যাট্রিক কেনই হচ্ছে যুক্তরাজ্যের প্রথম কোনো ব্যক্তি, যার শরীরে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ন্ত্রিত বায়োনিক হাত প্রতিস্থাপন করা হয়েছে হারানো হাতের বদলে।
১৬ বছর বয়সী প্যাট্রিকের শরীরে যে বায়োনিক হাত আই-লিম্ব লাগানো হয়েছে, সেটিতে হাতের বিভিন্ন মুহূর্তের ২৪টি অবস্থান প্রোগ্রাম করে দেওয়া রয়েছে বিল্ট-ইন হিসেবে। হাতের পেশীর নড়াচড়ার মাধ্যমে সহজেই এই পূর্ব নির্ধারিত অবস্থানগুলোতে যাওয়া যায়। আবার মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেও এই অবস্থানগুলোতে হাতকে নিয়ে যাওয়া যায় সহজেই। ফলে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ধরনের কাজ সহজেই করা যায় এই হাতের মাধ্যমে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় প্যাট্রিকের কথা থেকেও।
এর আগে প্যাট্রিক আই-লিম্বের আগের একটি সংস্করণ ব্যবহার করত। তবে তাতে নিজের প্রয়োজনীয় সব কাজ স্বাচ্ছন্দ্যে করার সুযোগ হত না তার। বরং নতুন আই-লিম্বে সে সব কাজই করতে পারছে। আই-লিম্বের নতুন সংস্করণটি সংযুক্ত করার পর সে জানায়, 'এর আগে টাই বাধা কিংবা জুতোর ফিতা লাগানোর জন্যও আমাকে কারও না কারও সাহায্য নিতে হত। কিন্তু এখন আর আমাকে কারও উপর নির্ভর করতে হয় না। এখন আমি প্রায় সব ধরনের কাজই করতে পারি। আবার আগে যেসব কাজে অনেক সময় লেগে যেত, সেসব কাজ এখন অনেক দ্রুত আমি করতে পারছি। ফলে এখন নিজেকে অনেক বেশি স্বাধীন মনে হয়।'
আই-লিম্ব নির্মাতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্যাট্রিকের ছোটবেলায় হারানো বাম হাতটির স্থানে তারা সংযুক্ত করেছেন বায়োনিক হাতটি। পাশাপাশি দুইটি সেন্সরও বসানো হয়েছে প্যাট্রিকের পেশিতে। এই সেন্সর দুইটির মাধ্যমেই প্যাট্রিক তার বায়োনিক হাতটিকে নিজের ইচ্ছেমতো নড়াচড়া করতে পারে। আবার পেশির উপরে নির্ভর না করে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও প্রয়োজনীয় নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণের সুবিধা রেখেছে আই-লিম্ব। ফলে দৈনন্দিন জীবনের নানা ধরনের কার্যক্রম এর মাধ্যমে পরিচালনা করা অত্যন্ত সহজ হয়ে উঠেছে প্যাট্রিকের জন্য।