সময়টা ২০০৮ সালের শুরুর দিক, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় তাত্ক্ষণিক গল্প লেখায় আবীর ফেরদৌস মুখর তৃতীয় হয়েছিলেন, তখন থেকেই সবকিছু শুরুর একটা গতি পেল। এরপর ২য় আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উত্সবে তার বানানো চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয়। অসম্ভব স্বাপ্নিক এই ছেলেটা তারপর কাজ করেছেন শিশুপ্রকাশ এবং বাংলানিউজ টুয়েন্টি ফোরে। ২০০৮ থেকে ২০১৩ এই পর্যন্ত সাতটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও একটি অ্যানিমেশন নির্মাণ করেছেন তিনি। অ্যানিমেশনটি স্পেনের উই আর্ট ফাউন্ডেশন এর আয়োজিত একটি উত্সবে দর্শক পছন্দে তৃতীয় হয় । নানা গুণের এই তরুণ আবীর ফেরদৌস মুখর আমাদের আজকের অন্য তারুণ্যে, তাকে নিয়ে লিখেছেন সাজেদুল ইসলাম শুভ্র ছবি তুলেছেন দীপঙ্কর দীপু
'শিশু বয়সে স্কুলে থাকতে মঞ্চে অভিনয়, বিতর্ক বা গল্প লিখতে লিখতে যেই জিনিসটার প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ি সেটা হলো ক্যামেরা । পত্রিকায় শিশু চলচ্চিত্র উত্সবের বিজ্ঞাপণ দেখেই প্রথম যেটা মনে হয়েছিল আমাকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে এবং অংশগ্রহণ করতে হবে, কীভাবে কী করব কিছুই তখন জানি না। বানানোর ইচ্ছা থাকলেও ক্যামেরা কৌশল বা চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল কিছুই জানা ছিল না, আর তখন নিজের কোন ক্যামেরা ছিল না, বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তখন আমার বন্ধুরা এগিয়ে আসে। ওদের সাহায্যেই অবশেষে একটা ডিজিটাল ক্যামেরা জোগাড় করে কাজ শুরু করি, তারপর নানা প্রতিকূলতার মাঝে কাজ শেষ করি', কোনো কিছুর শুরুতেই যে কষ্ট করে এগোতে হয়, সেটা আবীরের কথাতেই বোঝা যায়। সেই উত্সবে অংশ নেওয়া তার জন্য ছিল অনেক বড় প্রাপ্তি। ৭ দিনের সেই উত্সব তারজীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি। মোরশেদুল ইসলাম, প্রয়াত তারেক মাসুদদের কাছ থেকে সেই ৭ দিনে যা শিখেছেন তা তার সারা জীবনের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তাদের অনুপ্রেরণাতেই মুখর চলচ্চিত্র তৈরি করতে থাকেন, ৫ম উত্সবে সে জিতে নেয় বিশেষ পুরস্কার। তার সাফল্যের ধারাবাহিকতা ই তাকে পরের উত্সবে শিশুদের চলচ্চিত্রের বিচারকের আসনে বসেন।
মুখরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, এই যে পড়াশোনার পাশাপাশি এতকিছু, কোনো সমস্যা হয় কি না। উত্তরে তিনি বলেন, 'আসলে সময়টা আমাদের জন্য অনেক। ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলেই হয়। অনেকেই একসাথে অনেক কিছু করছে, কই আমার তো মনে হয় এতে বরং আরও লাভ। আপনি অনেক কিছু আগে থেকেই শিখতে পারছেন, জানতে পারছেন।' তাই এতকিছুর মাঝে কোনো অসুবিধা হয় বলে মনে করেন না তিনি। আর তিনি নিজেই সেটা প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেন, 'আমার পড়াশোনার ক্ষেত্রটি যদিও ভিন্ন, সরকারি তিতুমির কলেজে ফিন্যান্স এবং ব্যাংকিংয়ে অনার্স পড়ছি, তবুও আমার স্বপ্নটা চলচ্চিত্রকে ঘিরে আর এ জন্য সবচেয়ে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে আমার বন্ধুরা শাহরীয়ার, ওয়াসিকুল, আলীফ, প্রীতি, দীপ্র ভাইয়া, পাভেল ভাইয়া, মনন, সাদিয়া দোহা আপু এবং আমার পরিবার মিশুক ভাইয়া, মা ও বাবা তাদের সাহায্য ছাড়া আমি হয়তো এক পা'ও এগোতে পারতাম না।'
মুখর মনে করেন প্রতিটা মানুষই সম্ভাবনাময়। প্রত্যেকের মাঝেই সৃজনশীলতা আছে। নিজেকে তাই বুঝতে চেষ্টা করতে হবে, যেটা করছি সেটা মন থেকে করতে হবে। আর সেই পথে নিজেকে ধরে রাখতে হবে। তিনি আরও মনে করেন, সবকিছু থেকেই শেখা যায়। যদি অনেক বেশি দেখা, শোনা, আর পড়া যায়, নিজেকেই নিজে ছাপিয়ে যাওয়া যায়। আর সবকিছুই করতে হবে নিজের জীবনচরিত ঠিক রেখে। সবশেষে তিনি জোর গলায় বললেন, তারুণ্যই পারে সবকিছু বদলে দিতে, সেই পরিবর্তনটা আসছে আমাদের মাঝে। ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনচেতা স্বভাবের হওয়ায় কোনো কিছুই তাকে শৃঙ্খলিত করতে পারেনি।
মুখর বলেন, 'সৃষ্টিশীল হতে চাইলে সবার আগে স্বপ্ন দেখতে জানতে হবে, রঙহীন স্বপ্নকে রাঙিয়ে তুলতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'নিজেকে ভিন্নভাবে তৈরি করতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন ইচ্ছা এবং নিজের প্রতি সততা, যা না থাকলে কখনই ভালো মানুষ হওয়া যায় না। আর দরকার অধ্যবসায়। ভবিষ্যত্ কোথায় নিয়ে যায় তা হয়ত বলতে পারব না, কিন্তু ভবিষ্যতে নিজেকে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে দেখার ইচ্ছা লালন করি মনের মাঝে তীব্রভাবে', বললেন মুখর।