বড় হচ্ছে ক্রমেই বাংলাদেশের মোবাইল অ্যাপ সেক্টর। এর প্রধান কারণ দুটি : একদিকে দেশের ভেতরে স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা গতবছর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে (এবং এখনও বাড়ছে)। একথা সবারই জানা যে প্রচণ্ড শক্তিশালী, বড় পর্দার এবং স্পর্শকাতর এই মুঠোফোনগুলো প্রযুক্তির এক নতুন ম্যাজিক। দ্বিতীয় যে কারণটা অ্যাপকে জনপ্রিয় করেছে তা হচ্ছে গত বছরের মাঝামাঝিতে থ্রিজি টেকনোলজির বড় আকারে যাত্রা শুরু করা।
স্মার্টফোন এবং থ্রিজি যেমন এ সেক্টরকে দেশিয় প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে, তেমনি দেশের বাইরের অনেক কাজও বিদেশি ক্রেতাদের জন্য এদেশিয় অ্যাপ ডেভেলপাররা তুলে দিচ্ছেন সফলতার সাথেই। সব মিলিয়ে দক্ষতার বিভিন্ন সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে হাজারেরও ওপরে অ্যাপ ডেভেলপার এই বাংলাদেশেই ব্যস্ত আছেন বিশ্বমানের বিভিন্ন অ্যাপ নির্মাণে। আর অন্তত পঞ্চাশের ওপরে সফটওয়্যার কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে মোবাইল অ্যাপ তৈরির এই কর্মযজ্ঞে।
উল্লেখযোগ্য কিছু অ্যাপ
আগেই বলেছি মোবাইল অ্যাপ প্রযুক্তিতে বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ত বাংলাদেশও। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে তৈরি বেশকিছু আন্ড্রয়েড এবং আইওএস নির্ভর অ্যাপ বিশ্বদরবারে সুনাম কুড়িয়েছে। এই অ্যাপগুলোর মধ্যে আছে একেবারে খেলা বা মজার উপকরণ, তেমনি আছে দ্বিভাষিক অভিধানের মতো প্রয়োজনীয় টুল কিংবা প্রাকস্কুল শিশুদের জন্য বাংলা শেখার অ্যাপ।
রিদমিক ল্যাবের রিদমিক কিবোর্ড, স্যামুভ্যালেড-এর ইংলিশ টু বাংলা ডিকশনারি, অরেঞ্জ বিডির আল-কুরআন, সূর্যমুখীর হাতেখড়ি, এলিটস-এর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, এমসিসি-এর বাংলাদেশ কন্সটিটিউশান, বিজনেস অ্যাপ স্টেশনের ইতি নামের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশনসহ আরো অনেকগুলো অ্যাপ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর বাইরেও রয়েছে নানা অ্যাপ।
উল্লেখযোগ্য কিছু অ্যাপ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশে অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে যারা নিয়মিত কাজ করে চলেছে সূর্যমুখী লিমিটেড তাদের মধ্যে অন্যতম। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে শিশুদের বর্ণমালা শেখার জন্য সূর্যমুখী উপহার দিয়েছিল 'হাতেখড়ি' নামক একটি জনপ্রিয় অ্যাপ, যার মাধ্যমে শিশুরা খেলার ছলে বাংলা বর্ণমালা শিখতে পারবে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের ও বাঙালি সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন উত্সব এবং বিশেষ দিনগুলোতে সূর্যমুখী ধারাবাহিকভাবে লাইভ ওয়ালপেপার বাজারে ছেড়ে আসছে। অন্যদিকে এযাবত্কালের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাড্রয়েড। ফ্রি এবং পেইড মিলিয়ে প্রায় ৪৩টি অ্যাপ তারা নির্মাণ করেছে। বিশেষত তাদের অ্যারাবিক অ্যালফাবেট অ্যাপটি দেশ-বিদেশ মিলিয়ে পাঁচ লাখের মাইলফলক ছুঁয়েছে। এছাড়াও শিশু-কিশোরদের যথাসম্ভব আনন্দ দিয়ে নৈতিকতা শেখানোর জন্য তারা বিখ্যাতদের মজার গল্প এবং প্রফেটস স্টোরিস নামে দুটি অ্যাপও সুনাম কুড়িয়েছে। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অ্যাপ ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান এথিকস অ্যাডভান্সড টেকনলজিস লিমিটেড আয়োজিত এযাবত্কালের সবচেয়ে বড় অ্যাপ নির্মাণ প্রতিযোগিতা 'ইএটিএল-প্রথম আলো অ্যাপস প্রতিযোগিতা' দেশের অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে বেশকিছু পুরস্কারজয়ী প্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমিটেড বাংলাদেশ সংবিধান, বাংলাদেশের ছুটি, বাংলা এসএমএস, বিডিজবস, এবিসি রেডিও, সোশ্যাল বিজনেস গেইমসহ আরো বেশকিছু অ্যাপ বাজারে ছেড়েছে যেগুলোর ডাউনলোড সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। অরেঞ্জ বিডি ডটকম এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি অ্যাপ ডেভেলপ করেছে। বাংলাদেশের বেশকিছু শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র যেমন কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইত্তেফাক, ডেইলি সান, সমকাল, যুগান্তর, ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসসহ আরও অনেকগুলো সংবাদপত্রের অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন তৈরি করেছে অরেঞ্জ বিডি ডটকম। স্মার্টফোন কিংবা ট্যাব দিয়ে বাংলা লেখা কিংবা পড়ার সমাধান নিয়ে রিদমিক ল্যাব তাদের যাত্রা শুরু করেছে মাত্র কিছুদিন আগেই। খুবই কম সময়ে পাঁচ লাখ ডাউনলোডের মাইলফলক ছুঁয়েছে এই রিদমিক ল্যাব। ড্রিমওগ্রামার্স ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ নির্মাণ করে যাচ্ছে। জাকির হুসেইন মূলত একজন ফ্রিল্যান্সার। এপর্যন্ত ৩২টি অ্যাপ ডেভেলপ করেছেন যার মধ্যে বেশকিছু অ্যাপ গুগল প্লে-তে এক লক্ষ ডাউনলোড ছাড়িয়েছে। উল্লেখযোগ্য অ্যাপগুলো হচ্ছে—পাঁচ কালিমা, অল ম্যাথ ফর্মুলা, একাত্তরের চিঠি, বেসিক অ্যাকাউন্টিং ইত্যাদি। এ ছাড়াও বাংলাদেশে এরকম আরও কিছু অ্যাপ ডেভেলপার কোম্পানির মধ্যে হাইপার ট্যাগ, এসজিসি সফট, ইওসি মিডিয়া, গ্রামীণ ইন্টেল সোশ্যাল বিজনেস লিমিটেড, স্মার্ট মক্স, বাংলা নেট, এমসিসি, মবিও অ্যাপ উল্লেখযোগ্য।
সরকারি ভূমিকা
আইসিটি মন্ত্রণালয় ও এটুআই কর্মসূচিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ইতোমধ্যে সরকারের জাতীয় বাজেটের অনেক বড় একটি অংশ এই খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। গত বছর 'স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন অ্যান্ড গেমিং ইন্ডাস্ট্রি' নামের একটি প্রজেক্টে ২৫১ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও ছোট-বড় এরকম আরও বেশকিছু প্রজেক্ট সরকার অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের এই সদিচ্ছা এবং মোবাইলফোন অপারেটরদের থ্রিজি প্রযুক্তিকে সারা দেশে পৌঁছে দেবার অব্যাহত প্রচেষ্টা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।
শেষকথা
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ, একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ দক্ষ কর্মী, সরকারের সার্বিক সহায়তা, দেশ ও দেশের বাইরের আইসিটি সমন্বয়তা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে চালকের আসনে বসিয়ে দিতে পারে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে বাংলাদেশকে আউটসোর্সিং প্ল্যাটফর্মে বেশ ভালোভাবে নিজেদের প্রতিভা তুলে ধরতে হবে। দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে দরকার এই খাতে নিয়মিত উদ্যোগসহ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঠিক ও সময়োপযোগী কর্মসূচি। দেশের দশ কোটি মোবাইল গ্রাহকের ইন্টারনেট সেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে পারলে সেদিন খুব বেশি দূরে নেই যেদিন বাংলাদেশি কোনো অ্যাপ স্বদেশ-বিদেশ মিলিয়ে কোটি সংখ্যক ডাউনলোডের মাইলফলক ছাড়াবে।
নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ঘটনায় র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেছেন, 'র্যাবের কেউ জড়িত থাকলে তাকে রক্ষার চেষ্টা করব না, বিভাগীয় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।' তিনি কি এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবেন?