শেষ পর্যন্ত সমস্ত অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে বিপিএলের আদলে দাঁড় করানো গ্রেডিং পদ্ধতিতে নিলামের মাধ্যমে দলবদল শেষে ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০১২-২০১৩ মৌসুমের প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। তার আগে ২০ জুন অনুষ্ঠিত হবে ক্রিকেটারদের নিলাম। এর মধ্যে আবার মাঠ পাওয়া যাচ্ছে না বলে খেলাগুলো হবে ঢাকার বাইরে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) গতকাল মঙ্গলবার এসব সিদ্ধান্ত নেয়।
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের দাবিকে উপেক্ষা করেই এ সিদ্ধান্ত নিলো বিসিবি। মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে গত সোমবার জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা মিরপুরে সভা করে জানিয়েছিল, গ্রেডিং পদ্ধতির অধীনে তারা খেলবে না। খেলোয়াড়দের এ সিদ্ধান্ত বোর্ডকে জানানোর পর থেকে লিগ নিয়ে নতুন করে শংকা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে বোর্ড 'এলিট' ক্রিকেটারদের দাবিকে উপেক্ষা করে লিগের দলবদল ও শুরুর দিনক্ষণ ঠিক করে। শুধু তাই নয়, বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, নতুন পদ্ধতিতেই প্রিমিয়ার লিগ খেলবে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি আশা করবো ক্রিকেটের স্বার্থে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা খেলবে।'
গ্রেডিং পদ্ধতিতে নিলাম হলে নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা খেলতে আপত্তি জানিয়েছিল। বরং পুরনো নিয়মে দলবদল হলে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের একটা বড় অংশের লাভই হতো। বোর্ড সভাপতি অবশ্য ক্রিকেটারদের ক্ষতি প্রসঙ্গে বলেন, 'গত বছর কারা কত টাকা পেয়েছে সেটা আমরা জানি। যে গ্রেড ধরা হয়েছে সেটাতে দুই-তিনজন ক্রিকেটারের সমস্যা হওয়ার কথা। গত মৌসুমে মাত্র দুইজন ক্রিকেটার ২৫ লাখ টাকার উপরে পেয়েছে। এর বাইরে ১০, ৮, ৭ লাখ টাকা করে পেয়েছে। আমরা তো ১০/১৫ লাখ টাকাও রাখছি। আমার মনে হয়, সাতানব্বই ভাগ ক্রিকেটার এই পদ্ধতিতে খেলতে আপত্তি জানাবে না। দুই-তিনজন ক্রিকেটারের বেলায় এবার সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে না এটা আমি অস্বীকার করছি না। আমি আশা করবো, এবারের ক্ষতিটা তারা মেনে নিবে।'
এ বিষয়ে কাল জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সাথে কথা বলতে চাইলেও তাদের কেউ মুখ খোলেননি। জানা গেছে, তারাও নিজেদের দাবির ব্যাপারে অনমনীয়। বোর্ডের এ সিদ্ধান্ত ক্রিকেটাররা না মানলে কি হবে জানতে চাইলে বোর্ড সভাপতি আশ্বস্ত করে বলেন, 'যদি না মানে এই ব্যাপারে আগাম কিছু বলা যাবে না। আমি আশা করছি, সকল ক্রিকেটারই খেলবে।'
ক্রিকেটারদের শংকিত হবার কারণ বিপিএল খেলেও সময় মতো পারিশ্রামিক বুঝে না পাওয়ার তিক্ততা। বিপিএলে বোর্ড 'গ্যারান্টর' হওয়া সত্ত্বেও এখনো চুক্তি অনুযায়ী পারিশ্রামিক পায়নি ক্রিকেটাররা। তাই এই পদ্ধতিতে প্রিমিয়ার লিগ খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা। বোর্ড সভাপতি পারিশ্রমিকের ব্যাপারেও আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, 'আমি কখনো ক্রিকেটারদের মুখ থেকে শুনিনি, ক্লাবদের কাছ থেকে তারা টাকা পায়নি। আর এখানে ক্লাবদের সাথে ক্রিকেটারদের চুক্তির একটা বিষয় থাকবে। আমাদের পুরো নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও কিছুটা খবরদারি রাখতে পারবো ক্রিকেটারদের পারিশ্রামিক পরিশোধের ব্যাপারে।'
নিলামে ক্রিকেটার কেনা বেচা হলে বিপিএলের মত তাদেরকে আয়কর দিতে হবে। শুধু তাই নয়, বিপিএলের মত পারিশ্রমিকের একটা অংক পাবে বোর্ডও। তবে তার পরিমাণ এখনো ঠিক হয়নি। বোর্ড সভাপতি জানালেন, দুই একদিনের মধ্যে তা ঠিক হবে।
এদিকে ১ জুলাই থেকে শুরু করার কথা বলা হলেও লিগ সময়মত শেষ করার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। কেননা বাংলাদেশে সাধারণত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে বৃষ্টির প্রকোপ। বৃষ্টির কারণে লিগের খেলাও নিয়মিত চালাতে পারবে না ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিশ (সিসিডিএম)। এর সাথে আছে মাঠ সংকট যার কারণে বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, খেলাগুলো হবে ঢাকার বাইরে। ফলে লিগের খরচও বেড়ে যাবে। এই খরচের কারণে বিপিএলের মত ক্লাবগুলো বোর্ডের কাছে অনুদান চেয়েছে। সবকিছু মিলে লিগের দিনক্ষণ ঠিক করলেও স্বস্তিতে নেই ক্রিকেট বোর্ড।
এ ব্যাপারে বোর্ড সভাপতি, 'কিছু খরচ তো বেড়ে যাবে। বৃষ্টির সমস্যা রয়েছে। তবে এরচেয়ে বড় সমস্যা মাঠ নিয়ে। ঢাকাতে কোন মাঠ নেই। খেলতে হবে ঢাকার বাইরে। হরতাল কিংবা বৃষ্টি হতে থাকলে এই লিগ শেষ করাটা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে। একটি মাত্র মাঠ রয়েছে সেটা মিরপুর স্টেডিয়াম। কিন্তু এই মাঠে কাজ করতে হবে, আমরা যতদূর জানি এই মাঠে খেলা সম্ভব নয়। তাই ঢাকার বাইরে খেলা হলে অনিশ্চয়তা তো থাকবেই।'
জুলাই থেকে খেলা শুরু হলে প্রতিদিনই বৃষ্টির হুমকি থাকবে। ম্যাচও বিঘ্নিত হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্য বোর্ড এবার পদ্ধতিটা পরিবর্তন করতে চাচ্ছে, 'সাধারণত একটা নিয়ম আছে, এই সমস্যার কারণে খেলা না হলে রিজার্ভ ডে কিংবা টসের মাধ্যমে সমাধান হত। কিন্তু এবার সময় লাগুক। যদি বৃষ্টি কিংবা হরতালে খেলা না হয় তবে সূচি বডিলি শিফট হয়ে যাবে। একটু দেরি হতে পারে সেক্ষেত্রে আমরা লিগটাকে ভালোভাবে শেষ করতে চাই।'
জানা গেছে, ক্লাবগুলো বোর্ডের কাছে এক কোটি টাকা করে অনুদান চাইছে। তবে আগামী বোর্ড সভায় এই অনুদানের অংক ঠিক হবে।