We use cookies to tailor your experience, measure site performance and present relevant advertisements. By clicking the 'ok' button, you agree that cookies can be placed in accordance with our
Privacy Policy.
শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া নিয়ে তৈরি পোশাকের ক্রেতাদের মধ্যে ভীতি বিরাজ করছে। গত কয়েকমাস ধরে এ অঞ্চলের পোশাক শ্রমিকদের টানা বিক্ষোভে উত্পাদন ব্যাহত হওয়ায় এ ভীতি সৃষ্টি হয়েছে। ক্রেতারা এখন অর্ডার দেয়ার আগে পোশাক শিল্প মালিকদের কাছে জানতে চান তার কারখানাটি আশুলিয়ায় কিনা। কারখানা যদি আশুলিয়ায় হয় তাহলে সেখানে অর্ডার দিতে ইতস্ততঃ করছেন ক্রেতারা। কয়েকজন পোশাক শিল্প মালিক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, পরিস্থিতি শান্ত না হলে ওই অঞ্চলের কারখানাগুলোতে অর্ডার দেয়া বন্ধ করে দেবেন ক্রেতারা। গার্মেন্টস শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত কয়েকমাস ধরে আশুলিয়ার কারখানাগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। কোন কারণে একটি কারখানার শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়ে বাইরে চলে আসলে তাদের সাথে যোগ দিচ্ছে অন্য কারখানার শ্রমিকরাও। বিক্ষোভ কোন কোন সময় সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। গত কয়েকমাসে অন্তত ২০ দিন উত্পাদন বন্ধ ছিল আশুলিয়ার পোশাক কারখানাগুলোতে। এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে ক্রেতাদের।
আশুলিয়ায় তৈরি পোশাকের কারাখানা আছে-এমন একজন উদ্যোক্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাজ করেন তিনি। ওই ক্রেতা ভাগ ভাগ করে প্রতি তিন মাস অন্তর পোশাকের ওয়ার্ক অর্ডার (কার্যাদেশ) দেন। এপ্রিল মাসে কার্যাদেশ দিতে গেলে ক্রেতার পক্ষ থেকে তাকে প্রশ্ন করা হয়, অর্ডার দেয়া তৈরি পোশাক কোথায় উত্পাদন হবে? কারখানা মালিক ক্রেতাকে আশুলিয়ার কথা জানালে ক্রেতা বেঁকে বসেন। ওই ক্রেতা তাকে বিকল্প কোন কারখানায় কাজ করিয়ে দিতে অনুরোধ জানান। শেষ পর্যন্ত ক্রেতার মন রক্ষার জন্য ওই কারখানা মালিক তার গাজীপুরের কারখানায় কাজ করিয়ে দিতে সম্মত হন।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদির কারখানা আছে আশুলিয়ায়। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ক্রেতার কাছ থেকে তিনিও এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। ক্রেতা তাকেও প্রশ্ন করেছেন অর্ডার করা পোশাক কোথায় তৈরি করা হবে? অনেকে এরকম বিপদে পড়ে ক্রেতার অর্ডার অন্য জায়গায় স্থানান্তর করেছেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে (সাভারসহ) মোট ৪৭০টি পোশাক কারখানা রয়েছে। এর প্রায় সব মাঝারি এবং বড়। মোট পোশাক রফতানির ২০ শতাংশেরও বেশি হয়ে থাকে এসব কারখানায়। বিজিএমইএ'র সাবেক সহ-সভাপতি এ বি এম সামছুদ্দিন আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কারখানাগুলো নিয়ে ক্রেতাদের ভীতি সম্পর্কে জানান, তার কানেও এরকম অভিযোগ এসেছে। ইটালির ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কালার অব বেনাটনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ওই ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আশুলিয়ার কারখানায় কাজ দিয়ে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকে। যে প্রতিষ্ঠানে তারা কাজ দেন, সেখানে তাদের তদারকি থাকে সবসময়। কালার অব বেনাটনের কান্ট্রি ম্যানেজার প্রতিদিনই আশুলিয়ার কারখানায় গিয়ে রাত অবধি কাজের তদারকি করছেন। এবিএম সামছুদ্দিন আরো জানান, আশুলিয়ার অর্ডার নিয়ে ক্রেতারা ভীত তা নয়, সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর তারা এখন বিভিন্ন কারখানা ভবনের ডিজাইন এবং নির্মাণ পদ্ধতি পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী ২৭ মে ইউরোপের একটি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা দিনব্যাপী তাদের কারখানাগুলোর ভবন পরীক্ষা করতে আসবেন। তবে এতকিছুর পরও তিনি বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ক্রেতারা দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবেন বলে তার বিশ্বাস।
বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদিও জানান, আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল নিয়ে ক্রেতাদের উদ্বেগের কারণ দুইটি। এর একটি হচ্ছে-ক্রমাগত শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে সেখানাকর কারখানাগুলোতে অর্ডার দেয়া যাবে কিনা? আর উদ্বেগের দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে-সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর ওই এলাকার কারখানা ভবনগুলো কি অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, এসব ছোট ছোট বিষয় পোশাক শিল্পকে চাপে রাখছে। এর উপর শ্রমিক বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে।
এদিকে, অব্যাহত শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে সপ্তাহখানেক আগে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ অনির্দিষ্টকালের জন্য আশুলিয়ার পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করলেও নানামুখী চাপে তারা এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। কিন্তু কারখানাগুলো খুলতে না খুলতেই আবার শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে পড়েছে। বিজিএমইএ'র একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এরকম পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অচিরেই মালিকরা আশুলিয়া থেকে পোশাক কারখানাগুলো হয় সরিয়ে নেবেন, না হয় সেগুলো বন্ধ করে দেবেন।