We use cookies to tailor your experience, measure site performance and present relevant advertisements. By clicking the 'ok' button, you agree that cookies can be placed in accordance with our
Privacy Policy.
ময়লা ও দুর্গন্ধের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ওয়াটার এন্ড সুয়্যারেজ অথরিটির (ওয়াসা) পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নগরবাসীদের অভিযোগ, পানি পানও করা যাচ্ছে না। এমনিতে পানিতে প্রায় সময় ময়লা পাওয়া যাচ্ছে।
ফকিরেরপুল, পুরানা পল্টন, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, মগবাজার, তেজগাঁও, ফার্মগেট, মুগদা, মাণ্ডা, খিলগাঁও প্রভাতীবাগ, মিরপুর, বাসাবো, পুরানো ঢাকার বাবু বাজার, রায় সাহেবের বাজার, বংশাল, ধুপখোলা, গেণ্ডারিয়া, জয়কালী মন্দির, শাঁখারী বাজার, শমসেরাবাদ, চম্পাটুলি লেন, অভয়দাস লেন, সিপাহীবাগ, মেরাদিয়া, গোপীবাগ, ভূঁইয়াপাড়া, যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, মাদারটেকসহ এর আশপাশের এলাকার পানি ময়লা ও দুর্গন্ধে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই পানি পান করে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
রাজধানীতে ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে তার শতকরা ৩০ ভাগই পরিশুদ্ধ নয়। পানি পুরোপুরি শোধন করা হচ্ছে না এমন অভিযোগ নগরবাসীর অনেকেরই।
মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার গৃহিণী শান্তা বেগম অভিযোগ করেন, পানিতে বিশ্রী রকম দুর্গন্ধ পাচ্ছি। যে কারণে আমাকে বাইরে থেকে পানি কিনে পান করতে হচ্ছে।
একই অভিযোগ হাজারীবাগের বাসিন্দা হুমায়ুন কবীরের। তিনি বলেন, ওয়াসার পানিতো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। ওয়াসার কাছ থেকে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া দুরাশা মাত্র। আমরা নিয়মিত পানির বিল দিচ্ছি অথচ বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছি না।
পুরান ঢাকার শমসেরাবাদ লেনের বাসিন্দা মো.স্বাধীন মিয়া ইত্তেফাককে বলেন, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ। পানি খাওয়া, গোসল এমনকি ওযু করার কাজও করা যাচ্ছে না।
সোয়ারী ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী খোকন বলেন, বুড়িগঙ্গার দুর্গন্ধযুক্ত পানি পান করানো হচ্ছে তাদের।
বিভিন্নভাবে ওয়াসার পানি দূষিত হচ্ছে। ওয়াসার শোধনাগার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে পাইপ লাইনে পানি যাচ্ছে তার সিংহভাগই হচ্ছে পুরনো। পাইপগুলো জরাজীর্ণ হওয়ার কারণে পানি দূষিত হচ্ছে। ময়লা প্রবেশ করছে পানিতে। পাশাপাশি এলাকায় অদক্ষ লোক দিয়ে পাইপ ফুটো করে অবৈধভাবে সংযোগ নেয়ার কারণে পানিতে ময়লা প্রবেশ করছে।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ করতে হলে তা ৪০ মিনিট ধরে ফুটাতে হবে। তবে সেই পানি পানের উপযোগী হবে।
পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে ৬ বছর গবেষণা করে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার এইড ও হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি) একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানি সমস্যা সমাধানে এ খাতে যে বরাদ্দ দেয়া হয় তার ৪০ ভাগ বাস্তবায়ন হয় না। এজন্য তারা সরকারের প্রতি একটি সুপারিশনামাও পেশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত চার বছরে এ খাতে বরাদ্দের বেশিরভাগই ছিল বড় বড় শহরকেন্দ্রিক। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত এ খাতে পরিচালিত ২০৭টি প্রকল্পের মধ্যে শুধু রাজধানীতেই বাস্তবায়িত হয়েছে ৫২টি। তবুও বিশুদ্ধ পানির নাগাল পাচ্ছে না রাজধানীবাসী।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ইত্তেফাককে বলেন, পানি ও স্যানিটেশন খাতে যে সকল প্রকল্প দেয়া হয়, তার মধ্যে অনেকগুলো অদরকারি।
ওয়াটার এইডের পরিচালক পার্থ শেখ বলেন, পানি শোধনাগার ও পাম্পগুলোকে যথাযথ পর্যবেক্ষণ করলেই সমস্যাটি সমাধান হবে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) চিকিত্সা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, দূষিত পানি পান করলে ডায়রিয়া, আমাশয় ও কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ হতে পারে।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি পুরোপুরি বিশুদ্ধ নয়। বিভিন্ন সময়ে এতে বহু ধরনের জীবাণু পাওয়া গেছে। এসব পানি পুনরায় বিশুদ্ধ না করে পান করা যাবে না। ব্যবহারেও জন্ডিসসহ রোগের ঝুঁকি রয়েছে।
দুর্গন্ধযুক্ত পানি নিয়ে কথা বলেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসীম এ খান। তিনি বলেন, প্রতিবছর চলতি মৌসুমে বুড়িগঙ্গার পানির দূষণ মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পানিতে কিছুটা দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। কারণ এ সময় নদীর পানিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যামোনিয়া ও এলজি থাকে। এগুলো ধ্বংস করার জন্য নির্ধারিত পারিমাণের চেয়ে বেশি ক্লোরিন ও অ্যালুমিনিয়াম সালফার ব্যবহার করা হয় যে কারণে পানি কিছুটা দুর্গন্ধময় হয়ে পড়ে।