নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েন সম্পর্কে সিলেটের দুই মেয়র প্রার্থী দুইরকম মতামত ব্যক্ত করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। একজন নির্বাচনকালে সেনা মোতায়েনের পক্ষে, আরেকজন বিপক্ষে। ১৮ দল প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সরকারি দল নির্বাচনে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, সিলেটে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করেছে। পুলিশ কাউকে গ্রেফতারের সাহস করতে পারেনি। তাই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগ করা প্রয়োজন।
অপরদিকে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না । এর আগেও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি নির্বাচন করেছেন এবং জয়লাভ করেছেন জনগণের সমর্থন থাকায়। এদিকে প্রবল বর্ষণ সত্ত্বেও প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা বেশ জমে উঠেছে। তবে বৃষ্টির কারণে কর্মীরা পোস্টার-ব্যানার নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। গতকাল অনেককে সাদা পলিথিন মুড়িয়ে পোস্টার লাগাতে দেখা যায়। পাড়া-মহল্লায় এখন শুধু নির্বাচনী আলোচনা। নির্বাচনী অফিসগুলোতে চায়ের আড্ডাও বেশ জমে উঠেছে। সর্বত্রই এক উত্সবমুখর পরিবেশ ।
ইতিমধ্যে প্রার্থীদের স্ত্রী-পরিবার-পরিজনও নেমে পড়েছেন জনসংযোগে। তবে ভোটাররাও অনেকটা সতর্ক। এখনি কথা দিচ্ছেন না কাউকে। সকলকেই হেসে হেসে সমর্থন দিচ্ছেন। সময় ঘনিয়ে এলে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বুঝে শুনে।
এবারের নির্বাচনে কিছুটা বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন নতুন প্রার্থীরা। তারা আগের বারের নির্বাচিত প্রার্থীর ব্যর্থতা সহজে তুলে ধরে নতুন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে আগের বারের নির্বাচিতরা পরীক্ষিত। তাদের দাবি- উন্নয়নে সচেষ্ট ছিলেন তারা সকলেই। তারপরও কিছু কিছু কাজ করতে না পারার ব্যর্থতার পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন এবং ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছেন ভোটারদের। তবে এবার ভরা বর্ষা মৌসুম বিশেষ করে বিগত সময়ে নির্বাচিত প্রার্থীদের একটু বেশি বেকায়দায় ফেলেছে। প্রবল বর্ষণে নগরীর রাস্তায়, বাড়িঘরে পানি উঠলে প্রতিদ্বন্দ্বী নতুন প্রার্থীরা জলবদ্ধতা ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসছেন। ভোটারদের বলছেন- পরিবর্তন প্রয়োজন। তবে এবার সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী, বিশেষ করে মেয়র প্রার্থী কম থাকায় দু'জনের প্রতিই মানুষের আগ্রহ বেশি। হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরীর প্রচারণার পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দু'জনই ভোটারদের সমর্থন আদায়ে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই প্রার্থীরই প্রধান লক্ষ্য সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষেরা।
নিজের স্বার্থ নয়, নগরবাসীর উন্নয়নকেই গুরুত্ব দেই- কামরান
১৪ দল প্রার্থী সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান নগরীর তোপখানা, মোগলটুলা, কাজিরবাজার, কাঙালিবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে জনসভায় বলেন, আমি জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করি। সব সময় নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে নগরবাসীর উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেই। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দুষ্কৃতকারীরা গ্রেনেড ছুঁড়ে বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের হুমকিতে ভয় পেয়ে আমি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হইনি। কামরান ১৫ জুনের নির্বাচনে আনারস প্রতীকে ভোট চেয়ে বলেন- "নগরবাসীর ভালোবাসাই আমার পুঁজি।"
নগর পিতা নয়, সেবক হতে চাই- আরিফুল
১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী ও নগর উন্নয়ন কমিটির সাবেক সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর জিন্দাবাজার, খাসদবির, কানিশাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগকালে বলেছেন "আমি নগর পিতা হতে চাই না। আমি নগরবাসীর সেবক হতে চাই।" তিনি বলেন, একবার সড়ক দুর্ঘটনার পর আমার দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে। এর পর থেকেই শাহজালাল(র;) এর পূণ্য ভূমির খেদমতে নিজকে উত্সর্গ করেছি। তিনি বলেন, আমার কাজ কর্ম নগরীতে দৃশ্যমান। তিনি তার প্রতীক টেলিভিশন মার্কায় ভোট চেয়ে বলেন জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান, রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন, নগরীর আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নসহ একটি আধুনিক পরিকল্পিত নগরী গড়তে চাই।
কাউন্সিলর প্রার্থী সুজ্জাদের বাসায় হামলা
ব্যানার লাগানোকে কেন্দ্র করে সিলেট সিটি করপোরেশনের ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাজ্জাদুর রহমান সুজ্জাদের বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদল ক্যাডাররা বৃহসপতিবার রাত ১২টার দিকে সুজ্জাদের সোনারপাড়াস্থ বাসায় হামলা চালায়। এ সময় তারা একটি মোটর সাইকেলে আগুন দেয়ারও চেষ্টা করে। শাহপরান থানার ওসি আক্তার হোসেন বলেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরেই এ ঘটনা। বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহীদ জিয়া স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের নামে সোনারপাড়া গলির মুখে একটি ব্যানার টাঙ্গিয়ে রাখেন ছাত্রদল নেতা উমেদুর রহমান উমেদ। বুধবার রাতে ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাজ্জাদুর রহমান সুজ্জাদের লোকজন সেই ব্যানারটি খুলে সেখানে কাউন্সিলরের একটি ব্যানার টাঙ্গিয়ে রাখেন। এ নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।