এক মাস যাবত্ দিদিয়ের দেশমের বক্তব্য বেশ বাস্তববাদী। বিশ্বকাপে দলে সম্ভাবনা নিয়ে কথাও বলছেন বেশ হিসাব করে। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ককে দোষ দিয়ে আর লাভ কি, হিসাব-নিকাশও যে বলছে বিশ্বকাপে ফরাসী দলটির সম্ভাবনা বেশ কম।
সত্যিই তাই, অনেকটা জেদ করেই দেশম দলে রাখেননি সামির নাসরির মত তারকাকে। বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র এক সপ্তাহ আগে ফরাসীদের জন্য আরো বড় দু:স্বপ্ন নিয়ে আসলো ফ্র্যাঙ্ক রিবেরির ইনজুরি। এতো কিছুর মধ্যেও দলটি যখন স্ট্যাডে পিয়েরে মাউরয় স্টেডিয়ামে গুণে গুণে আট গোল করলো জ্যামাইকার বিপক্ষে, তখন আবারও ভাবতে হচ্ছে জিনেদিন জিদানের উত্তরসূরীদের নিয়ে। হ্যাঁ, বিশ্বকাপের শুরু হবার ৭২ ঘণ্টা আগে আবারও ছড়িয়ে পড়লো ফরাসী সৌরভ। ব্রাজিলে পা রাখার আগে জয় দিয়েই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি সাড়লো ইউরোপিয়ান দলটি।
লিলের মাঠটিতে ফরাসী বাগানের সবচেয়ে সুগন্ধী ফুল হয়ে উঠলেন রিয়াল মাদ্রিদের ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমা। দুটি গোল করার পাশাপাশি তিনটি গোলে পরোক্ষ ভূমিকা ছিল তার। সাথে দুটি করে গোল করেছেন ব্লাইজে মাতুইদি অ্যান্টোনি গ্রিজম্যান। ইয়োহান কাবায়ে ও অলিভার গিরুদের কাছ থেকে আসা একটি করে গোলের সুবাদে সব মিলিয়ে স্কোরলাইনটা দাঁড়ালো ৮-০। এই দিয়েই জ্যামাইকার বিপক্ষে এই জয়টা ফ্রান্সের ইতিহাসেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। ১৯৯৫ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের ম্যাচে আজারবাইজানকে ১০-০ গোলে হারিয়েছিল ফ্রান্স।
রিবেরিকে হারালেও নিজেদের প্রচলিত ফর্মেশনের পরিবর্তন আনেননি দেশম। ৪-৩-৩ ফরমেশনে সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে অলিভার গিরুদের বাম পাশে রিবেরির উইং পজিশনে ছিলেন করিম বেনজেমা। ডান পাশে ছিলেন ম্যাথিউ ভ্যালবুয়েনা। অঙ্কের হিসাবটা ম্যাচের শেষেও বেশ ভালভাবেই মিলে গেল ফ্রান্সের জন্য।
বিশ্বকাপেও হিসাব মিলবে নাকি সেটা বলে দেবে সময়। তবে গত চার-পাঁচটা বিশ্বকাপের হিসাব দেখলে অবশ্য ফরাসীদের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে বলেই অনুমান করা যায়। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর ২০০২ সালে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়। ২০০৬ সালে আবারও সেই ফাইনাল। চার বছর আগে আফ্রিকায় আবারও প্রথম পর্বেই মৃত্যু ঘটলো ফ্রান্সের স্বপ্নের। সেই হিসাবে ফ্রান্সের যাত্রাটা এবার অনেক দূর পর্যন্তই হওয়া উচিত।
আত্মবিশ্বাস এনে দেয়া এক জয়ের পরও দিদিয়ের দেশমের কথা বার্তায় খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। ফ্রান্সের টেলিভিশন স্টেশন টিএফওয়ানকে তিনি বলেন, 'ম্যাচটা আমাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে। এরপরও বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আমরা নির্ভার হয়ে মাঠে নামতে পারবো না। সবাই ভাল খেলেছে। আমরা অনেক গোল করে জয়টা অনেক সহজ করে দিয়েছি। অনেক গোল করতে পারলে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাস আসে। পরিবেশটা এখন অনেক স্বাভাবিক। কিন্তু এই ম্যাচটা বিশ্বকাপের ব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা দেয় না।'
বিশ্বকাপটা ফরাসীদের জন্য শুরু হবে আগামী ১৫ জুন। হডুরাসের বিপক্ষে পোর্তো অ্যালেগ্রেতে ম্যাচ। যতই নিরাশাবাদী কথা বলুন না কেন দিদিয়ের দেশম নিশ্চিন্তভাবেই তাকিয়ে থাকবেন আরো বড় প্রাপ্তির দিকে। দলটা বিশ্বকাপ জিতে ফেললে যে, দেশম মাত্র তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে অধিনায়ক ও কোচ — দুই ভূমিকাতেই গড়বেন বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি।