সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবং ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে বিজয়ী হলে কি কি কাজ করবেন তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উভয়েই নিজেদের উন্নয়ন পরিকল্পনার লিখিত ইশতেহার দিয়েছেন। কামরান তার ২০ দফা ইশতেহারে নানা প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি গত মেয়াদে তিনি মেয়র থাকাকালে গৃহীত মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিলেটকে একটি 'আধ্যাত্মিক পর্যটন নগরী' হিসাবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন। অন্যদিকে আরিফুল হক চৌধুরী দিয়েছেন ১১ দফা ইশতেহার। এতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি তিনি সিলেটকে 'পরিকল্পিত আধুনিক নগরী' হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন।
কামরানের ২০ দফা :বদর উদ্দিন আহমদ কামরান তার ইশতেহারে বলেছেন, গত মেয়াদে তিনি মেয়র থাকাকালে সিলেট মহানগরীর জন্য নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও নগর বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ২০ বছর মেয়াদি একটি মাস্টার প্ল্যান চূড়ান্ত করেছেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি আবার বিজয়ী হলে উক্ত মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিলেটকে একটি আধ্যাত্মিক পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলা হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট যাতে সত্যিকারের একটি পর্যটন নগরীতে পরিণত হয় সেজন্য তিনি বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। নির্বাচিত হলে অতীতের মতো ভবিষ্যতেও দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে নগর ভবন পরিচালনা করবেন। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজমুক্ত নগরীতে মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে।
ইশতেহারে প্রতিশ্রুত ২০ দফার মধ্যে রয়েছে- মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, নতুন আরো স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা, যুব সমাজকে তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধকরণ, স্বাস্থ্যসেবার পরিধি আরো বাড়ানো ও নিশ্চিত করা, নগরীতে সকাল-বিকাল ভ্রমণ ও পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রাস্তাঘাট-ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণ ও সংস্কার, ফুটপাতের সৌন্দর্যবর্ধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা, রাস্তা-গুরুত্বপূর্ণ মোড় প্রশস্তকরণ ও রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এলইডি লাইট স্থাপন, নগরীর ব্যস্ততম বিভিন্ন মোড়ে ওভারব্রিজ নির্মাণ, ভূমিকম্পের ডেঞ্জারজোনে অবস্থিত সিলেটে যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জানমাল রক্ষায় দ্রুত উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয়, নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন, জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সকল ছড়া-খাল উদ্ধার ও খনন, হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, পানীয় জলের মাসিক চার্জসহ সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য সেবা অটোমেশন ও অনলাইনকরণ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা সমপ্রসারণ, নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজারে অবস্থিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের পর কারাগারের জায়গায় একটি আধুনিক পার্ক স্থাপন, ফ্লাইওভার ও রিং রোড নির্মাণ, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন এলাকার সীমানা সমপ্রসারণ এবং সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ-ছিনতাইকারীমুক্ত সিলেট মহানগরী গড়ে তোলা। কামরানের ইশতেহারে বিগত সময়ে তার মাধ্যমে নগরীতে সম্পাদিত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময়ে তিনি অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। অনেক কাজ এখন বাস্তবায়নাধীন। তাই অসম্পন্ন উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে আবারো তাকে বিজয়ী করার জন্য নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরিফের ১১ দফা
মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর ১১ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া তার প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে—সাইবার সিটি গড়ে তোলা, পানীয় জলের সমস্যার সমাধান, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, যানজট ও পরিবহন সংকট দূরীকরণ, শিক্ষা ও উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন নগরী গঠন ও প্রবাসী সেবাকেন্দ্র স্থাপন। ইশতেহারে বলা হয়, আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হলে তার কর্মজীবন ও বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও নগরবিদদের সমন্বয়ে সিলেট নগরীর জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন। এর প্রধান লক্ষ্য হবে সিলেটকে 'পরিকল্পিত আধুনিক নগরী' হিসেবে গড়ে তোলা। এছাড়া সিলেট কারাগারের জায়গায় আধুনিক সাইবার সিটি গড়ে তোলা হবে।
গত এক যুগে নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি দাবি করে আরিফ তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেন, নগরীর অনেক স্থানে নালা-নর্দমা দুর্নীতির মাধ্যমে বন্দোবস্ত প্রদান ও অবৈধ দখলদারদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে ছড়া-খাল উদ্ধার করে এগুলোর গভীরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে জলাবদ্ধতা দূর করা হবে।
নগরীর শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন এবং প্রতিটি মহল্লায় ছিন্নমূলদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া বিদেশের সাথে লিংক প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আরিফ ।