আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) একই সাথে দুই হাজার জনবল নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক উঠছে। অভিযোগ উঠেছে, চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা করে উেকাচ নেয়া হচ্ছে। আর এ অবৈধ কাজে জড়িত রয়েছেন বিসিএস শিক্ষা সমিতির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা। নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তার অনেকে এই সমিতির সদস্য হওয়ায় নেতাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দিতে সাহস পাচ্ছেন না। নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের কাজ করতে হচ্ছে।
কীভাবে পছন্দের লোক নিয়োগ দেয়া হবে- তার প্রক্রিয়া ও কৌশল নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও সমিতির মহাসচিব অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। জনবল নিয়োগের সাথে সমিতির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
অভিযোগ রয়েছে, সমিতির বেশ কয়েকজন নেতা ওই কলেজে রয়েছেন। এ কারণে অর্থ লেনদেন ও পছন্দের লোকদের বাছাই করার জন্য ওই কলেজের দুইটি কক্ষ ব্যবহার করা হচ্ছে। একসাথে দুই হাজার জনবল নিয়োগের ঘটনা মাউশির ইতিহাসে খুবই কম হয়েছে। এ কারণে এই নিয়োগের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে শতকোটি টাকা আদায়ের টার্গেট করা হয়েছে। মাউশির এক কর্মকর্তা বলেন, এত সংখ্যক জনবল নিয়োগে অনিয়ম হবে না এটা ভাবাও ঠিক হবে না। নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআর শীটের (উত্তরপত্র) মাধ্যমেই অনিয়ম হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। রাজধানীর একটি কলেজের শিক্ষক ও বিসিএস শিক্ষা সমিতির একজন সদস্য বলেন, শিক্ষা সমিতির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অতীতেও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এখনো তারা অবৈধভাবে অর্থ আদায়ে ব্যস্ত রয়েছেন। সমিতির নাম ভাঙিয়ে তারা নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকেন। তারা সমিতির অতীত ঐতিহ্য নষ্ট করছেন। সমিতির সভাপতি এ বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে সাধারণ শিক্ষকরা আশা করছেন।
মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন একই সঙ্গে বিসিএস শিক্ষা সমিতির সভাপতি। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা সমিতির নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, নিয়োগের বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে কোন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অনিয়মের বিষয় সুস্পষ্ট প্রমাণ পেতে হবে। তিনি বলেন, 'যে সব অভিযোগ এসেছে সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব অবগত আছেন। এখন কী করণীয় তারা এ বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দেবেন।' ফাহিমা খাতুন বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার জন্য একটি গ্রুপ হয়তো কাজ করছে।
দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে রেকর্ডসংখ্যক এক হাজার ৯৬৫ জন তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি কর্মচারী নিয়োগের জন্য সম্প্রতি আবেদন আহ্বান করে মাউশি। পদের বিপরীতে আবেদন করে প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার প্রার্থী।
পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী উচ্চমান সহকারী পদে গত ১৪ জুন ৩৯টি কেন্দে লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করে মাউশি। অন্যান্য পদে গত ২১ জুন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গত শুক্রবার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে মাউশির একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়োগের বিষয়টি বিলম্বিত হতে পারে।
অন্যদিকে শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষার ওএমআর শিট মূল্যায়নের কাজ এখনো শুরু হয়নি। শুধু স্ক্যানিং করা হয়েছে এবং উপস্থিত/অনুপস্থিত যাচাইয়ের কাজ এগিয়ে চলছে। সুতরাং উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজে কোন অনিয়মের অভিযোগটি আদৌ সত্য নয়।
কোন পদে কত নিয়োগ হচ্ছে: প্রদর্শক (পদার্থ) ৯২ জন, প্রদর্শক (রসায়ন) ৯৫ জন, প্রদর্শক (প্রাণিবিদ্যা) ৬৬ জন, প্রদর্শক (উদ্ভিদবিদ্যা) ৪৬ জন, প্রদর্শক (ভূগোল) ১০ জন, প্রদর্শক (মৃত্তিকা বিজ্ঞান) দুইজন, প্রদর্শক (সংগীত) একজন, প্রদর্শক (গার্হস্থ্য) ৩ জন, শরীরচর্চা শিক্ষক ৭৬ জন, গবেষণা সহকারী ৯ জন, সহকারী গ্রন্থাগারিক-কাম-ক্যাটালগার ৬৪ জন, সাঁটলিপিকার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর ২ জন, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক-কাম-কম্পিউটার অপারেটর ৪ জন, উচ্চমান সহকারী ৭১ জন, অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক ১৮৯ জন, স্টোর কিপার/ক্যাশিয়ার ১৩ জন, হিসাব সহকারী ৪৩ জন, ক্যাশিয়ার ৩৯ জন, স্টোর কিপার ৩৩ জন, মেকানিক-কাম-ইলেকট্রিশিয়ান ৩১ জন, বুক স্টার ২৯ জন, এমএলএসএস ৯৫৮ জন, সুইপার ৮৯ জন। সারাদেশের স্কুল-কলেজে শূন্য পদ পূরণে এ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নিয়োগ কমিটির প্রধান মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, নিয়োগে অনিয়ম হচ্ছে বলে সেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো সত্য নয়। তারপরও এ পর্যন্ত যে সব অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার প্রেক্ষিতে এখন মাউশির করণীয় কী সে বিষয়ে মতামত চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখা হবে।