স্বামীর সঙ্গে বিরোধের জেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন মিতা নূর
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা
আবুল খায়ের
স্বামীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে টিভি অভিনেত্রী মিতা নূর আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। মিতার সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, মিতাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। কারো প্ররোচনায় মিতা আত্মহত্যা করেছেন। তার মৃত্যুর জন্য প্ররোচনাকারীই দায়ী।
পুলিশ মিতা নূরের আত্মহত্যার ঘটনায় কারো প্ররোচনা রয়েছে কিনা তদন্ত করে দেখছে। এদিকে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আত্মহত্যাজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে মিতা নূরের।
গত ১ জুলাই সকালে মিতা নূরের গুলশানের ফ্ল্যাটে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর দুইদিন আগে স্বামী শাহনূর মজুমদার ওরফে রানা'র গুলশান এক নম্বর নিকেতন আবাসিক এলাকার অফিসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘ সময় ঝগড়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। পুলিশের মধ্যস্থতায় মিতা নূর ও স্বামীর মধ্যে একটি সমঝোতা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই মিতা নূর ও তার স্বামী রানার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া বিবাদ চলছিল। এমনও হয়েছে বড় ছেলেকে বাবা-মার ঝগড়া থামাতে হয়েছে। তবে মিতা নূরের আত্মীয়-স্বজন এই ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানতেন না।
জানা গেছে, প্রথমে স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনকে সন্দেহ করতেন। এক পর্যায়ে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ তুলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চলতেই থাকে। এর আগে মিতা নূর দুই দফা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
গুলশান জোনের উপ পুলিশ কমিশনার লুত্ফুল কবীর বলেন, অভিনেত্রী মিতা নূরের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ছাড়া অন্য কোন বিষয় পাওয়া যায়নি। তবে অন্য কারণগুলোও তদন্ত করে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
ময়না তদন্তকারী চিকিত্সক মিতা নূরের ডান হাত, ডান বগল ও বাম পায়ে আঘাতের চিহ্নের আলামত পেয়েছেন। তবে এ আঘাত তার মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয় বলে জানান চিকিত্সক। মৃত্যুর আগে তাকে মারধর করা হতে পারে। এগুলো সেই চিহ্ন হতে পারে বলে ধারণা করছে চিকিত্সক।
গত সোমবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে মিতা নূরের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। পুলিশ সুরতহাল রিপোর্টে ভিসেরা পরীক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন। এ কারণে চিকিত্সক তার ভিসেরা পরীক্ষার জন্য মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছেন।
ময়না তদন্তকারী চিকিত্সক ডা. আবুল খায়ের বলেন, মিতা নূর আত্মহত্যা করেছেন এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। তবে ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর তার পূর্ণাঙ্গ ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করবেন বলে জানান। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাবিব-উজ-জামান মিতা নূরের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে একই ধরনের বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ময়না তদন্তকালে তিনি উপস্থিত ছিলেন। গত সোমবার সকালে গুলশান দুই নম্বরে ১০৪ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর এপার্টমেন্টের ষষ্ঠ তলার ফ্ল্যাট থেকে মিতা নূরের ঝুলন্ত লাশ পুলিশ উদ্ধার করে। তার পিতা ফজলুর রহমান বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন।
গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, মিতা নূরের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে একজন অফিসারের নেতৃত্বে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তার স্বামীসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
গতকাল মিতা নূরের বাসায় গিয়েছিলেন ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দৌলাহ। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, মানবকল্যাণ সোসাইটির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন মিতা নূর। এ সংগঠনের সূত্রেই তিনি মিতা নূরকে চিনতেন। তিনি বলেন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই মানুষটি আত্মহত্যা করতে পারেন না।