জাতীয় সংসদে গ্রামীণ ব্যাংক ও নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনূস সেন্টার। গত ২৬ জুন সংসদে প্রদত্ত অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে 'মিথ্যা' বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল ইউনূস সেন্টারের এক প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের অর্থমন্ত্রীর নিকট থেকে একজন সম্মানিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংসদে দাঁড়িয়ে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য কেউ আশা করে না। গ্রামীণ সামাজিক ব্যবসার প্রতিষ্ঠানগুলো সবই ইউনূসের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের বক্তব্যের বিরুদ্ধে ইউনূস সেন্টার উল্লেখ করেছে, বক্তব্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। গ্রামীণ নামধারী সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। প্রফেসর ইউনূস বিভিন্ন সময়ে বহুবার বলেছেন কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তার ব্যক্তিগত একটি শেয়ারও নেই। অর্থমন্ত্রী যদি একটি কোম্পানিও দেখাতে পারেন যেখানে ড. ইউনূসের এক বা একাধিক ব্যক্তিগত শেয়ার আছে তাহলে মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করার আর কোন প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। যদি তা দেখাতে না পারেন তাহলে সংসদে একজন সম্মানিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য দেয়ার জন্য মন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত হবে।
ড. ইউনূস গ্রামীণফোন থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ডিভিডেন্ড নিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিষয়ে ইউনূস সেন্টার উল্লেখ করেছে, যে প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূসের কোন শেয়ার নেই, এমন কি স্টক মার্কেট থেকে কেনা শেয়ারও নেই, সেখান থেকে ড. ইউনূস কীভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা ডিভিডেন্ড নিলেন সেটা অর্থমন্ত্রীকে সংসদের নিকট এবং তার মাধ্যমে জাতির নিকট ব্যাখ্যা করে বলতে হবে। অথবা মিথ্যা বলার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।
'ইউনূস সাহেবের কোম্পানিগুলোর পরিচালক ছিলেন তার তিন ভাই। বাকি কয়েকজন উনি নিয়োগ করেন, যারা লভ্যাংশ নেন না' অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ড. ইউনূসের মাত্র দুই ভাই ঢাকাতে থাকেন। তারা হলেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইব্রাহীম এবং মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর ড. ইউনূসের কোনো প্রতিষ্ঠানের কোন পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত নন। প্রফেসর ইব্রাহীম তার নিজস্ব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার কারণে চারটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সদস্য। এই চারটি প্রতিষ্ঠানই মুনাফাবিহীন স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এতে পরিচালনা পর্ষদের কারো আর্থিক সুবিধা পাবার কোন উপায় নেই। প্রফেসর ইউনূসের অন্য কোন ভাই গ্রামীণ নামধারী কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত নন।
প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয় ১৯৯৯ সালে ড. ইউনূসের বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হবার আগে জুলাই, ১৯৯৯ মাসে পরিচালনা পর্ষদের ৫২তম বোর্ড সভায় স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ড. ইউনূস তার অবসর গ্রহণের বিষয়টি বোর্ডকে অবহিত করেন। বোর্ড গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশের ১৪নং ধারা মোতাবেক এ মর্মে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, যতদিন পর্যন্ত পরিচালকমণ্ডলী অন্য কোন সিদ্ধান্ত না নিবে ততদিন পর্যন্ত প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে বহাল থাকবেন। পরবর্তীতে ৩১ ডিসেস্বর, ১৯৯৯ তারিখ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ড. ইউনূসের নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে আপত্তি উত্থাপন করে। উক্ত আপত্তির প্রেক্ষিতে গ্রামীণ ব্যাংকে ২০ জুন, ২০০১ তারিখে পরিপালন প্রতিবেদনে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদন দেবার বিষয়টি উল্লেখ করে। পরিদর্শন প্রতিবেদনের এই অনিষ্পত্তিকৃত বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের তিনজন করে কর্মকর্তার সমন্বয়ে ১৫ জানুয়ারি, ২০০২ তারিখে একটি যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। যৌথ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ব্যাপারে গ্রামীণ ব্যাংক এতদসংক্রান্ত কাগজপত্রসহ পুনঃপরিপালন প্রতিবেদন প্রেরণ করে। পুনঃপরিপালন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে বিবেচনা করে।
মন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে ইউনূস সেন্টার উল্লেখ করেছে, ড. ইউনূস ইতিপূর্বে কয়েকবার গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অবসরে যাবার চেষ্টা করেছিলেন। এতে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মচারি এবং ঋণগ্রহিতার মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই তিনি মসৃণভাবে দায়িত্ব হস্তান্তরে অর্থমন্ত্রীর সাথে বেশ কয়েকবার সাক্ষাত্ করে এ ব্যাপারে তার সহযোগিতা চান।
গ্রামীণ ব্যাংক বোর্ডের গ্যারান্টিতে সরোজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গ্রামীণ টেলিকম ঋণ নেয়, অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের জবাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এটা মিথ্যা বক্তব্য। অর্থমন্ত্রী গ্রামীণ ডানোনের বিষয়ে ইউনূস সেন্টার উল্লেখ করেছে, মন্ত্রীর দেয়া তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।