দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র পাড়ের মানুষদের দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে খাবার পানির সংকট। দূর-দূরন্ত থেকে পানি এনে খেতে হতো তাদের। সঙ্গে ছিল আর্সেনিকের সমস্যা। পানির জন্য এই দুর্ভোগ দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল এলাকার মানুষের নিত্যদিনের ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই ভোগান্তি দূর করতে কাজ করে যাচ্ছে। মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনও সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। লবণাক্ততা ও আর্সেনিকমুক্ত কয়েক হাজার টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। যৌথভাবেই চলছে দেখ-ভাল। নষ্ট হলে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা হচ্ছে।
আর্সেনিক প্রাদুর্ভাব এলাকা এবং লবণাক্ত পানির অঞ্চলে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহের জন্য সরকারের হাইসাওয়া (হাইজিন, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার সাপ্লাই) প্রকল্পের অধীনে সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার বিশেষ নলকূপ বসানো হয়েছে। নলকূপগুলোর আকৃতি ও ব্যবহার সাধারণ নলকূপের মত হলেও এর গভীরতা প্রায় সাড়ে আটশ ফুট (গভীর নলকূপের গভীরতার প্রায় সমান)। গ্রামে সহজে মেরামতকারী পাওয়া যায় না। সহজে মেরামতকারীকে পাওয়ার ব্যবস্থাটি করে দিয়েছে গ্রামীণফোন। সামাজিক দায়িত্ব পালন কর্সসূচির অংশ হিসেবে গ্রামীণফোন জেলা শহরগুলোতে চালু করছে টেলিমেডিসিন সেবা। সম্প্রতি ঢাকার বাইরে যশোর জেলায় এই সেবা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। গত শুক্রবার যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ই-সেবা কেন্দ্রে টেলিমেডিসিন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন যশোর জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান। সরকারের তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বেসরকারি আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং গ্রামীণফোনের চুক্তি অনুযায়ী এই টেলিমেডিসিন সেবা বিস্তৃত করা হচ্ছে। গ্রামীণফোন টেলিমেডিসিন সেবার জন্য প্রযুক্তি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করে দিচ্ছে। যশোরের জেলা প্রশাসক জানান, এর মাধ্যমে দেশের আরো কয়েকটি স্থানে সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছেন বলে তথ্য এসেছে। যশোরবাসীও যশোরে বসে কার্যকরভাবে ঢাকার নামকরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারবেন। গ্রামীণফোন কর্মকর্তা ডা.আরকানুল ইসলাম বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় এবং পর্যায়ক্রমে আরো বিস্তৃত পরিসরে টেলিমেডিসিন চালুর জন্য প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি সহায়তা দেয়ার ইচ্ছে রয়েছে গ্রামীণফোনের।
সরেজমিনে বাগেরহাট জেলার লবণাক্ত পানির অঞ্চল ফকিরহাট উপজেলার পিলজং ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান শামীম হাসান জানান, এই বিশেষ নলকূপগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুজন কেয়ারটেকার আছেন। যারা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই তদারকির দায়িত্ব পালন করেন। গ্রামীণফোনের উদ্যোগে মোবাইল ফোনে মিস্ত্রি খুঁজে পাওয়া সহজ হয়ে গেছে। এখন কেয়ারটেকারের কাছে থাকা গ্রামীণফোনের ফ্রি সংযোগ ব্যবহার করে ২৭৬৫ নম্বরে নলকূপের গায়ে লেখা নম্বরটি লিখে এসএমএস করলেই তা চলে যায় ওই এলাকার জন্য তালিকাভুক্ত মিস্ত্রি এবং ওই অঞ্চলের হাইসাওয়া প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে। মিস্ত্রি মেসেজ পাওয়া মাত্রই দ্রুত নলকূপ মেরামত করে তার গ্রামীণফোনের ফ্রি নম্বর থেকে একই নম্বরে আরো একটি মেসেজ পাঠিয়ে দিলে ওই এলাকার হাইসাওয়া প্রকল্পের কর্মকর্তারা জেনে যান নলকূপটি মেরামত হয়েছে। গ্রামীণফোনের সিএসআর প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ডা. আরকানুল ইসলাম ইত্তেফাককে জানান, সারাদেশে হাইসাওয়া প্রকল্পের ৩০ হাজার নলকূপের জন্যই গ্রামীণফোন এই সেবা দিচ্ছে।