স্বপ্ন ছিল দেশের মানুষের সামনে বিশ্বকাপের ট্রফি তুলে ধরার। স্বপ্ন ছিল মাত্র ২২ বছর বয়সেই ফুটবল অমরত্বের শিখরে উঠে যাওয়ার। কিন্তু হল না! কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে মেরুদণ্ডের ইনজুরি নিয়ে ছিটকে পড়তে হল নেইমার জুনিয়রকে। তিনি নেই তো নেই ব্রাজিল। সেমিফাইনালে সেলেচাওরা বিধ্বস্ত হল জার্মানির কাছে। মারাকানার কান্না মুছে ফেলার মিশন নিয়ে মাঠে নামা ব্রাজিল ফিরলো মিনেইরোর কান্না নিয়ে। আর আকাশে-বাতাসে কেবল একটাই আফসোস — 'ইশ! যদি নেইমার থাকতেন!'
আজ বাদে কাল ফাইনাল। ব্রাজিলের জন্য ফুটবল উপাসনার কেন্দ্রবিন্দু মারাকানা স্টেডিয়ামে খেলবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষ জার্মানি। নেইমার এই ম্যাচে বাজি ধরছেন নিজের ক্লাব সতীর্থকে নিয়ে। ক্ষুদে এই তারকার চাওয়া বার্সেলোনা তারকা লিওনেল মেসির হাতেই উঠুক বিশ্বকাপ। জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার দু'দিন বাদে এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন নেইমার। পরনে ছিল চিরচেনা হলুদ জার্সি। তাতে শত শত ভক্তের শুভেচ্ছা বাণী লেখা। সংবাদ সম্মেলনে বসে নেইমার কিন্তু শুভকামনা জানালেন মেসিকেই, 'জার্মানি অনেক ভাল দল। তবে আমি চাইবো শিরোপা উঠুক আর্জেন্টিনার হাতে। আমার দুই ক্লাব সতীর্থ লিওনেল মেসি ও হ্যাভিয়ের মাশেরানোকে আমি আগাম অভিনন্দন দিয়ে রাখছি।'
বার্সেলোনার হয়ে ২৭৭ ম্যাচে ২৪৩ গোল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৮৬ ম্যাচে ৬৭টি, ছয়টি লা লিগার শিরোপা, তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চারটি ব্যালন ডি'অরের সেরার মুকুট—এতো সব অর্জন তার পায়ের তলায় এসে লুটিয়ে পড়েছে। কিন্তু সর্বকালের সেরা হতে তো বিশ্বকাপ জিততে হবে। অনন্য কীর্তিগুলো তাই ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল বিশ্বকাপে বড় কিছু করতে না পারার কারণে। তাই লিওনেল মেসি হয়ে উঠতে পারেননি ম্যারাডোনা, পেলে, রোনালদো কিংবা জিদান। হয়ে উঠতে পারেননি কিংবদন্তী।
কিন্তু এবারের ব্যাপারটা ভিন্ন। ভিনগ্রহের ফুটবলার ব্রাজিলে এসে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। গোল করা, বল বানিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে দলের সব পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে তাকে ঘিরে। পাঁচ ম্যাচে চার গোল করেছেন, এমনকি কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে তার বানিয়ে দেয়া বল থেকেই গোল করেছেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। সেমিফাইনালে একটু পিছনে নেমে খেলেছেন, সেখানেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। ফাইনালেও তাকে ঘিরেই আবর্তিত হবে কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলার সব পরিকল্পনা।
ব্রাজিলেও এখন সাজ-সাজ রব। দেশটিতে অবস্থান করছেন প্রায় লাখ খানেক আর্জেন্টাইন সমর্থক। ব্রাজিলিয়ান বা আর্জেন্টাইন — প্রত্যেকেরই চাওয়া আর্জেন্টাইনদের শিরোপা। আর সেটা এনে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা মেসিকেই রাখতে হবে। গোটা ক্যারিয়ারে মেসির যা কীর্তি, সেসব মনে রেখে এবারের বিশ্বকাপটা তার হাতেই সবচেয়ে বেশি মানায় বলে মনে করছেন নেইমার, 'মেসি তার ক্যারিয়ারজুড়ে যেসব অবিশ্বাস্য কীর্তি করে গেছে, তাতে একটা বিশ্বকাপ তার অবশ্যই প্রাপ্য। আমি ফাইনালে তাকেই সমর্থন করবো।'
নেইমারের এখন পুরোদমে চিকিত্সা চলছে। গত শনিবার তাকে হেলিকপ্টারে করে সাও পাওলোতে নিয়ে আসা হয়, গত বৃহস্পতিবার তিনি দলের সাথেও দেখা করেছেন। আগামী ৫ আগস্ট তিনি ব্রাজিল ছাড়বেন। যোগ দিবেন কাতালান ক্লাবের অনুশীলন ক্যাম্পে। নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সেখানেই নিজেকে প্রস্তুত করে তুলবেন!