প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, জয় বাংলা না বলে যারা উর্দু ভাষায় জিন্দাবাদ বলে কিংবা জিন্দাবাদের অনুসারী তারা পাকিস্তানের এজেন্ট। তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলে এখনো মনেপ্রাণে পাকিস্তানি হয়ে যেতে চায়। তবে পাকিস্তানের এজেন্টদের পাকিস্তানেই ফিরে যেতে হবে। তিনি বলেন, একাত্তরে যেমন রাজাকার ছিল, এখনো তাদের মতো দেশের বিরুদ্ধে কিছু ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে। দেশের রাজনীতিতে এখনো এমন একটি পক্ষ আছে যারা স্বাধীনতায়ই বিশ্বাস করে না।
গতকাল শুক্রবার বিকালে হোটেল লেকশোরে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে গণতন্ত্র ও ভবিষ্যত্ বাংলাদেশ' শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সমুদ্র জয় নিয়ে যারা টকশোতে বিতর্ক করছেন কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন, তাদের মৌলিক শিক্ষার অভাব রয়েছে। যে দল বাইরে বসে হাউকাউ করে তাদেরও শিক্ষার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে সমুদ্রের বিশাল অংশ জয় করে নিয়েছে এটা যারা বুঝতে পারেননি, তাদের ক্লাস ওয়ানের অংকও না বোঝার পরিচয় বহন করছে। জয় বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের রায়ে ভারত পেয়েছে ছয় হাজার বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার। ভারত ও বাংলাদেশের প্রাপ্তির পার্থক্য তারা করতে পারছেন না?
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের শিক্ষার দৌড় কতদূর আমরা তা ভালো করে জানি। কিন্তু ইদানিং তাদের পক্ষে যারা সাফাই গাইছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ ও পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড গণতান্ত্রিক ছিল না উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, দেশে ১৬ কোটি মানুষ বাস করেন, এদের মধ্যে ৯ কোটি ভোটার। যদি কোনো পরিবারের ১৬ ব্যক্তি কোনো বিষয়ে একমত হতে না পারেন, তবে ৯ কোটি মানুষ কোনো বিষয়ে যে একমত হবেন এমন কোনো কথা নেই, কিন্তু অধিকাংশ লোকের মতামত নিয়ে সরকার পরিচালনা করাই গণতন্ত্র।
দেশবাসীর উদ্দেশে জয় বলেন, ১৯৮০ সালের ম্যাপে দেখবেন, তালপট্টি বাংলাদেশের নেই। তার মানে কি সে সময় জিয়াউর রহমান ভারতকে তালপট্টি দিয়ে দেন?
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তালপট্টি দ্বীপ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করতে মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে। যারা তালপট্টি নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছেন, তাদের বলবো আপনারা সেখান থেকে ঘুরে আসুন। আশা করি, তালপট্টিতে সাঁতার কাটতে পারবেন। যতই মিথ্যাচার করা হোক না কেন সত্যের জয় এক সময় হবেই।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আপনারা দু'বার ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু সমুদ্রসীমা নির্ধারণ নিয়ে কোন উদ্যোগ নেননি কেন? আপনারা আন্তর্জাতিক আইনজীবী নিয়োগ করলেন না কেন?
জয় বলেন, পঁচাত্তরের পর আমাদের গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। অনেক জুলুম, নির্যাতন সহ্য করে গণতন্ত্রের পথে এসেছি। গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট দেয়া নয়। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মুক্তমতের স্বাধীনতাই গণতান্ত্রিক অধিকার। স্বৈরাচারদের আমলে আমাদের সে অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, মানুষ খারাপ খবর শুনতে বেশি পছন্দ করে। তারা ভালো খবর শুনতে চায় না। প্রতিযোগিতার কারণে মিডিয়াতে সত্যের সঙ্গে অনেক মিথ্যা মিশে যায়। আবার রাজনীতিবিদদের মিডিয়াকে ম্যানেজ করে চলতে হয়। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর থেকে অনেক মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে। তবে মিথ্যা প্রচার করে কিছুদিন চালানো যায়, বেশি দিন তা স্থায়ী হয় না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় দাবি করে জয় বলেন, বর্তমান সরকার বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান করেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা যে পরিমাণ বই বিতরণ করি বিশ্বের অন্য কোনো দেশ তা পারেনি। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।
আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সংগঠিত করতে আপনার পরিকল্পনা আছে কি না একজন অংশগ্রহণকারীর এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, আমার পরিকল্পনা আগামী সাড়ে চার বছর সারা দেশ ট্যুর করার। এর মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করব। শনিবার আমি রংপুরের পীরগঞ্জে যাচ্ছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা এখন দেশের কাজে মনোযোগী হয়েছেন। তারা দলকে সময় না দিতে পারলেও কীভাবে দলকে আরও শক্তিশালী করা যায়, সেটা নিয়ে আমি কাজ করছি। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের ১৬ লাখ সদস্যের কেন্দ ীয় ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি।
একজন অংশগ্রহণকারী প্রশ্ন করেন, অনেকে টক শোতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সজীব ওয়াজেদ জয়কে সমান্তরাল করে দেখেন। এ বিষয়ে আপনার মত কী? জবাবে জয় বলেন, আমি তাদের মুর্খ মনে করি। তাদের প্রতি অনুরোধ, একদম বকলম হয়ে কথা বলবেন না।
অনলাইনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কীভাবে অপপ্রচার বন্ধ করা যায় এমন প্রশ্নের জবাব জয় বলেন, অনলাইন বিশাল জায়গা। সেখানে কন্ট্রোল করা যায় না। তারা শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলে না, আমার ফেসবুক পেজেও বাজে কথা লেখে। আমি সেগুলো ডিলিট করে দিই।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের, শিক্ষাবিদ ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত, সমকাল পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ এ আরাফাত।