চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টিতে (এরশাদ) নেতৃত্বের কোন্দল চরমে উঠেছে। চট্টগ্রাম মহানগর জাপায় বর্তমানে দুইটি কমিটি সক্রিয় রয়েছে। এক কমিটিতে সোলায়মান আলম শেঠ সভাপতি ও তপন চক্রবর্তী সাধারণ সম্পাদক। গত বছরের ৩০ মার্চ নগরীর মুসলিম হলে দলীয় প্রধান এরশাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে ৩ বছরের জন্য এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মেহজাবীন মোরশেদ। গত ৫ জুন মহানগর কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই সিদ্ধান্তের পর থেকেই সোলায়মান শেঠ ও মেহজাবীন মোরশেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। উভয়েই নিজেকে বৈধ দাবি করে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছেন। পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগারমূলক বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি দিয়ে মাঠ গরম করে রেখেছেন। বিরোধ নিরসনে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোলায়মান আলম শেঠ গতকাল বৃহস্পতিবার ইত্তেফাককে বলেন, এসব নোংরা পলিটিকসের পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। গত ৫ জুন তিনি মেহজাবীন মোরশেদের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক কমিটির একটি প্রস্তাব চেয়ারম্যান স্যারের (হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ) কাছে পাঠান; কিন্তু স্যার এই 'তথাকথিত' আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেননি। কিছু পত্রিকায় চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি ভেঙে দেয়ার খবর প্রকাশিত হয় যা স্যার জানেন না। সোলায়মান শেঠ নিজেকে মহানগর জাপার সভাপতি দাবি করে বলেন, নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাউন্সিলের মাধ্যমে গত বছর বর্তমান কমিটি গঠিত হয়েছিল। এই কমিটির মেয়াদ তিন বছর। বৈধ কমিটিকে কেউ গায়ের জোরে ভেঙে দিতে পারেন না।
জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সাথে বিরোধের কারণ জানতে চাইলে সোলায়মান শেঠ বলেন, তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের কাছের লোক বলে মনে করেন। যদিও আওয়ামী লীগ তাকে মাত্র ৭ দিনের জন্য উপদেষ্টা বানিয়েছিল। ফজলে করিম চৌধুরীর জন্য বাবলু রাউজানে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীতে নির্বাচন করেন। অথচ নির্বাচনের আগে ও পরে তিনি একবারের জন্যও চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির অফিসে আসেননি। মহানগর জাতীয় পার্টির কর্মীদের সাথে তার কোনো সদ্ভাব নেই। কয়েকদিন আগে আ.জ.ম নাছির উদ্দিন (মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) জিয়াউদ্দিন বাবলুকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। আমি ওই সংবর্ধনায় না যাওয়ায় বাবলু সাহেব আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। সোলায়মান শেঠ বলেন, আমি বেঁচে থাকলে জিয়াউদ্দিন বাবলুকে আর কখনো চট্টগ্রাম মহানগর থেকে নির্বাচন করতে দেবো না।
সোলায়মান শেঠ বলেন, চেয়ারম্যান স্যার আমাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, সোলায়মান তুমিই চট্টগ্রাম মহানগরীর দায়িত্বে থাকবে। মেহজাবীন এ কাজ পারবে না। চট্টগ্রামে আমাদের ইফতার মাহফিল যাতে সুষ্ঠুভাবে হতে পারে সেজন্য স্যার সিএমপি কমিশনারকে ফোন করে আমাকে সহযোগিতা করতে অনুরোধ করেছেন। এছাড়া ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) আমাকে কার্ড পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি উল্লেখ করেই।
এ বিষয়ে মেহজাবীন মোরশেদ ইত্তেফাককে বলেন, সোলায়মান শেঠ সাহেব মিথ্যা তথ্য দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং একটি বড় দলের প্রধান। তিনি পুলিশ কমিশনারের কাছে ফোন করে ইফতার মাহফিলের ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়েছেন, এমন দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক কমিটি এরশাদ স্যার অনুমোদন করেননি বলে যে দাবি সোলায়মান করেছেন তাও সত্য নয়। স্যারের স্বাক্ষর করা অনুমোদন পত্র আমার কাছে রয়েছে। চিঠি দেয়ার পর স্যার আমাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দলের অন্য এমপিরাও আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। স্যার সবসময় আমাকে 'বউমা' বলে ডাকেন। আমাকে তিনি ফোন করে বলেছেন, বউমা আমি জানি চট্টগ্রামের জন্য তুমি সবচেয়ে উপযুক্ত। তাই তোমাকেই এ দায়িত্ব দিলাম।
মেহজাবীন মোরশেদ আরো বলেন, আমরা গত মঙ্গলবার স্যারের সাথে দেখা করেছি। স্যার ঈদের পর চট্টগ্রামে আসবেন। আমরা লালদীঘি ময়দানে কাউন্সিল করে পূর্ণাঙ্গ মহানগর কমিটি গঠন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এছাড়া যারা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত রয়েছেন তাদের ব্যাপারেও অচিরেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।