সেলফোনের কুউ-ক শব্দটা শুনেই ঘুম ভেঙে গেল নেলীর। এত নরম আর মৃদু একটা শব্দে তার ঘুমটা ভেঙে যাওয়াতে সে ভীষণ বিরক্ত হলো। তার মানে ঘুমটা গভীর হচ্ছে না। একটা বই পড়তে পড়তে এমনিতেই অনেক দেরিতে ঘুমিয়েছে সে। ভীষণ বিশ্রি ব্যাপার—ঘুম গভীর হচ্ছে না। সুস্বাস্থ্যের জন্য গভীর ঘুম অত্যন্ত জরুরি। চেহারা ভালো থাকার জন্য তো বটেই। সমস্যাটা কী! পঁয়তাল্লিশ খুব কি একটা বেশি বয়স! এখুনি কেন এসব আলামত! কি জানি! লোকজন তো আজকাল উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলছে। আগের চেয়ে সুন্দর লাগছে, কোথা থেকে নির্যাস সংগ্রহ করছে এই ধরনের কথাবার্তা। শুনে হাসি পেলেও ভালোও যে লাগে না মিথ্যে কথা, তবে বিশ্বাস করতে একটু ইয়ে মতোন লাগে! তাকে খুশি করার তো কোনো দরকার নেই! সে কোনো তারকা নয়। না প্রিন্টিং মিডিয়া না ইলেকট্রনিক মিডিয়ার। একেবারে খাঁটি পাবলিক যাকে বলে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে কেউ ভুলেও তাকায় না। কোনো সাহায্যের জন্য চিত্কার করলেও কেউ এগিয়ে আসবে বলে মনে হয় না।
বয়স বেশি হয়ে গেলে সৌন্দর্যের আর কিছুই থাকে না, কথাটা একেবারে ঠিক নয়। একেক বয়সের একেক রকমের সৌন্দর্য। রাস্তায় একদিন এক বুড়োকে দেখে হঠাত্ থমকে দাঁড়িয়েছিল নেলী। বোঝা যাচ্ছে বুড়ো হয়েছে কিন্তু অদ্ভুত একটা জ্যোতি বের হচ্ছে ভদ্রলোকের চেহারা থেকে। বয়স সংক্রান্ত পুরোনো ধারনাটা যে অনেকটাই মানসিক সেদিনই বোধগম্য হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে সৌন্দর্যের পরিবর্তন হয়। তবে কেমন করে এই জ্যোতি চেহারায় ধরে রাখা যায়, বিষয়টাতে মনোনিবেশ করেছে সে। পড়াশোনাও করছে। শাক-সবজি শষ্য জাতীয় খাবার বেশি করে খাচ্ছে। মধু আর কাঠবাদাম রাখছে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়।
ইচ্ছে না হলেও কৌতূহল দমন করতে না পেরে এসএমএসটা ওপেন করল নেলী। সময় দেখল রাত তিনটা। কোন গাধার বাচ্চার মাথা খারাপ হলো দেখা যাক! সেলোফোনের ব্যবহার পর্যাপ্ত হওয়ায় মানব প্রজাতির মনোজগতের অলিগলি প্রকাশ হওয়ার সুযোগ অবারিত হয়েছে। বয়স টয়সের ধার ধারছে না, উল্টোপাল্টা ভাব প্রকাশ করেই ধন্য হচ্ছে! কান দিয়ে শুনলেও নেলীর মুখ হা হয়ে যাচ্ছে!
একটা চোখ প্রায় বন্ধ রেখে আর একটা চোখ অর্ধেকটা খুলে ফোন স্ক্রিনে শব্দটি দেখে তার দুটো চোখই বড় করে খুলে গেল। কম্বলের নিচে সোজা হয়ে শুলো নেলী। সর্বনাশ! ‘চ’ অক্ষরটি দিয়ে প্রচলিত যে গালিটা সারাজীবনে সে একবারের জন্যও মুখে উচ্চারণ করার সাহস দেখায়নি সেই শব্দটি জ্বলজ্বল করছে। রাত তিনটায় পাঁচ অক্ষরের শব্দটিকে বীভত্সই মনে হচ্ছে তার। কে তাকে এই কদর্য শব্দটি লিখে পাঠাল আর কেনই বা দিল, বিশ্লেষণ করার জন্য এখনই উপযুক্ত সময় কি না মিনিট পাঁচেক ভাবার পর ঘুমিয়ে পরার চেষ্টা করে নিরাশ হলো নেলী। ‘চ’ দিয়ে যতগুলো গালি আছে অকস্মাত্ হাঁটি হাঁটি পা পা করে মাথায় এসে উপস্থিত! দাদরা তালে ধীরলয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে! নাম্বারটা তার সেভ করা কোনো নাম্বার নয় —এটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এমন কি হতে পারে ভুল করে চলে এসেছে? নাহ্ এত রাতে এরকম মহান ভুল নিশ্চয়ই কেউ করবে না! তাহলে হতে পারে একেবারেই অপরিচিত কেউ নয়, কিছুটা পরিচয় আছে। জ্ঞাতে অজ্ঞাতে কারও কোথাও আঁতে লেগেছে! কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তারপরেও চিনচিন একটা কষ্ট ঠেলে উঠতে চাইলে দৃঢ়ভাবে সেটাকে দূর করল নেলী। দুর্বল অনুভূতিগুলোকে সরিয়ে দেওয়াটাই এখন তার প্রথম কাজ। সঙ্কট মোকাবেলার সময় প্রথমে সেটাই করে সে। অনুশীলন করে রপ্ত করেছে। দ্বিতীয় কাজ হলো সম্ভাব্য মানুষের তালিকা করা। কিন্তু সেটা কি এখনই করা উচিত! কাল সকাল বেলা থেকেও শুরু করা যেতে পারে, এখন বরং ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত। কম্বল মুড়ে সেই চেষ্টাই করে নেলী। বৃথা চেষ্টা। ওই যে চোখ বড় করে খুলে গেল আর ছোট করা সম্ভব হচ্ছে না। মাথার ভেতর নানান চেহারার ছবি একটা করে পোস্ট হচ্ছে আর সরে যাচ্ছে। গত দু-একদিনে ফেসবুকে কিছু পোস্ট করেছিল কি না, ভাবে সে! নাহ্, সহজে সে কোনো কিছু পোস্ট করে না। মন্তব্য করা থেকেও দূরে রাখে নিজেকে। ফেসবুকে নানা বয়সের বন্ধুদের উপস্থিতি। তাই কিছু পোস্ট করতে হলে অনেক ভেবে করে নেলী। স্ট্যাটাস-এ লেখা বা মন্তব্য এড়িয়ে চলে। এক বন্ধু প্রতিদিন নিত্য-নতুন ঢংয়ের ছবি পোস্ট করে, তাকে একদিন না লিখে পারেনি—তোর কি ছবি তোলা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই! নেলী জানে প্রত্যেকটা মানুষের মানসিকতা ভিন্ন। অশ্লীল কোনো গালি বা কথা কোনোদিনও সে মুখ থেকে বের করতে পারেনি। এসব শব্দ উচ্চারণের সময় মানুষের অতি সুন্দর চেহারাটাতেও বর্জ্যের প্রলেপ পড়ে। লক্ষ করেছে নেলী।
বিষয়টাকে নেহাত্ একটা বাজে কাজ বলে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় আছে বলে মনে হচ্ছে না। কিভাবে আইডেন্টিফাই করা যায় তাহলে! সে কি রিং দেবে নাম্বারটাতে? না এটা সে করবে না। সহজ উপায়টা করতে হলে অর্থাত্ সরাসরি ফোন অফিসে গিয়ে নামটা বের করতে হলে সময় লাগবে। কিন্তু এই সময়টায় তো তার মাথাব্যাথ্যা থেমে থাকবে না। এমন তো নয় যে মাথাটাকে দেহ থেকে কিছু সময়ের জন্য সরিয়ে রাখবে! সম্ভব হলে খুব উপকার হতো মানবজাতির!
গত সাত দিনে কার কার সাথে তার যোগাযোগ হয়েছে, ভাবতে শুরু করে নেলী। প্রথমেই মেহেদির কথা মাথায় আসে। দু-বছর থেকে লাফাচ্ছে। বাসায় রূপবতী কমবয়সী একটা বউ সাথে দুটো ফুটফুটে বাচ্চা, ঘাড়ের ওপর টকটকে লাভজনক একটা ব্যবসা, তারপরেও ফুরুত ফুরুত করার জন্য প্রায় পাখনা মেলছে। অযথাই নেলীর কথা ভেবে ভেবে ঘাড়ের ব্যাথায় ভোগে, মেরুদণ্ডের ব্যাথায় ভোগে। চিকিত্সা করিয়েও নাকি কোনো লাভ হচ্ছে না। কোনো ইঙ্গিত তো দূরে থাক কথা হলেই কটকট করে কথা শোনায় নেলী, তারপরেও ক্রমাগত ঘাড়ের ব্যাথা তৈরি করে মেহেদি। হয় নাকি এরকম! সবচেয়ে বিচ্ছিরি ব্যাপারটা হলো, ভদ্রলোকের চল্লিশ নেলীর পঁয়তাল্লিশ। ওটা নাকি কোনো বিষয় না, বলে মেহেদি। তাহলে বিষয় কোনটা! প্রশ্নটার সরাসরি উত্তর দিয়েছে মেহেদি।
নিজেকে কেন ঠকাচ্ছেন!
আরে জ্বালা, সেটার জন্য আপনাকে মাথা খারাপ করতে কে নিয়োগ দিয়েছে! বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা! ওদের নিজেদের চরকায় আগে ঠিকমতো তেল তো দিক! এখনো চড়া মূল্যে ক্যানসারের ওষুধ বিক্রি কন্ট্রোল করতে পারেনি! তাহলে! অন্য কোনো নাম্বার থেকে কি সেই! এতদিন পর এরকম একটা গালি! নাহ, মেহেদি হতে পারে না। দু-বছর ধরে তার সাথে জানাশোনা নেলীর। যদিও মেহেদির মুখ খিস্তিতে কিছুটা অভ্যস্ত মানে এরকম শব্দচর্চার পরিচয় আছে, তারপরেও তাকে সন্দেহ করাটা ঠিক হবে না। একজন প্রেমিক মানুষ সম্পর্কে এরকম ভাবাটা বোধহয় অন্যায় হবে। তবে মারাত্মক একটা অভিযোগ করেছে মেহেদি। বলেছে, তার নাকি অনেকটাই ভাণ। ভাণ করতে পছন্দ করে নেলী। মুখে একরকম বললেও তার চোখ মুখ শরীরের ভাষা সব অন্যরকম। মেহেদির ভাষায়, দারুণ সেক্সি।
চারদিন আগে জমি বিক্রি নিয়ে একজনের সাথে কথা হয়েছে, কিন্তু ফয়সালা হয়নি, তাকেও লিস্টে রাখা যেতে পারে। হয়তো সে ভেবেছিল জমিটা খুব অল্প দামেই ছেড়ে দেবে নেলী! তাকে না করে দেয়নি, সময় দিয়েছে ভেবে দেখার। সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই এরকম বাজে শব্দ বলা তার পক্ষে কতটা যৌক্তিক সেটা ভাবনার বিষয়। তারপরেও কিছুই বলা যায় না। মানুষের মন বড়ই বিচিত্র। বিশেষ করে যাদের এই ধরনের শব্দপ্রীতি আছে তারা বেশ যত্রতত্র বলে ফেলে, লিখেও ফেলে। অনেকে নাকি কাব্যও করে! তৃতীয় জনের নামটা মাথায় আসতেই কম্বল টেনে পাশ ফিরল নেলী। পাক্কা খেলুড়ে! ভাব করে রবীন্দ্র রচনাবলী পড়ে পড়ে সিদ্ধপুরুষ হয়েছে! হয় কবিতা নয়তো গান সারাক্ষণ লেগেই আছে মুখে। কিন্তু কাজে একেবারে উল্টো। ওই কবিতা আর গান ঠোঁট পর্যন্তই! হূদয় বরাবর পৌঁছোতে পৌঁছোতে ট্রেন ফেল। শব্দটা কখনো তার মুখে শুনেছে কি না, মনে করার চেষ্টা করল নেলী। নাহ্, সেদিকে বাবু একেবারে পরিপাটি! সদ্য গোসল সেরে ধবধবে সাদা তোয়ালে জড়িয়ে বের হচ্ছেন এমন ধারা! প্রায় বশ করে ফেলেছিল তাকে। ভাগ্যিস চালাকিটা ধরতে সময় বেশি নষ্ট হয়নি! এতে অবশ্য একটা উপকার তার হয়েছে। রবীন্দ্র রচনাবলীতে নেলী পারদর্শী হয়েছে। যদিও বৌঠাকুরনের বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার বিষয়টা কোনোভাবেই সে এখনো মেনে নিতে পারে না। মনে হলেই অভিমানে ঠোঁট ফুলে ওঠে তার। যে মানুষটা সমস্ত নারীজাতির মনের গভীরে প্রবেশ করে রাশি রাশি গল্প সৃষ্টি করেছেন, তিনি কী করে অবহেলা করে গেলেন এরকম একটা কোমল হূদয়ের ভালোবাসার মানুষকে! কী নিষ্ঠুর!
ফেসবুকে পরিচিত একটা মেয়েকে আনফ্রেন্ড করতে হয়েছে। সেও কি হতে পারে! মেয়েটি বয়সে তার অনেক ছোট। একটা ছোট্ট কবিতার মতো দিয়েছিল নেলী, কিন্তু কবিতা নয়। সে ক্ষমতাও তার নেই। মেয়েটি কী বুঝেছিল, সেই জানে কিন্তু স্ট্যাটাস দিয়েছিল আক্রমণাত্মক। ওর কেন আঁতে লেগেছিল নেলী বোঝেনি। বিচিত্র মানবহূদয়। এসব মনের ওপর চাপ বাড়ায়। তাই আনফ্রেন্ড করা। ওর মুখেও এরকম শব্দের ব্যবহার দেখেনি, অতএব সে হতে পারে না। বাদ। আর কার কার কথা মনে করবে! এ মুহূর্তে মনেও আসছে না। এমনও তো হতে পারে অতি পরিচিত যাকে কল্পনাও করা যায় না তেমনই কেউ গালিটা দিয়ে মনের ক্ষোভ প্রশমিত করে চুপচাপ ঘাপটি মেরে বসে আছে! যার চেহারা দেখে মনে হবে এখনই কেঁদে ফেলবে! অসম্ভব কী?
এদিকে মাথা ঠাণ্ডা রাখার প্রক্রিয়ায় সজাগ হলেও শব্দটা পিঁপড়ের মতো হেঁটে বেড়াচ্ছে সাড়া গায়ে! এত বছর সেলফোন ব্যবহার করছে, এরকম একটা বিশ্রি বিষয় নিয়ে কোনোদিন নাজেহাল হতে হয়নি তাকে।
বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লো নেলী। পানি খেল। রান্নাঘরে গিয়ে অযথাই ঘুরে এল। ব্যালকনির দিকের দরজা খুলে বাইরে এল। ছায়া ছায়া আকাশ দেখল, জ্বলজ্বল চাঁদ-তারা দেখল। নিস্তব্ধ রাত দেখল। লাইটপোস্টের আলোর কাছে পোকাদের নাচানাচি দেখল। কিন্তু নিজের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়া আর কোনো শব্দ শুনতে পেলো না। এমনকি রাতপ্রহরী বেওয়ারিশ কোনো কুকুরের বিলাপও শোনা গেল না। শুধু শান্ত পবিত্র রাত আর ব্যালকনিতে সে একা। অস্থিরতা ঘিরে ধরলে এখানেই এসে দাঁড়ায় সে। মেঘেদের সাথে কোথাও কি দেখা যায়—তাঁকে! নাজিমকে! যেমনটা সবাই বলে! আর সে কারণেই নিশি রাতে একা সে আকাশ দেখতে আগ্রহ বোধ করে। কিন্তু কোথাও দেখা যায় না। কোনোদিনও না। সবই মিথ্যে কথা। ফিরবে বলে ঘুরে দাঁড়াতেই নেলীর মনে হলো, ফিস ফিস করে কেউ যেন কানের কাছে বলছে, কেন দেরি করছ! মুছে ফেলো সব। ইগনোর করো। ইগনোর করতে জানলে জীবন সহজ হয়।
দাঁড়িয়ে গেল নেলী। সত্যিই শুনেছে সে! আর একবার কি শোনা যাবে! অপেক্ষা করে নেলী। নাহ্, একবারই। কী প্রচণ্ড ভালোবাসত সে নাজিমকে। হারিয়ে গেল! বিশ্বচরাচর সব একপাশে রেখে রাস্তার মাঝখানে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে গেল। স্বপ্নগুলো টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে। হাসপাতালে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নেলীর হাত আঁকড়ে ধরেছিল। কী আকুতি সেই চোখে। বাঁচার আকুতি। এখনো তার হাতের স্পর্শ লেগে আছে হাতে, উষ্ণতা আর ভালোবাসায় মাখানো। ভালোবাসতে হয় কী করে, নাজিমই তাকে শিখিয়েছিল। মুখে বললেই ভালোবাসা হয় না, তার জন্য সময় লাগে, উপকরণ লাগে। এসব বিষয় যখন নেলী সবে বুঝতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই হারিয়ে গেল নাজিম! তারপর কত বছর কেটে গেল, এখনো নাজিমের ভালোবাসার সমুদ্রের ভেতরই ডুবে রইল নেলী। ভালোবাসি ভালোবাসি করে চারপাশে ছোট ছোট মাছেদের পদচারণা হলেও আলোড়ন তুলতে পারল না। পদচারণায় কম্পিত যে হয়নি কখনো, তা নয়। হয়েছে। তবে কেন জানি শরীর যদিওবা খানিকটা এগোতে চেয়েছে কিন্তু মন বাধা দিয়েছে। আর তাই শরীর ও মনের সংঘর্ষে মেজাজ খানিকটা খিটখিটে, বদমেজাজি আর সামান্য অহংকারী হয়ে সে দিনযাপন করছে।
একা একজন মানুষের সাথে একরকমের অহংকার ঘাপটি মেরেই থাকে। চারপাশে দু-চারজন বন্ধুবান্ধব আর দু-তিনজন আত্মীয়স্বজন ছাড়া আর কেউ নেই তার। খুব একটা প্রয়োজনও মনে করে না সে। এটাই কি তাহলে তার অপরাধ! সব প্রলোভন, হাতছানি, প্রতিশ্রুতি দূরে ঠেলে সে নিজের মতো করে একা। কোনো লোভই তাকে পরাস্ত করতে পারে না। সে একটা নদীর মতো। কেউ ঢেউ সৃষ্টি করতে চাইলে কিংবা আঘাত করলে কিছু সময়ের জন্য বিপর্যস্ত হয় তারপরেই আবার শান্ত।
এই জগত্-সংসার ছেড়ে যাওয়ার সময় নাজিম তার সব সুখ সাথে করে নিয়ে চলে গেছে। নতুন করে তার হারানোর আর কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু আছে বলে মনে হয় না। সে এখন বন্ধনমুক্ত পাখি।
ব্যালকনি থেকে সরে আসে নেলী। সেলফোন হাতে নিয়ে পা ঝুলিয়ে বিছানায় খানিকক্ষণ বসে থাকে তারপর ‘যত্তসব’ বলে ‘চ’ অক্ষরের শব্দটিকে মোছে। আর কী আশ্চর্য, শব্দটি মুছে যেতেই তার মাথাটা হালকা মনে হয়। ঝরঝরে মনে হয়। সারা গায়ে হেঁটে বেড়ানো পিঁপড়েটাও নেমে যায়। সময় দেখে নেলী। সাড়ে তিন। তার মানে তিরিশ মিনিট সময় সে বিপর্যস্ত ছিল। কিন্তু মনে হয়েছে সারা রাত কেটে গেল বুঝি।
আর দেরি করে না সে, খুব ধীরে ধীরে বিছানায় পা তোলে, টকটকে লাল নরম তুলতুলে কম্বলটার দিকে চেয়ে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে তার। দ্রুত ফোনের সুইচ অফ করে দিয়ে সুরুত্ করে কম্বলের ভেতর ঢুকে সোজা হয় নেলী। একেবারে মাথা মুড়ে নেয়। কোনোভাবেই আর এই কুিসত শব্দটাকে মাথার আশপাশে ঘেঁষতে দেওয়া যাবে না। ভীষণ ঘুম পায় তার।