“You are like nobody since I love you.”
Pablo Neruda
মৃত্যুর পূর্বেই নেরুদার জন্য তৈরি করা হয়েছিল একটি সাদা রংয়ের কফিন। কিন্তু সাদা রং তাঁর পছন্দ হয়নি। তাঁর মতে, সাদা শূন্যতার প্রতীক। তাঁর পছন্দ লাল রং। লাল রংয়ের কফিনে লাল কাপড়ের আচ্ছাদনে তাঁর শেষ বিদায় হবে। কারণ, লাল বিপ্লবের প্রতীক। আবার লাল ভালোবাসারও বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। লাল রংয়ের প্রতি নেরুদার এমন টান কিংবা ভালোবাসা আমাকে তাঁর প্রেমাকীর্ণ জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। পাঠক, এ লেখা একান্তই নেরুদার প্রেম ও তা থেকে উত্সারিত কবিতা নিয়ে। নেরুদার প্রেম আনন্দ-বেদনা-হিংসা-সন্দেহপ্রবণতায় পরিপূর্ণ। নেরুদার প্রেমের পর্যায় দুটো—প্রথমটি দেশের প্রতি, দ্বিতীয়টি নারীর প্রতি। এ লেখায় আমি চেষ্টা করেছি নেরুদার নারীপ্রেমের একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরতে। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, নারীর প্রতি নেরুদার অকৃত্রিম ভালোবাসা তাঁকে বিশ্বসাহিত্যে একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ‘প্রেমের কবি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। অক্তাভিও পাজ বলেছিলেন, ‘নেরুদা তাঁর যুগের শ্রেষ্ঠ কবি’।
নেরুদা গণমানুষের কবি—এ কথাটি যতটুকু সত্য ঠিক ততখানি সত্য নেরুদা প্রেমের কবি। শরীরী ও অশরীরী—দু-ধরনের প্রেমই নেরুদাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল জীবনভর। মাইকেল অ্যাঞ্জেলো একবার বলেছিলেন, শরীরী ও অশরীরী—এ দুই জাতীয় প্রেমের গুরুত্বই মানুষের জীবনে সমান। অ্যাঞ্জেলোর মতো নেরুদাও এ-গুরুত্ব অনুধাবন করেছিলেন। র্যাঁবো যদি হন কবিতার দেবতা, তবে নেরুদা প্রেমের কবিতার দেবতা। ব্যক্তিজীবনে নেরুদা যেমন রাষ্ট্রের দূত হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে কাজ করেছেন তেমনি তাঁর প্রেম নানা মহাদেশে পরিব্যাপ্ত। নেরুদার সাথে সাথে তাঁর প্রেমও বল্গা হরিণের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে।
নেরুদার প্রেমের শুরু দক্ষিণ এশিয়ার মায়ানমারে, যার পূর্বনাম বার্মা। তখন চিলির কনস্যুল হিসেবে বার্মায় তিনি দায়িত্বরত। উর্বশী নারী যোসি ব্লিসকে তাঁর মনে ধরেছিল। ব্লিসের প্রেমে মজে নেরুদা তার দাসে পরিণত হয়েছিলেন। এক কথায়, ব্লিসের প্রেম-শক্তির কাছে ধরাশায়ী হয়েছিলেন তিনি। তখন নেরুদার জীবনে একটাই সত্য—‘ব্লিস’। নেরুদাকে ঘিরে ব্লিসের একরোখামি, ঈর্ষা, সন্দেহপ্রবণতা, মাত্রাতিরিক্ত অধিকার প্রয়োগ ইত্যাদি সবকিছুই তখন তাঁর জীবনে নিত্যসত্য। ব্লিসের এই বাড়াবাড়ি রকমের প্রেমপূজা একপর্যায়ে নেরুদার মাঝে তীব্র মানসিক যন্ত্রণার জন্ম দেয়। নেরুদা যেন তাঁর দেহ-আত্মা-মন সবকিছু ব্লিসের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন—এমনই এক উন্মত্ত চিন্তায় মেতে উঠেছিল যোসি ব্লিস। অথচ তার এমন মনোবৃত্তি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না নেরুদা। আবার ব্লিসের প্রেমকে না করে দেওয়ার মতো স্পর্ধা, মানসিক অবস্থা কিংবা দৃঢ়তা কোনোটিই নেরুদার ছিল না। ব্লিস যত বাড়াবাড়িই করুক, নেরুদা ব্লিসের প্রেমে বন্দি। তার মতো উর্বশী, পৃথুলা নারীর ভালোবাসা নেরুদাকে আপাদমস্তক জয় করেছিল।
নেরুদা, ব্লিসকে তাঁর চোখের আড়াল করার উদ্দেশে বার্মা ছেড়ে সিংহলে চলে যান। কারণ, তাকে মনের আড়াল করা ছিল নেরুদার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। ব্লিসে আচ্ছন্ন নেরুদা ব্লিসকে নিয়ে লিখলেন ‘যোসি ব্লিস ১’ ও ‘যোসি ব্লিস ২’ শিরোনামে দুটি কবিতা। দীর্ঘ কবিতা দুটিতে ব্লিসকে ছেড়ে থাকার যন্ত্রণা, তার প্রেমের মহিমা, ব্লিসের মৃত্যুপরবর্তী নেরুদার আর্তনাদ চিত্রায়িত হয়েছে।
নেরুদা নির্বাসিত জীবনে রচনা করেন ‘Los Versos del caplain’ শিরোনামে ছোট্ট একটি প্রেমকাব্য। ইতালি থেকে প্রকাশিত এ গ্রন্থে নেরুদার ব্যক্তিজীবনের বহু গোপন বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী মাতিলদে-এর প্রতি প্রদর্শিত প্রেম নিয়ে এ কবিতাগুলো লেখা হয়েছে। বইটিতে প্রকাশ পেয়েছে নেরুদার প্রেম ও ক্রোধ। মাতিলদের প্রতি প্রেমের স্বরূপ ফুটে উঠেছে—এমন একটি কবিতার কয়েক পঙিক্ত উপস্থাপন করছি—
‘তুমি বেড়ে উঠেছ,
তোমার দু-কাঁধ জেগে ওঠে দুটি পাহাড়ের মতো
তোমার স্তনযুগল স্পর্শ করে যায় আমার সারা বুক,
আমার বাহু কোনোমতে ঘিরে ধরতে পারে
তোমার কটিদেশের নতুন চাঁদের রেখা’
তবে নেরুদার জীবনে যে ভালোবাসা ইতিহাস হয়ে আছে তা তাঁর স্ত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া নয়; সেই অমর প্রেম নেরুদাকে নিবেদন করেছিল বার্মিজ মহিলা যোসি ব্লিস। আগেই বলেছি, ব্লিসের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন নেরুদা। ব্লিসকে ছেড়ে নেরুদা বার্মা থেকে সিংহল চলে গেলেও পিছু ছাড়েনি ব্লিসের ভালোবাসার হিংস্রতা। মহাযুদ্ধের তাণ্ডবে ব্লিসের মৃত্যু হলে নেরুদার হূদয় দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ আঘাত থেকেই রচনা করেন ব্লিসকে নিয়ে মর্মস্পর্ষী কবিতাদ্বয়। প্রখ্যাত অনুবাদক সফিউদ্দিন আহমদের নান্দনিক অনুবাদে উপস্থাপন করছি ‘ভালোবাসা : যোসি ব্লিস ১’ কবিতার কয়েক পঙিক্ত—
‘ব্লিস তোমাকে খুব মনে পড়ছে, ভীষণ মনে পড়ছে তোমাকে।
ব্লিস আমার জানতে ইচ্ছে করছে, শেষতক তোমার কী হয়েছিল!
ব্লিস, কোথায় গেল তোমার ভালোবাসার ফোসফোসে উষ্ণ নিঃশ্বাস
তোমার ভালোবাসার পীড়নে প্রতিটি মুহূর্তে কেটেছে আমার অসহ্য যন্ত্রণায়
ব্লিস এখনও তোমাকে খুঁজছি আমি—
যেখানে যন্ত্রণায় হূদয়ের রক্তক্ষরণে
ক্ষতবিক্ষত করেছো আমাকে।”
যোসি ব্লিসকে ছেড়ে আসার পর কী ঘটেছিল তা আরো ভালোভাবে জানতে নেরুদার নিজের কথা বাংলা অনুবাদে উপস্থাপন করছি—
‘সিংহলে বদলি হবার খবরটা না পৌঁছালে ব্লিস বোধ হয় আমাকে মেরেই ফেলতো। একদিন চুপিচুপি জাহাজে উঠলাম। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমি ব্লিসকে ছেড়ে চলে এলাম। কিন্তু ব্লিস তো আমাকে ছেড়ে দেবার পাত্রী নয়। সে তো প্রেমের আগুনে পুড়ছিল। হঠাত্ একদিন দেখলাম, আমাকে কিছু না জানিয়েই সেই বার্মিজ প্রণয়ী সিংহলে আমার বাড়ির সামনে তাঁবু খাটালো। বাড়ির সামনে সবসময় দাঁড়িয়ে থাকতো। একদিন আমার বাসগৃহ পুড়িয়ে দিতে উদ্যত হলো। আমার মিষ্টি ইউরোপীয় বান্ধবীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। পুলিশ এসে সতর্ক করলো এ বলে যে আমি যদি যোসি ব্লিসকে বাড়িতে জায়গা দিই তবে তারা আমায় সিংহল ত্যাগে বাধ্য করবে। মাঝে মাঝে ব্লিসের জন্য আমার প্রাণ কেঁদে উঠতো। একবার ভেবেছিলাম, ব্লিসের কাছে আত্মসমর্পণ করবো। আবার পরক্ষণেই তার হিংস্রতা ও উদ্যত মনোভাবের কথা মনে পড়তেই পিছু হটলাম। কিছুদিন পর নিরুপায় হয়ে ব্লিস সিংহল দ্বীপ ছেড়ে দেয়ার উদ্দেশে জাহাজে উঠে বসলো। আমি প্রচণ্ড ভিড় ঠেলে তাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে গেলাম। দেখা মাত্রই আমাকে চুম্বনে সিক্ত করলো সে। আমি না পারছিলাম তাকে ধরে রাখতে, না পারছিলাম ছাড়তে। সেদিনের ব্যথাতুর স্মৃতি আজও আমার মন থেকে এতটুকুও বিস্মৃত হয়নি।’
ভারতবর্ষ নেরুদার কাছে নানাভাবে স্মরণীয়। আর এ কথাও সত্য, ভারতবর্ষে আসার দরুন নেরুদাকে আমরা অনেক বেশি ‘কাছের মানুষ’ হিসেবে ভাবতে শিখেছি। তিনি মোট তিনবার ভারতবর্ষে আসেন। প্রেমের এ কবি দেখা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাথে। এজন্য বোধ হয় রবীন্দ্র-নেরুদা-শক্তি—এ তিনে একটা মিল আমি খুঁজে পাই। এবং অবশ্যই তা প্রেমের ক্ষেত্রে। রবীন্দ্রনাথের ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা...’ গানটির অনুবাদ করেছিলেন নেরুদা। আবার উক্ত গানের সাথে নেরুদার একটি কবিতার ভাবার্থের মিল আছে। অন্যদিকে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের অনেক কবিতায় ‘প্রেমে শূন্যতা’ বিষয়টি উঠে এসেছে। নেরুদা ঠিক এমন এক শূন্যতা অনুভব করেছিলেন ব্লিসের মৃত্যুর পর।
মাত্র উনিশ বছর বয়সে লেখা পাবলো নেরুদার ‘বিশটি প্রেমের কবিতা’ কমপক্ষে পঞ্চাশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। সারা বিশ্বেই এ গ্রন্থের আবেদন গগনচুম্বী। বিশ্বের অগণিত প্রেমিক-প্রেমিকা জীবনের বিশেষ মুহূর্তে হাতে লিখে একে অপরকে উপহার দিয়েছেন এসব কবিতার অংশবিশেষ। সফিউদ্দিন আহমদের ভাষান্তরে ‘এ রাতে আমি রচনা করতে পারি’ কবিতাটির কয়েক লাইন এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করছি—
‘আমায় হূদয়-উত্সারিত বিষণ্ন পঙিক্তমালাগুলো
আজ রাতেই আমি কলাবন্ধনে নন্দিত করতে পারি।
এবং মনে করা যাক—এই নাক্ষত্রিক রূপালি রাত,
ভালোবাসার রাত,
তাই ছন্দিত হয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠে ওই দূর নীলাকাশ।’
বার্মা থেকে সিংহল গিয়েও নেরুদা প্রেম-বিচ্ছিন্ন থাকেননি। সেখানে তাঁকে আকৃষ্ট করে উর্বর দেহলি এক মেয়ে। মেয়েটির দৈহিক সৌন্দর্য নেরুদাকে পাগল করে তোলে; এই দৈহিক ভালোবাসা তাঁকে অসংযত করে তোলে। নেরুদা মেয়েটিকে হাজার বছরের প্রাচীন ভাস্কর্যের সাথে তুলনা করেন। তাঁর ভাষায়—
‘বুঝতে পরতাম না প্রতিদিন সকালে বালতিটা কে পরিষ্কার করে কিংবা কেন করে! একদিন প্রত্যুষে সে রহস্য উন্মোচিত হলো। দেখলাম, কালো পাথরে যেন খোদাই করা এক অপরূপা তামিল রমণী আমার সামনে দাঁড়িয়ে। লালচে রঙের শাড়ি পরে মেয়েটি নৃত্যের ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছে। পায়ে রূপোর পায়েল, নাকে নথ। আমি যে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছি এদিকে তার কোনো নজর নেই। সে এক মনে আবর্জনা পরিষ্কার করেই চলছে। তার দেবীতুল্য সৌন্দর্য আমাকে এমনভাবে আকৃষ্ট করলো যে আমি কোনোভাবেই তাকে ভুলতে পারছিলাম না। চোখের সামনে ভেসে উঠছিল কেবল তার দেহের সেই অপরূপ ছবি। যে কোনো মূল্যে তাকে আমার চাই। হঠাত্ মাথায় একটা বুদ্ধি এল। তার যাওয়া-অসার রাস্তায় কখনও একটা শাড়ি কিংবা কিছু টাকা রাখতে শুরু করলাম। কিন্তু সুঠাম কালো সুন্দরীকে কোনোভাবেই প্রলুব্ধ করতে পারলাম না।
অন্যদিকে নিজেকে সংযত করতেও ব্যর্থ হলাম। একদিন সকালে গায়ের জোড়ে ধরে ওকে বিছানায় এনে শুয়ালাম। সেই দিন তার মুখে কিংবা ঠোঁটের কোণে বিন্দুমাত্র হাসিও ছিল না। ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজেকে বিবস্ত্র করলো সে। তার সরু কোমর, ভরাট নিতম্ব আর সুউচ্চ বক্ষদেশ দেখে তাকে দক্ষিণ ভারতের কোনো মন্দিরের নিখুঁত ভাস্কর্য মনে হচ্ছিল আমার। মর্ত্যের এক মানব স্বর্গের এক দেবী মূর্তির সঙ্গে শয্যায়। তবে কোনোরকম উত্তেজনা মেয়েটির মধ্যে ছিল না। তার চোখমুখে ছিল একধরনের শূন্যতা। আমাকে ঘৃণা করার সবটুকু অধিকারই ও সেদিন অর্জন করেছিল। ঐদিনের পর আমি আমার এই অভিজ্ঞতাটুকুর পুনরাবৃত্তি দ্বিতীয়বারের মতো করিনি।’
কলম্বোর এ-দেহলি মেয়েটিকে নিয়ে নেরুদা একটি কবিতা লেখেন। আশা করি, আমার স্বীয় অনুবাদে কবিতাটির কয়েক পঙিক্ত উল্লেখ করলে পাঠক ওই মেয়ের প্রতি নেরুদার যৌনপ্রেম কতটুকু প্রবল ছিল তা অনুধাবন করতে পারবেন—
‘দুরন্ত দেহলি তুমি,
তোমায় ভালোবাসি
তোমার দেহ, অস্থি ও দুরন্তভাবে লাফিয়ে ওঠা
উর্বর ভঙ্গিমায় মাংসপিণ্ড, স্ফীত হয়ে ওঠা স্তনশীর্ষ
আর আকর্ষণে ভরা দু’টি চোখ।’
উক্ত বর্ণনা পড়ে পাঠকদের মনে হতে পারে নারী ছিল নেরুদার কাছে কেবল ভোগের সামগ্রী। কিন্তু নারী তাঁর কাছে ভোগের সামগ্রী ছিল না, বরং নারী তাঁর কবিতা সৃষ্টির তথা শিল্পসৃষ্টির উত্সারণ। নারীর জন্য তাঁর তীব্র অনুশোচনাও আমরা দেখতে পাই। বস্তুত নেরুদার সহজ, সরল স্বীকারোক্তি তাঁকে মহত্ কবিতে পরিণত করেছে। বিভিন্ন নারীর সাথে তাঁর অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলোকে তিনি লুকাতে চাননি। বরং যা সত্য তা কবিতায় হুবহু ধারণ করার চেষ্টা করেন। সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া একজন প্রকৃত কবির দায়িত্ব নয়। সত্যের ধারক ও বাহক হওয়া উচিত একজন কবিকে। নেরুদা সত্যানুসন্ধানী ছিলেন আমৃত্যু।
পাবলো নেরুদা মানবতার কবি, সাম্যের কবি, প্রেমের কবি। বস্তুত প্রেমই নেরুদাকে বিশ্বশান্তির কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। স্প্যানিশ ভাষায় কাব্য রচনা করে চিলির এই কালোত্তীর্ণ কবি ১৯৭১ সালে নোবেল পুরস্কার পান। আমার প্রিয় গবেষক অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, পিকাসোর ছবি আর নেরুদার কবিতা একই যোজনায় উদ্ভাসিত। একটি ছোট্ট ঘটনা বলে এ রচনার ইতি টানছি। আমি তখন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ওই বছর ১৬ই ডিসেম্বরের ছুটির দিন বাসায় অলস দিন কাটাচ্ছিলাম। হঠাত্ আমার পাশের রুমের বড় ভাইয়ের এক অত্মীয় আসলেন। ওই ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে তাঁর আত্মীয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। কুশলাদি বিনিময়ের পর এক পর্যায়ে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি পাবলো নেরুদা পড়েছ? আমি বললাম, না। আচ্ছা, তোমার প্রিয় প্রেমের কবি কারা? আমি জানালাম—জন ডান, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও শহীদ কাদরী। তারপর তিনি আমাকে বললেন, নেরুদা পড়ে দেখতে পারো যেহেতু তুমি সাহিত্যের ছাত্র। তারপর থেকে নেরুদাকে নিয়ে আমার নাড়াচাড়া শুরু। সেই থেকে নেরুদার প্রতি ভালোবাসা একটু একটু গাঢ় হতে থাকে। এখন আমার প্রিয় প্রেমের কবিদের তালিকায় পাবলো নেরুদা সর্বাগ্রে।
“I want To do with you what spring does with the cherry trees.’
Pablo Neruda