শাহীন আহমেদ, শীর্ষ নির্বাহী ও ডিজাইনার, অঞ্জন’স
ফ্যাশন পরিবর্তনশীল এবং একই সাথে বৃত্তবন্দি। তবে, বাংলাদেশের ফ্যাশন এখন আর একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর জন্য নয়। দেশীয় ফ্যাশন হাউস আর লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলোর কল্যাণে তা এখন ছড়িয়ে পড়ছে সবার মাঝে। মূলত এখানকার ফ্যাশন ডিজাইনাররা সহজ এবং মার্জিত পোশাকের ডিজাইন করে থাকে। পোশাকের নকশায় তাদের স্বাতন্ত্র্য প্রশংসা অর্জন করেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আর তাদের কাজে স্বদেশের ভাবনা অনুপ্রাণিত করছে দেশ এবং ভিন্ন দেশের মানুষকে। পাশাপাশি ডিজিটাল-নির্ভর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে সৌখিন মানুষজন। ফ্যাশন সচেতনতাকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলছে দৈনিক পত্রিকার ফ্যাশন প্রকাশনা বা ফ্যাশন ম্যাগাজিনগুলো। ফ্যাশন অনুষঙ্গগুলো স্টাইলকে করেছে আরো আধুনিক। ইন্টারনেট আর মোবাইল প্রযুক্তির সাথে অনলাইন শপিং মানুষকে করেছে আরো সচেতন। বলা যায় ট্র্যাডিশনাল গতানুগতিক পরিবর্তনের সাথে মিল রেখেই কিছুটা পরিবর্তন হবে এ বছরের ঈদের সাজসজ্জা ও পোশাকে। তাই এই নতুন বছরের প্রথম ঈদে কোন ফ্যাশন ট্রেন্ড একেবারেই আউট হয়ে গেল আবার কোন ফ্যাশন ট্রেন্ডই বা জাঁকিয়ে বসতে চলেছে সেটা নিয়ে ব্যস্ত ট্রেন্ড সেটাররা। বিশ্বের নামকরা ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো মূলত সারাবছরই ব্যস্ত থাকে ফোরকাস্টিং নিয়ে। পাশাপাশি কালার ট্রেন্ড সেটআপ করে থাকে ডিজাইনাররা। তবে আমাদের দেশে এখনো এই প্রথা তেমন ভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। এখনো আমাদের দেশীয় পোশাকে উত্সবের রঙ লাগে বৈশাখ বা ঈদকে ঘিরেই। ২০১৪ এর এখন পর্যন্ত ফ্যাশনে সাম্প্রতিক ট্রেন্ড বেশি চোখে পড়েছে। পোশাকের কাটিংয়ে পরিবর্তনের পাশাপাশি ভ্যালু এডিশনে ছিল পরিমিতবোধ। কখনও ছিল রঙ নিয়ে মাতামাতি, কখনও বা পোশাকের ম্যাটেরিয়ালসে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
লম্বা ইয়কের পাশাপাশি কামিজের ঝুল ঈদ ফ্যাশনে বেশ জনপ্রিয়তা পাবে। গ্লসি ফেব্রিকের ব্যবহার এসব পোশাককে আরও হাইলাইট করবে। এবারও ব্লক বা স্ক্রিন প্রিন্টের কাজ তুলনামুলক বেড়েছে। এছাড়া লং হাতাও ব্যবহার করা হয়েছে কামিজে। কাপ্তানেরও এ বছর বেশ চল । ঈদে লং-শর্ট দুটিই ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাশন ডিজাইনাররা তৈরি করেছেন। এসব পোশাকের সঙ্গে পশ্চিমা পোশাক লেগিংস আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। এ বছরে ফ্যাশনে বৈচিত্র্য আনতে লেগিংসের জুড়ি নেই। তবে প্রিন্টেট ক্যানভাসে রঙিন লেগিংস বিশেষ নজর কাড়ে আউটগোয়িং তরুণীদের। লং, থ্রি-কোয়ার্টার আর চুড়িদারসহ বিভিন্ন ঢঙের লেগিংস বাজারজুড়ে ছিল। চুড়িদার ও লেগিংসের সঙ্গে পাঞ্জাবিও মেয়েরা ট্রেন্ডি পোশাক হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ বছরের সাদামাটা এবং সিম্পল প্যাটার্নেও শর্ট বা লং লেন্থ উভয় পাঞ্জাবিই তরুণদের ফ্যাশনের তালিকায় ছিল যা ঈদের পরবে কেউ কেউ। কন্ট্রাস্ট অ্যাপ্লিক বা স্ক্রিন প্রিন্টের ব্যবহার এবার পাঞ্জাবিতে ছিলো বেশি। পাঞ্জাবি মেয়েদের ক্যাজুয়াল এবং অনেকটা ফরমাল লুকেও বেশ মানানসই ছিল এবছর। তবে ঈদে সালোয়ার-কামিজের বিশাল কালেকশনে রঙ, ডিজাইন, কাটিং প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিল কিছুটা ভিন্নতা ও আধুনিকতার ছোঁয়া। খানিকটা লং ধাঁচের কামিজে কলিকাট, ফ্লোয়ার কাট বা প্লেটস এর ব্যবহার ছিল। লিলেন কটনের পাশাপাশি সিল্ক, সিনথেটিক কাপড়গুলো ভালোই প্রাধান্য পেয়েছে জমকালো পোশাকে। ছেলেদের ধুতি-পাঞ্জাবির রঙে ছিল ব্যাপক পরিবর্তন। সাদার পাশাপাশি মেরুন, ঘিয়া, সোনালি, সবুজ কিংবা লাল রঙের ধুতিও এসেছে এবার। দেশীয় কাপড়ে রঙ, কাটিং, ডিজাইনের মোটিভ ও থিমে বৈচিত্র্য দেখা গেছে এবার। পোশাকে শিল্পীর রঙ-তুলির নান্দনিক আঁচড় আর নকশার ছড়াছড়ি ছিল অনেক পোশাকে। বিজয় দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে লাল-সবুজের ক্যানভাসে এ বছর পোশাকের ডিজাইনের মোটিফে ছিল ভিন্নতা। শাড়িতে ভারি নকশার কাজ এবার বেশ কমে এসেছে। সুতি শাড়িতে চওরা পাড় বেশ চোখে পড়েছে এবার। তবে উন্নতমানের কাপড়ে ডিজাইনারদের নান্দনিক অর্নামেন্টশন এবারো দেশীয় শাড়িকে তরুণীদের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকেই রেখেছে। তবে এবার ব্লাউজের ডিজাইনে বেশি নিরীক্ষা ছিল যা দিয়েছে বৈচিত্র্যময়তা। ঈদের সময়ে পরিবার বা প্রিয়জনের সাথে পোশাকের ডিজাইনে মিল রেখে তৈরি পোশাকের ট্রেন্ড নজর কাড়ছে সববয়সীদেরই। অনেকেই শাড়ির রঙ বা পাঞ্জাবির রঙ বা নকশার সাথে মিল রেখে অন্যান্য পোশাক বা অনুষঙ্গ তৈরি করে নিয়েছেন। তাঁতের পোশাকের চাহিদা বরাবরই রয়েছে। এ বছরও ট্রেন্ডি লুকে দেশীয় তাঁত তার জায়গা ধরে রেখেছে। আভিজাত্যের প্রতীক ও শৈল্পিক ডিজাইনের কারণেই তাঁতের এসব পোশাক তরুণীরা বেছে নিয়েছে। আর আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে তাঁতের পোশাক ব্যবহারে বেশ আরামদায়ক। তাঁতে বোনা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ আর ফতুয়ার কদর বরাবরের মতো এবারও চোখে পড়ে। রেডিমেড পোশাকের পাশাপাশি আনস্টিচ থ্রিপিসের কদর ছিল অনেক। মনমতো ডিজাইন আর ফিটিংয়ের কথা মাথায় রেখে তরুণীদের পছন্দে ছিল সেলাইবিহীন কাপড়।