আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় আমার কথা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রেফতারকৃতরাও আদালতে ঘটনার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন কোনো না কোনোভাবে জড়িত রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া দুইটা পর্যন্ত কমিটি শামীম ওসমানের বক্তব্য নেয়। এরপর শামীম ওসমান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়ার সময় শামীম ওসমান সাত খুনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াত্ আইভী কথিত 'গডফাদারদের' ওপর দোষ চাপিয়ে কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন।
নূর হোসেনকে দেশে আনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নূর হোসেন কোনো না কোনোভাবে জড়িত বলে তিনি বিশ্বাস করেন। বিষয়টি হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমার হাতে ক্ষমতা থাকলে কালই আমি তাকে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতাম। আমি মনে করি নূর হোসেনকে যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে আনা উচিত।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নূর হোসেন আমার ঘনিষ্ঠ লোক নয়। শুধু দলীয় লোক হিসাবে তার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। তাকে ব্যবসায়িক সুবিধা থেকে শুরু করে দলীয় পদে বসিয়েছেন মেয়র আইভী।
তিনি বলেন, আমি মনে করি রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করতেই পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এক এগারোর কুশীলবরাই এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। ঘটনার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দু'একজন কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন। ইতিমধ্যে আটক ব্যক্তিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন। ফলে আমার কথাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
শামীম ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির আহবায়ক শাজাহান মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য ও একজন সাক্ষী হিসাবে তারা শামীম ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে শামীম ওসমান সহযোগিতা করেছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর গত ৮ মে থেকে আমরা তদন্ত কাজ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত অনেকের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। প্রতিটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আর সঠিক ঘটনা বের করার জন্যই এটি করা হচ্ছে। এই তদন্ত কমিটি এ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় সাড়ে তিনশ' জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহূত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজন। ৩০ এপ্রিল ৬ জনের এবং ১ মে আরেকজনের লাশ ভেসে ওঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে। এ ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে ৭ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাজাহান আলী মোল্লাকে প্রধান করে গঠন করা হয় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি।