গ্যারেথ বেল, টনি ক্রুস, হামেস রড্রিগেজরা ছিলেন। কিন্তু কার্ডিফের রাতের সবটুকু আলো কেড়ে নিলেন তাদের চেয়েও বড় এক তারকা। তিনি হলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তার জোড়া গোলেই সেভিয়াকে হারিয়ে উয়েফা সুপার কাপের শিরোপা ঘরে তুললো রিয়াল মাদ্রিদ।
নিরপেক্ষ ভেন্যু কার্ডিফে গত মঙ্গলবার রাতে ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেভিয়ার ওপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলে রিয়াল মাদ্রিদ। দলের খেলার এই ধরনে বেশ খুশি আনচেলত্তি। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, 'প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমরা খুব একটা সময় পাইনি; এটা মাথায় রাখলে দল খুব ভালো খেলেছে। তাদের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট।'
ক মৌসুমে ছয়টি শিরোপা জয়ের স্বপ্নের পথে শুরুটা যতটা আক্রমণাত্মক করা যায়, তার সবটুকুই করলেন রিয়ালের কোচ কার্লো আনচেলত্তি। রোনালদো, বেল ও করিম বেনজেমার পেছনে রদ্রিগেসের পাশে মাঠ মাতাতে নামিয়ে দিলেন বিশ্বকাপে দারুণ খেলা জার্মানির টনি ক্রসকেও। রিয়ালের জার্সিতে নিজেদের অভিষেক ম্যাচে ক্রস ও রদ্রিগেজ তেমন একটা সাড়া ফেলতে না পারলেও হাসি মুখেই মাঠ ছাড়ে তারা।
প্রতিপক্ষে এতসব তারকার দাপটে প্রথম ২৫ মিনিটে বল দখলের লড়াইয়ে সেভিয়াকে বেশ ভুগতে হয়। ওই সময়ে মাঠের দখল রিয়ালের থাকলেও গোলের নিশ্চিত সুযোগ কিন্তু তারাও পাইনি। পরের মিনিটেই অবশ্য দারুণ একটা সুযোগ পেয়ে যান গতবারের ফিফা ব্যালন ডি'অর জয়ী রোনালদো। ডান দিক থেকে বেনজেমার বাড়ানো বল ডি বক্সের মধ্যে পেয়ে ঠিক পেছনেই থাকা এক ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে আরো ভেতরে ঢুকে পড়েন রোনালদো। তবে সামনের একমাত্র বাধা গোলরক্ষককে এড়াতে পারেননি তিনি।
তার চার মিনিট বাদে অবশ্য রোনালদোকে আর রুখতে পারেনি সেভিয়ার গোলরক্ষক বেতো। তবে এই গোলটিতে যতটা কৃতিত্ব রোনালদোর ঠিক ততটাই বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় বেলের। ৪৫ গজ দূর থেকে ওয়েলসের এই ফরোয়ার্ডের অসাধারণ ক্রসটাকে গোলে পরিণত করতে শুধুমাত্র আলতো একটা টোকার দরকার ছিল, গোল লাইনের সামান্য দূর থেকে পা বাড়িয়ে সে কাজটা সারতে কোন ভুল করেননি রোনালদো।
ওই একমাত্র গোলে এগিয়ে থেকেই দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নামে রিয়াল। বিরতির পর গোলের দেখা পেতে অবশ্য ইউরোপ সেরাদের খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ৪৯তম মিনিটে রোনালদোর দারুণ জোরালো এক শটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে তারা।
বেনজেমার পাস পেয়ে ১৫ গজ দূর থেকে নেয়া রোনালদোর দুর্দান্ত শট ঠেকাতে হাত বাড়িয়েছিলেন বেলো, বলে আঙুলও ছুঁইয়েছিলেন কিন্তু রুখতে পারেননি।
নতুন দলের হয়ে অভিষেকটা উজ্জ্বল হতে পারতো কলম্বিয়ার তারকা রদ্রিগেজের; কিন্তু ৬৭ তম মিনিটে নেয়া তার জোরালো শটটা ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন বেতো।
নির্ধারিত সময় শেষের দুই মিনিট আগে ব্যবধান কমানোর ভালো একটা সুযোগ পেয়েছিল সেভিয়া কিন্তু তাদের সে প্রচেষ্টা রুখে দেন ইকার ক্যাসিয়াস। ফলে সহজ জয়েই শিরোপা উদযাপনে মেতে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে সফল ফুটবল ক্লাবটি।
এই ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ মাঠে নামায় বিশ্বের সবচেয়ে দামি আক্রমণভাগ। গ্যারেথ বেল, রোনালদো আর হামেস রদ্রিগেজ। রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণের এই ত্রয়ীর মিলিত মূল্য ২২ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড। তিনজনই সেভিয়ার বিপক্ষে শুরুর একাদশে খেলেন।
এই ত্রয়ীর আক্রমণে ত্রস্ত হয়ে পড়ে সেভিয়ার রক্ষণভাগ। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলে জয়টি ২-০ গোলের নয়, হতে পারত আরো অনেক বড়। এমন একটি দলের কোচ হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন আনচেলত্তি, 'অসাধারণ মানের একটি দল আছে আমাদের-দুর্দান্ত এক দল খেলোয়াড়ের কোচ হতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।'
ম্যাচটি বেলের জন্য ছিল আরও স্মরণীয়। কারণ, এই শহরটিতেই জন্ম হয়েছিল তার। ম্যাচের পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, 'এটা আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় এক রাত। নিজের শহরে সুপার কাপ জয়ের অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ।'