ইংরেজিতে একটা কথা আছে—সাইজ ডাজ নট ম্যাটার; আকারে কী বা আসে যায়!
কথাটা অন্য কেউ বিশ্বাস না করলেও ফুটবলার ও ক্রিকেটাররা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন। এই খেলা দুটির অধিকাংশ কিংবদন্তির আকার এতোটাই 'খাটো' যে তারা সাধারণ কেউ হলে হয়তো বন্ধুরা টিটকারি দিয়ে জীবনটা দুর্বিষহ করে ফেলতো। ডিয়েগো ম্যারাডোনা বা স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের মতো দুই খেলার সর্বকালের দুই সেরার কথা ছেড়ে দিন। হানিফ মোহাম্মদ, সুনীল গাভাস্কার থেকে শুরু করে শচীন টেন্ডুলকার; ক্রিকেট জুড়েই তো 'লিটল মাস্টার'দের ছড়াছড়ি।
আর কিছু না হোক, এদের কথা মাথায় রেখেও বিশ্বজয়ের কথা চিন্তা করতে পারেন বাংলাদেশের 'লিটল মাস্টার' মুমিনুল হক। অন্তত দেশের এই খেতাব পাওয়ার মতো করেই টেস্টে শুরুটা হয়েছে তার। কিন্তু এসব ইতিহাসে মুমিনুলকে খুব একটা সান্ত্বনা দেয়া যাবে না। কারণ, তিনি এই নিজের দৈর্ঘ্যের বিপদটা সম্পর্কেও খুব ভালো করে জানেন।
অন্তত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে বিশেষ করে তিনি বুঝতে পারছেন, তার এই আকারকেই লক্ষ্যে পরিণত করবে ক্যারিবিয় ফাস্ট বোলাররা। ক্যারিবিয় সফরে রওনা দেয়ার আগের দিন ক্রিকইনফোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মুমিনুল বললেন, তার বুক লক্ষ্য করে ফাস্ট বোলাররা বেশি বল করবে বলে তিনি অনুমান করছেন।
মূল আলোচনাটা ছিল, মুমিনুল তার শুরুর ধারাটা ধরে রাখতে পারবেন কি না, সেটা নিয়ে। ছোট্ট এই ক্যারিয়ারে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৭টি টেস্ট খেলেছেন, তার মধ্যে ৩টি সেঞ্চুরি, ৩টি ফিফটি!
বলা হচ্ছে, এতোদিন নবাগত হিসেবে মুমিনুলের শক্তি-দুর্বলতা কেউ জানতো না বলে তিনি সুবিধা পেয়েছেন। এখন সেটা হয়তো পাবেন না। এ কথার সঙ্গে খানিকটা একমতই হলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই তিনি টের পেয়েছেন, প্রতিপক্ষ জেনে ফেললে পছন্দের জায়গায় আর বল দেয় না, 'আমি খুব বেশি টেস্ট এখনও খেলিনি। ফলে এতোদিন প্রতিপক্ষ আমার পছন্দের জোনে বল করতো। আমার সম্পর্কে জানতো না। ফলে প্রচুর কাট করতাম। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওরা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে কাট করার মতো বলই দেয়নি। ফলে আমাকে নিজের পছন্দের শটের বাইরে কিছু করতে হয়েছে।'
তাতে মুমিনুল ব্যর্থ তো হনইনি; বরং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই সেঞ্চুরি ও ফিফটি করে জাত চিনিয়েছেন। এবার মুমিনুলের মতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলের পেছনে গিয়ে ব্যাকফুটে খেলা। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে 'এ' দলের সঙ্গে ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা থেকেই বললেন, 'আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফেরার পরই ব্যাক ফুটে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করছি। আসলে যেটা হয়, একবার রান পেলে প্রতিপক্ষ শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে অনেক কাজ করে। ওখানে আমাকে রান পেতে হলে ব্যাকফুটে ভালো খেলতে হবে।'
তবে সবচেয়ে উন্নতিটা যে শর্ট বলে করতে হবে, সে সম্পর্কে এই কক্সবাজারের ছেলেটির কোনো সন্দেহই নেই। উচ্চতার কারণেই তাকে সাধারণ বাউন্সেই শট বলে ঘায়েল করা সম্ভব। শ্রীলঙ্কার বোলাররা এই চেষ্টা করেছেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সেটাই সবচেয়ে বেশি হবে বলে মনে করছেন মুমিনুল, 'আমার মনে হয় না, আমাকে চেনা বা না চেনার এই ব্যাপারটা মূল চ্যালেঞ্জ হবে। মূল চ্যালেঞ্জ হবে, আমার উচ্চতার কারণেই ওরা সহজে আমার বুকে বল করতে চাইবে। বিশেষ করে উপমহাদেশের বাইরে এটা খুব চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। আমাকে এই লেন্থের বলে রান করতে পারতে হবে।'
কী কী করতে হবে, এটা জেনে গেলে করাটা অন্তত প্রতিভাধরদের জন্য খুব কঠিন নয়। এখন আমরা শুধু অপেক্ষা করতে পারি যে, মুমিনুল করণীয়টা খুব ভালোভাবে করে আসবেন।