এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিক থেকে সারাদেশে এবারও রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এ নিয়ে পর পর চারবার প্রথম হলো কলেজটি। প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ২৬১ জন পরীক্ষার্থী মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ২০১ জন। পাসের হার শতভাগ।
পরীক্ষার ফলাফল জানতে সকাল থেকেই কলেজ প্রাঙ্গণে ফল প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের পদচারণা লক্ষ্য করা যায়। সকালে এক পশলা বৃষ্টি শেষে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। এ বৃষ্টি উপেক্ষা করে কলেজের একাডেমিক ভবনের মূল ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। কারো কারো চেহারায় দেখা গেছে উদ্বিগ্নতার ছাপ। দুপুর ১টায় কলেজ অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: ইমামুল হুদা সারাদেশে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রথম স্থান অধিকার করার ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দ করতে থাকেন। মুখে 'রাজউক' 'রাজউক' বলে চিত্কার করে, বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ আবার মুঠোফোনে সেলফি উঠিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।
নাহিদ, প্লাটো, ফাহিম, সাবিত ও ইফতি ওরা সবাই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে মুঠোফোনে সেলফি উঠিয়ে আনন্দ করছিলেন। তারা বলেন, সারাদেশে আমাদের কলেজ প্রথম হওয়াতে খুবই ভাল লাগছে। হাবিবুর রহমান ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। জিপিএ-৫ পাওয়ার পেছনের কারণ জানতে চাইলে হাবিব বলেন, সারাবছর নিয়মিত পড়াশোনা করেছি। শিক্ষকরাও আমাদের খুব কেয়ার করেছেন।
কলেজের গণিতের শিক্ষক এবিএম মইনুল ইসলাম জানান, পাঁচটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে সেরা কলেজ নির্বাচন করা হয়। এগুলো হলো নিবন্ধিত প্রার্থীদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর শতকরা হার, শতকরা পাসের হার, মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও প্রতিষ্ঠানের গড় জিপিএ। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রতি আন্তরিক। শিক্ষকদের সহযোগিতা ও শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টা ভাল ফলাফলের কারণ বলে তিনি জানান।
নাফিস ফুয়াদ ইসলাম বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। কলেজ প্রাঙ্গণে মা সাহিদা ইউসুফের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন। অভিভাবক হিসেবে সন্তানের ভাল ফলাফল অর্জনে মায়ের ভূমিকা জানতে চাইলে সাহিদা ইউসুফ বলেন, আমি ছেলের পড়াশোনার প্রশংসা করতাম সবসময়। ওর কাজের মূল্যায়ন করা হতো। দুর্বল দিকগুলো কাটিয়ে ওঠতে ওকে সহযোগিতা করতাম। আসলে ওর প্রচেষ্টা ও কলেজের স্যারদের সম্মিলিত চেষ্টা ভাল ফলাফলের কারণ।
কলেজ সূত্র জানায়, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৬৪৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৩৫ জন্য। ব্যবসায় শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ৩৩৮ জনের মধ্যে ৩৩০, মানবিক বিভাগে মোট শিক্ষার্থী ১১৭ জনের ৭৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমে বিজ্ঞান বিভাগে মোট শিক্ষার্থী ১২৪ জনের মধ্যে ১২৩ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ৩৭ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬ জন।
কলেজ অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: ইমামুল হুদার কাছে সারাদেশে টানা চতুর্থবারের মত রাজউক কলেজ প্রথম স্থান অধিকার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা মেধাবী। এছাড়া অভিভাবকদের সচেতনতা, শিক্ষকদের প্রচেষ্টা ও পরিচালনা পর্ষদের সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনার কারণে ভাল ফলাফল হয়েছে। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আরো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।