সভাপতি
বৃত্তান্ত '৭১ ফাউন্ডেশন
প্রিয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,
তোমাকে নিয়ে কিছু লিখতে বা বলতে গেলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই, অসহায় বোধ করি। সমুদ্রের চেয়ে বিশাল যার হূদয়, হিমালয়ের চেয়েও উঁচুতে যার ব্যক্তিত্ব তাঁকে নিয়ে লেখা কি আমার মতো নগণ্য লোকের কর্ম! তবুও হূদয়ের গভীরে সঞ্চিত সমস্ত সাহস আর ভালোবাসা একত্রিত করে তোমায় লিখছি।
আজ তোমাকে তোমার বর্তমান বাংলাদেশের গল্প শোনাব। তোমার দুঃখিনী বাংলা, যে দুঃখিনী মাকে তুমি হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুুক্ত করেছিলে। উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও কায়েমি স্বার্থের শৃঙ্খল ছিন্ন করে মুক্তিকামী জনতাকে দিয়েছিলে একটি স্বাধীন মানচিত্র।
পিতা,
দুর্বৃত্তরা তোমাকে হত্যার পর তোমার প্রিয় বাংলাকে আবারও পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫, তারপরে ২০০১ থেকে ২০০৬ এই দীর্ঘ ২৫টি বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশবিরোধী রাজাকারদের পুনর্বাসন ও প্রজনন করা হয়েছে। তোমার উদ্যোগে তৈরি ১৯৭৩ সালের দালাল আইনে বিচারাধীন সকল যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দিয়ে জঙ্গিবাদের বিষবৃক্ষ বপণ করা হয় এদেশের মাটিতে। শাহ্ আজিজের মতো কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীকে বসানো হয় প্রধানমন্ত্রীর পদে। তোমার সোনার বাংলায় সেই ৭১-এর পরাজিত শক্তি তাদের গাড়িতে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে বাংলা মাকে করেছে উপহাস। অপমান অপদস্থ করেছে তোমার আদর্শের সৈনিকদের। নিগৃহীত করা হয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। দীর্ঘদিন এই ষড়যন্ত্রকারীরা দেশ চালিয়েছে পাকিস্তানি ভাবধারায়। নির্বিচারে অত্যাচারিত হয়েছে দেশের খেঁটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। অনেক দুঃখ-কষ্ট, মৃত্যু, আশাভঙ্গ আর স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাদের একটি সুপ্রভাতের জন্য।
অবশেষে ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে মুক্তির বার্তা নিয়ে যে মহিয়সী নারী আমাদের পথ দেখালেন, তিনি তোমারই উত্তরাধিকারী বাঙালির শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার দক্ষ নেতৃত্বে আমরা একটি শোষণমুক্ত আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। পৃথিবীর অনেক উন্নত রাষ্ট্রের মতো ধীরে ধীরে আমাদের অর্থনীতির ভিত তৈরি হচ্ছে। খাদ্যে আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত্, তথ্যপ্রযুক্তি, বৈদেশিক আয় থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে চোখে পড়ার মতো। নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের, বেড়েছে মাথাপিছু আয়। মাত্র অল্প কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের মানচিত্রে একটি অগ্রগামী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রিয় পিতা,
যে দুটো কাজ আমাদের তীব্র লজ্জা ও হতাশা থেকে মুক্তি দিয়েছে তার একটি হলো আমরা আমাদের জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে সমর্থ হয়েছি। অন্যটি তোমার অসমাপ্ত কাজ ৭১-এর খুনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য শুরু করেছি। এ সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
গণতন্ত্র চর্চায় পৃথিবীর যেকোনো উন্নত দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে চলেছি আমরা। গণমাধ্যমের পর্যাপ্ত স্বাধীনতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বর্তমান সরকার। ভারত ও মায়ানমারের সাথে জলসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করে পেয়েছি আরও একটি বাংলাদেশের সমান সমুদ্রসীমা। আমাদের এই এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ও এদেশীয় চক্রান্তকারীদের প্রধান ভয় ছিলে তুমি, আজ সময়ের বিবর্তনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকেই তাদের একমাত্র ভয়। এই জনপদের মুক্তিকামী মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল তিনি। তাই ঘাতকেরা মনে করে তাকে নিশ্চিহ্ন করতে পারলেই তারা এদেশে আবারও পাকিস্তানি সংস্কৃতির বিস্তার ঘটাতে পারবে। সে চেষ্টাও তাদের অব্যাহত রয়েছে কিন্তু এদেশের কোটি কোটি জনতা শেখ হাসিনার মধ্যেই ফিরে পেয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। আমাদের শেষ রক্তবিন্দুু দিয়ে হলেও আমরা তাঁকে রক্ষা করব।
পিতা,
এবার কিছু নিঃশব্দ বেদনার কথা বলি। তোমায় কথাগুলো না বললে যে বুকের মধ্যে চেপে থাকা পাথরটি সরবে না। সব সময়ই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আশপাশে কিছু ছদ্মবেশি কুচক্রী থাকে। তারা এখনো বিদ্যমান। তাদের সুচতুর চক্রান্তে বারবার ব্যাহত হচ্ছে আমাদের এগিয়ে যাওয়া, প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ড। এখনও তোমার আদর্শের মেধাবী সৈনিকদের সরকারি চাকরি হয় না, চাকরি পায় দেশবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের উত্তরসূরিরা। অর্থের কাছে বারবার পরাজিত হতে হয় তোমার আদর্শের সৈনিকদের। তোমার আদর্শের সৈনিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মাসুদের হাত-পা কেটে পঙ্গু করেছে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা। মাত্র কয়েক লক্ষ টাকার অভাবে পিতৃহীন এ ছেলেটির ভালো চিকিত্সা হচ্ছে না। জানি, আমাদের মমতাময়ী নেত্রীর কাছে এ খবর পৌঁছালে মাসুদের সুচিকিত্সা পেতে এক মহূর্ত সময় লাগত না। কিন্তু খবরটি পৌঁছানোর মতো মানুষের যে বড় অভাব। আবার সেই একই পুরোনো খেলায় মেতেছে সুবিধাভোগীরা। তোমার কাছে যেমন দেশের প্রকৃত অবস্থা গোপন করার চেষ্টা করা হতো তেমনি এখনো সেই চক্র তত্পর। গণমানুষের নেত্রীর কাছে এই সুবিধাভোগীরা জনগণের প্রকৃত অবস্থা গোপন করার চেষ্টা করে চলেছে প্রতিনিয়ত।
প্রিয় জনক,
যে অপশক্তিরা তোমার নাম নিশানা বাংলার মাটি থেকে চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল তারা আজও তত্পর। তোমার শাহাদাত্ বার্ষিকীতে তারাই মিথ্যা জন্মদিন পালন করার মতো ঘৃণ্য কাজ করে। দেখো পিতা, কি হাস্যকর কথা! বাংলার গ্রাম-গঞ্জ, আকাশ-বাতাস, নদী, সমুদ্র, পাহাড়, ঝরনা, ফুল, পাখি সমস্ত কিছুর অস্তিত্বেই যখন তুমি মিশে আছো, তোমার গান গেয়েই যে দেশে পাখি সূর্যোদয় দেখে সেখানে তাদের এই নগ্ন দুষ্কর্ম কোনো কাজে আসবে কি! এই জনপদের শিশু থেকে শুরু করে পড়ন্ত বেলার বৃদ্ধটির হূদয়েও তুমি স্থান করে নিয়েছে পরম মমতায়।
পিতা,
নিজের অস্তিত্বের চেয়েও বেশি ভালোবাসি তোমাকে। কারণ বাঙালি নামে যে সত্তা আমরা লালন করি তাতো তোমারই দান। বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ও বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তোমার আদর্শকে হূদয়ে ধারণ করে কর্মের মাধ্যমে তার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। এটাই আমাদের মুক্তির একমাত্র পথ। আর সে আলোর পথযাত্রায় আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অভিযাত্রী হয়ে বিশ্বের বুকে একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবোই।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের পক্ষে