হাজার বছরের শাশ্বত বাঙালি চরিত্রের যে দোষগুণ সেইসব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর মিষ্টি মধুর চরিত্র। একেবারে গ্রামে থেকে উঠে এসেছিলেন। সাধারণ একটি পরিবারের মাটির মানুষ তিনি। ভালোবাসতেন বাংলা ও বাঙালিকে। মাটির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
তাই তাঁর স্বভাবে নম্রতা, মধুরতা ও ভালোবাসার তীব্রতা দেখা যায়। মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ, দয়ার্দ্র হূদয়, দুখীর দুঃখে সমব্যথী, শোষিতের বন্ধু, নির্যাতিতের সহমর্মী, নিপীড়িতের সখা এক আশ্চর্য সুন্দর মানুষ তিনি।
সত্ সাহস ও আত্মপ্রত্যয় তাঁকে বলিষ্ঠ নেতায় পরিণত করেছে। তাঁর দেশপ্রেমের তুলনা হয় না। দেশ ও জাতিকে তিনি ভালোবাসতেন নিজের জীবনের চেয়েও বেশি। একবার এক বিদেশি সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিল :What is your qualification?
উত্তরে তিনি বলেছিলেন :I love my people and country.
সাংবাদিক পরের প্রশ্ন করেন :What is your disqualification?
উত্তরে তিনি বলেছিলেন :
I love my people and country.
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে, এই দেশের সমাজের উত্থান-পতন, নব জাগরণ ও স্বাধীনতা ইত্যাদির ইতিবৃত্ত লিখতে হলে, শেখ মুজিবকে সর্বাগ্রে ও সর্বত্র স্মরণ করতে হয়। আবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলে কিংবা তাঁর জীবনের ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে তাঁর জননী, জন্মভূমি, বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, সমাজ, ঐতিহ্য সবই ব্যাখ্যা করতে হয়।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন আসলে বাংলার মুকুটহীন সম্রাট।
বাংলাদেশের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু একটি ব্যক্তি নন, একটি নাম নন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের সমষ্টি। তিনি এদেশের মুক্তির উজ্জ্বল প্রতীক।
একটি জীবন্ত-আদর্শ
বঙ্গবন্ধু অমর একটি নাম।
তার মৃত্যু নেই। তিনি আমাদের আজও বিপদে-আপদে, সংগ্রাম-আন্দোলনে সাহস জোগান, শক্তি যোগান। মানুষকে তিনি বিশ্বাস করতেন।
ষড়যন্ত্র ও কুটিলতাকে ঘৃণা করতেন বলেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন না। মৃত্যুকে ভয় করেননি কোনোদিন। বাংলাদেশের কারণ জীবনদান করা তাঁর কাছে একটি তুচ্ছ ব্যাপার ছিল। এ কথা তিনি বহু ভাষণে বহুবার উল্লেখ করেছেন।
তার রক্তে যদি বাংলার ভূমি উর্বরতা পায় তাতেও তাঁর আপত্তি ছিল না।
তাঁকে হত্যা করার জন্য যে বুলেট কেনা হয়েছে বাংলার টাকায়, তা জানতে পারলে তিনি দুঃখ পেতেন।
লেখক :প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক